শাবানার মধ্যে কখনো কোনো অহংকার ছিল না: সোহেল রানা

শাবানার তুলনা তিনি নিজেই, তার নামটিই যথেষ্ট: সোহেল রানা
শাবানা ও সোহেল রানা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি দিনের নায়িকা শাবানা। তাকে বলা হয় ঢালিউড কুইন। শাবানা ও সোহেল রানা জুটি হয়ে অনেক সিনেমাতে অভিনয় করেছেন। সোহেল রানার পরিচালনাতেও অভিনয় করেছেন শাবানা। আজ ১৫ জুন নন্দিত এই অভিনেত্রীর জন্মদিন। জন্মদিনে নায়ক ও পরিচালক সোহেল রানা শাবানাকে নিয়ে কথা বলেছেন।

সোহেল রানা বলেন, শাবানার সঙ্গে আমার তিনভাবে সম্পর্ক ছিল। প্রথমত তিনি আমার বিপরীতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছেন। দ্বিতীয়ত আমার পরিচালনায় বেশ কয়েকটি সিনেমাতে অভিনয় করেছেন। অন্যদিকে আমার প্রযোজনায়ও অভিনয় করেছেন। এ কারণে আমার সুযোগ হয়েছিল তাকে তিনভাবে দেখার ও চেনার।

পরিচালক হিসেবে যদি বলি, তাহলে বলতেই হচ্ছে- কোনোদিন শাবানা শুটিংয়ে এসে ভোগান্তিতে ফেলেননি। তার জন্য কোনোদিন পরিচালকের ক্ষতি হয়নি। আমার পরিচালনার সময় সহকারী পরিচালক থেকে শুরু করে, ক্যামেরাম্যান এবং টি'বয়ের সঙ্গেও আন্তরিক ব্যবহার করতেন শাবানা। সেটে দেরিতে আসার তো প্রশ্নই আসে না। তাকে সবসময় একজন সিরিয়াস অভিনেত্রী হিসেবে পেয়েছি।

একটি ঘটনা বলছি। আমার পরিচালনায় শুটিং করছেন শাবানা। সিনেমার নামটি এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। সেদিন শাবানার সন্তান অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু, ওই অবস্থায়ও শাবানা শুটিং করেছেন। আমি তো জানার পর অবাক হয়েছি। তার প্রতি আমার সম্মান বেড়ে যাই। আসলে একজন অভিনেত্রী অভিনয়কে কতটা ভালোবাসলে এমন পরিস্থিতিতেও শুটিং করতে পারেন।

পরিচালক হিসেবে আরও বলতে চাই, শাবানা ছিলেন সত্যিকারের শিল্পী। তখন অনেকেই মনে করতেন সিনেমার নামি নায়িকা মানেই সেটে এসে নায়িকাসুলভ আচরণ করবেন। অহংকারী হবে। কিন্তু, তার মধ্যে এসব ছিল না। অন্য কারো মধ্যে থাকতে পারে, কিন্তু তার মধ্যে পাইনি। পরিচালক হিসেবেও শতভাগ পেশাদার অভিনেত্রী হিসেবে পেয়েছি শাবানাকে।

প্রযোজক হিসেবে শাবানাকে প্রথম পাই বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা 'ওরা ১১ জন' এ। এই সিনেমায় শাবানাসহ সবাই অসাধারণ অভিনয় করেছেন, তা সবারই জানা। তখনই বুঝেছি তার মধ্যে অনেকদূর যাওয়ার ইচ্ছে শক্তি ও সক্ষমতা আছে। তা তিনি পেরেছেনও। আরও পরে এসে আমার প্রযোজনায় অভিনয় করেছেন তিনি।

আমার নায়িকা হিসেবেও শাবানা ছিলেন অতুলনীয়। তার চেহারায় এক ধরণের মাধুর্য ছিল। বাঙালি মেয়ে যেমন হয় শাবানা তেমনই ছিলেন। কখনো মনে হয়নি দূরের কেউ। সব সময় মনে হয়েছে পরিবারের একজন, পাশের বাড়ির খুব কাছের কেউ, যাকে আপন করে নেওয়া যায়। শাবানাকে নায়িকা হিসেবে একটি কথা প্রায়ই বলতাম, তার চেহারাটা প্রতিমার মতো সুন্দর। শাবানা এই কথা শুনে হাসতেন।

নায়িকা বা সহশিল্পী হিসেবে শাবানা ছিলেন খুবই বন্ধুপরায়ণ। একটি দৃশ্য কতটা সুন্দর করে তুলতে তাকে কোনো ছাড় দিতে দেখিনি। তার ব্যক্তিত্ব ছিল প্রবল। একজন ভালো শিল্পী তো বটেই। অনেক বিশেষণ ব্যবহার করতে পারতাম তাকে নিয়ে। কিন্তু, ছোট্ট করে বলি, একজন গুড আর্টিস্ট তিনি। এ কারণে দশকের পর দশক ধরে সিনেমাপ্রেমীদের কাছে সম্মানের আসনে বসে আছেন।

তার জন্মদিনে দূর থেকে আমার আশীর্বাদ ও শুভেচ্ছা। তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন তার সুন্দর ব্যবহারের কথা ভুলব না। সবসময় তার মঙ্গল কামনা করি।

Comments

The Daily Star  | English

Jatrabari turns into battlefield as students clash

Students of three colleges clashed at Dhaka's Jatrabari today, turning the area into a battlefield

1h ago