এত মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য আমি নই: মোশাররফ করিম

টিভি নাটকের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম। ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের কাছে তার সমান দর্শকপ্রিয়তা। বহুমাত্রিক এই অভিনেতা এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে ওপার বাংলায়ও বেশ জনপ্রিয়। কলকাতায় ডিকশনারি সিনেমায় এবং সম্প্রতি আশফাক নিপুণ পরিচালিত মহানগর ওয়েব সিরিজে তার অভিনয় বেশ আলোচিত হয়েছে।
স্টার ফাইল ফটো

টিভি নাটকের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম। ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের কাছে তার সমান দর্শকপ্রিয়তা। বহুমাত্রিক এই অভিনেতা এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে ওপার বাংলায়ও বেশ জনপ্রিয়। কলকাতায় ডিকশনারি সিনেমায় এবং সম্প্রতি আশফাক নিপুণ পরিচালিত মহানগর ওয়েব সিরিজে তার অভিনয় বেশ আলোচিত হয়েছে।

এ সময়ের টিভি নাটকের মান, অভিনয় শিল্প, ওটিটি প্ল্যাটফর্মসহ নানা বিষয় নিয়ে মোশাররফ করিম কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

অনেকদিন ধরে টেলিভিশন নাটকের সঙ্গে জড়িত আপনি। আপনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে জানতে চাই, কেমন হচ্ছে এখনকার টিভি নাটক?

দেখুন, সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুর পরিবর্তন হচ্ছে, এটাই স্বাভাবিক। ডিরেকশন, অভিনয়, ক্যামেরা, লাইট, মেকআপ সবকিছুতে কিছু না কিছু পরিবর্তন এসেছে। আমি বলব না সব খারাপ কাজ হচ্ছে। আবার সব ভালো কাজ হচ্ছে তাও বলব না। অনেক ভালো কাজ হচ্ছে।

সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হয়ে অনেক এগিয়েছে আমাদের নাটকের শিল্প। আগের কাজ খুব ভালো ছিল, আর এখনকার কাজ খারাপ তা বলাটা ঠিক হবে না। আগে সংখ্যাটা কম ছিল। চ্যানেল ছিল একটি।

এখন সংখ্যা বেড়েছে। চ্যানেল বেড়েছে। গল্প বলবার ঢংয়ে পরিবর্তন এসেছে। আগেকার নাটকে মেকিংয়ে এত সুযোগ ছিল না। কাজ করতে করতে আমার অভিজ্ঞতা বলে, দিন শেষে ভালো কাজটিই টিকে থাকবে।

এদেশের দর্শকরা টেলিভিশন নাটকের সঙ্গে পরিচিত স্বাধীনতার বহু আগে থেকে। এক সময় প্যাকেজ নাটক শুরু হয়, এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এসেছে। নতুন এই প্ল্যাটফর্মটিকে আপনি কিভাবে দেখেন?

ওটিটি প্ল্যাটফর্মটাকে আমি ইতিবাচক চোখে দেখি। একটু আগে পরিবর্তনের কথা বলেছিলাম। এটা হবেই। আমি জোর দেব গল্পে। গল্প শক্তিশালী হলে টিভি নাটক বলি, সিনেমা বলি অথবা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বলি, দর্শকরা দেখবেই। দর্শকরা গল্প পছন্দ করেন। ‍ওটিটি আসাটা খারাপ নয়। নতুনকে অভিবাদন জানাতেই হবে।

ওয়েব সিরিজ নিয়ে অনেক মাতামাতি হচ্ছে। কেউ বলছেন ওয়েব সিরিজ ভালো হচ্ছে। কেউ বলছেন ওয়েব সিরিজ সমালোচনার জন্ম দিচ্ছে, সমাজের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে উঠছে। আপনার মন্তব্য কী?

আরও সময় দিতে হবে। আরও অপেক্ষা করতে হবে। তবে, ওয়েব সিরিজে অনেক চমক কিন্তু আসছে। দর্শকরা সেসব দেখছেনও। আমাদের মাথায় রাখতে হবে, গল্পটা যেন আমাদের শেকড়ের গল্প হয়। যেন আমাদের নিজেদের গল্প হয়। বড় কথা হচ্ছে ওয়েব সিরিজে কিন্তু বাজেট, সময়, যত্ন নিয়ে কাজ হচ্ছে। বাজেট, সময় ও যত্ন নিয়ে কাজ করলে তা দর্শককে টানবে।

থিয়েটার দিয়ে অভিনয় শুরু করেছিলেন। অনেক বছর থিয়েটার করে এক সময় টিভি নাটকে আগমন আপনার? অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে প্রতিষ্ঠা পেতে। কিন্তু, এখন শোবিজে এসেই অনেকে তারকা হতে চায়। এই প্রবণতার কারণ কী?

সাধনা ছাড়া শিল্পচর্চা হয় না। শিল্পচর্চার জন্য সাধনা প্রয়োজন। এ কথা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। শর্টকাটে শিল্পচর্চা হয় না, সাধনা লাগে। অভিনয় কলা এত সহজ নয়। বছরের পর বছর শিখে তারপর একজন শিল্পীর জন্ম হয়। তারকা ভিন্ন কথা। কেউ কেউ দ্রুত কিছু পেতে চান। তাতে করে লাভ খুব হয় না। একটি চরিত্র ভেতরে লালন করে তারপর ডেলিভারি দিতে হয়। এতে করে নিজের ভেতরে আনন্দ কাজ করে। কেন এই প্রবণতা অনেকের মাঝে কাজ করে, তা জানি না। এই প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসা উচিত।

খ্যাতি থাকলে বিড়ম্বনাও আছে। খ্যাতির বিড়ম্বনাকে কী চোখে দেখেন?

খ্যাতির বিড়ম্বনাকে ভালোভাবেই দেখি। জনপ্রিয়তাকে ভালোবাসি। মানুষ আমাকে ভালোবাসেন, আমিও মানুষকে ভালোবাসি। এত মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য আমি নই। জনপ্রিয়তাকে নেগেটিভভাবে নিই না। ভালোবাসাকে সম্মান করি। হয়ত সব সময় মানুষের মন জুগিয়ে চলা যায় না। কেউ তা পারেও না।

বহুমাত্রিক অভিনেতা বলা হয় আপনাকে। আপনার শেখার বিষয়গুলো মূলত কী?

চারপাশে দেখে অভিনয় শিখি। বাইরে বের হলে রাস্তায় কত মানুষ দেখি। শুটিং করতে গ্রামে গিয়ে মাঠে ঘাটে কত মানুষ দেখি। বাজারে গিয়ে মানুষ দেখি। ভিড়ের মধ্যে মানুষ দেখি। চরিত্রের তো অভাব নেই। সে সব দেখে চরিত্রটাকে মাথায় নিয়ে নিই।

আপনার দৃষ্টিতে টিভি নাটকের প্রধান সমস্যা কী?

বাজেট। আমি মনে করি টিভি নাটকের প্রধান সমস্যা বাজেট। একটা সময় কিন্তু নাটকের বাজেট এত কম ছিল না। অনেক বেশি বাজেট নিয়ে নাটক নির্মাণ হতো। দিন দিন টিভি নাটকের বাজেট কমছে। দুই দিনে টিভি নাটকের শুটিং শেষ করতে হবে। কেন? বাজেটের স্বল্পতা। তবে, ঈদের সময় ভালো বাজেট পাওয়া যায়। টিভি নাটকের বাজেট আরও বাড়ানোর দরকার।

কোন জীবনটাকে বেশি মিস করেন?

ফেলে আসা জীবন। থিয়েটারের জীবন। বেইলি রোডে দিনের পর দিন আড্ডা দিয়েছি থিয়েটারের মানুষদের সঙ্গে। একসময় নাট্যকেন্দ্রে কাজ করেছি নিয়মিত। ওই জীবনটাকে খুব মিস করি। আমার ছেলেবেলার কিছুটা সময় কেটেছে বরিশালে গ্রামের বাড়িতে। নদীতে নৌকা নিয়ে ঘুরতে যাওয়া, বৃষ্টির দিনে বৃষ্টিতে ভেজা, গ্রামের বাজারে যাওয়া, স্কুল থেকে ফিরেই নদীতে গোসল করতে যাওয়া, ওইসব দিনগুলোকে অনেক মিস করি।

Comments

The Daily Star  | English

Love road at Mirpur: A youthful street

Certain neighbourhoods in Dhaka have that one spot where people gather to just sit back and relax. For Mirpur, it’s the frequently discussed street referred to as “Love Road”.

2h ago