ফরিদীর ভালোবাসায় কোনো ঘাটতি ছিল না: আফজাল হোসেন

২ বন্ধু। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের অভিনয় জগতের ২ নক্ষত্র হুমায়ুন ফরীদি ও আফজাল হোসেনের গভীর বন্ধুত্বের কথা অনেকের  জানা। তারা ২ জন একসঙ্গে অনেকটা পথ হেঁটেছেন। অজস্র স্মৃতি রয়েছে তাদের। আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি হুমায়ুন ফরিদীর মৃত্যুবার্ষিকীতে তাদের বন্ধুত্ব নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন আফজাল হোসেন।

আফজাল হোসেন বলেন, হুমায়ুন ফরীদি আমার কতটা ভালো বন্ধু ছিলেন, কতটা প্রিয় বন্ধু ছিলেন তা অল্প কথায় বলে শেষ করতে পারব না। এটুকু বলতে পারি যে, আমার অসম্ভব ভালো বন্ধু ছিলেন তিনি। ভীষণ প্রিয় বন্ধু ছিলেন। এমন বন্ধুর অভাব কোনোদিনও পূরণ হবে না।

সেজন্য তাকে নিয়ে বলতে গেলে অল্প কথায় ফুরোবে না। কত দিন, কত রাত, কত বছর আমরা নাটক করে কাটিয়েছি। কত স্মৃতি আমাদের! কত গল্প! আর কিছু না করে শুধুই অভিনয়কে ভালোবেসে সময় কাটিয়েছি আমরা।

সদ্য ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা শেয়ার করছি। একুশে পদকের তালিকায় আমার নামটি জানার পর চারদিক থেকে ফোন পাচ্ছিলাম। প্রথমেই বাবা–মার কথা মনে পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়েছে ফরীদির কথা। আমার এই প্রিয় বন্ধু বেঁচে থাকলে এই খবরে কী রকম আনন্দ করতেন, কী কী করতেন- সেসব কথা মনে হয়েছে।

ফরীদি ছিলেন এমনই একজন বন্ধু যাকে মনে না করে থাকা যায় না। যেকোনো অকেশনে ফরীদিকে মনে পড়ে। যে কোনো অকেশন এলেই তাকে মিস করি। ভালো কোনো চরিত্র পেলে তার কথা প্রথম স্মরণ করি। এই হচ্ছেন ফরীদি।

ঢাকা থিয়েটার করতে গিয়ে আমাদের পরিচয়। সেই থেকে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত গভীর সম্পর্ক অটুট ছিল। ঢাকা থিয়েটার করার সময় কত দিন আমরা একসঙ্গে আড্ডা দিয়েছি বেইলি রোডের নাটকপাড়ায়। সত্যি কথা বলতে ওর সঙ্গ ছিল দারুণ আনন্দের। ওর কথা শুনলে কেউ মন খারাপ করে থাকতে পারতেন না। পরিবেশটাই সুন্দর হয়ে উঠত। কী একটা ম্যাজিক জানতেন ফরীদি!

ফরীদি পড়ালেখা করতেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে, আমি চারুকলায়। ঘনিষ্ঠতা বাড়ার পর ওর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক গিয়েছি। প্রতি বৃহস্পতিবার ফরীদির সংগে আড্ডা দেওয়ার জন্য জাহাঙ্গীরনগর চলে যেতাম। সে এক অসাধারণ সময় ছিল আমাদের। আমরা পরস্পরকে তুই করে সম্বোধন করতাম। কেবল অভিনয়শিল্পের সব বিষয়ে ওর সঙ্গে আমার মিল ছিল। কিন্তু ফরীদি একরকম জীবন যাপন করতেন, আমি আরেকরকম জীবন যাপন করতাম। কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বে কখনো ভাটা পড়েনি।

ফরীদি কতটা বন্ধুপ্রিয় ছিলেন তার একটি উদাহরণ দেই। মাহফুজ আহমেদের পরিচালনায় একটি ধারাবাহিক নাটকে আমরা শেষ অভিনয় করেছিলাম। নাটকটির নাম ছিল, 'আমাদের নুরুলহুদা'। গাজীপুর জেলার একটি গ্রামে শ্যুটিং করেছিলাম।

ওই নাটকের শ্যুটিংয়ে গিয়ে আমি অবাক! কেননা অনিয়মিত অভিনয় করার জন্য আমার কোনো সহকারি থাকত না। ফরীদির সংগে একজন সহকারি থাকত। শ্যুটিংয়ে গিয়ে দেখি ফরীদি তার জন্য যেমন আলাদা চেয়ার নিয়ে এসেছেন বাসা থেকে, আমার জন্যও আলাদা একটি চেয়ার নিয়ে এসেছেন তিনি। দুপুরবেলা খাওয়ার সময় আরও অবাক হই। ওর জন্য বাসা থেকে আলাদা একটি প্লেট নিয়ে এসেছেন, আবার জন্যও মনে করে আলাদা একটি এনেছেন। বন্ধুত্ব কাকে বলে এই ঘটনা থেকে টের পাওয়া যায়। সেদিন আমি খুব অবাক হয়েছিলাম। ফরীদি এমনই। ওর ভালোবাসায় কোনো ঘাটতি ছিল না।

Comments

The Daily Star  | English
BNP demands national election by December 2025

2014, 2018, 2024 polls: BNP to sue former ECs, officials today

BNP is set to file a case against officials involved in the last three national elections with Sher-e-Bangla Nagar police today. The party will also lodge a formal complaint with the Election Commission in this regard, BNP leaders said yesterday.  

3h ago