আফ্রিকায় তুরস্ক!

আফ্রিকা নিয়ে ‘কাড়াকাড়ি’ বা মহাদেশটিকে নিজেদের মধ্যে ‘ভাগ করে নেওয়া’র রাজনৈতিক তত্ত্বটি (Scramble for Africa) প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো। আফ্রিকায় তখন ছিল ইউরোপের উপনিবেশ স্থাপনের সময়। তবে সেই ‘ঐতিহ্য’ আজও সমানতালে চলছে।
আফ্রিকান ইউনিয়ন কমিশনের চেয়ারম্যান মুসা ফাকি মাহামাতকে স্বাগত জানাচ্ছেন তুরস্কের তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ছবি: আনাদোলো নিউজ এজেন্সি

আফ্রিকা নিয়ে 'কাড়াকাড়ি' বা মহাদেশটিকে নিজেদের মধ্যে 'ভাগ করে নেওয়া'র রাজনৈতিক তত্ত্বটি (Scramble for Africa) প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো। আফ্রিকায় তখন ছিল ইউরোপের উপনিবেশ স্থাপনের সময়। তবে সেই 'ঐতিহ্য' আজও সমানতালে চলছে।

নতুন শতকের শুরুতে আফ্রিকার দারিদ্র্যকে 'পুঁজি' করে মহাদেশটিকে নিজেদের মধ্যে 'ভাগাভাগি'র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামে চীন, ভারত ও তুরস্ক।

এশিয়ার এই ৩ দেশ প্রতি বছর ঘটা করে 'আফ্রিকা সম্মেলন'র আয়োজন করে থাকে। সম্প্রতি এমনই এক সম্মেলন হয়ে গেল তুরস্কের প্রধান শহর ইস্তাম্বুলে।

গত ১৭ ডিসেম্বর ইস্তাম্বুলে আয়োজন করা হয় তৃতীয় 'তুরস্ক-আফ্রিকা সম্মেলন'। এতে যোগ দেন মহাদেশটির ১৬ সরকার প্রধান, ১০২ মন্ত্রী এবং আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) ও ইকোনমিক কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটসের (ইসিডব্লিউএএস) প্রতিনিধিরা।

সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।

আফ্রিকার সঙ্গে তুরস্কের অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক শক্তিশালী করতে এই সম্মেলনে বক্তারা সম্ভাবনার নানাদিক তুলে ধরেন। উঠে আসে ভিন্ন প্রসঙ্গও।

গতকাল শনিবার সম্মেলনের শেষ দিনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, 'জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষের আফ্রিকার কোনো প্রতিনিধি নেই।'

একে অবিচারের 'উজ্জ্বল' নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'যখনই আমি মহাদেশটি ভ্রমণে গিয়েছি তখনই বিস্মিত হয়েছি।'

বক্তব্যে এরদোয়ান জানিয়েছেন, তিনি ২০০৪ সাল থেকে ৫০ বারের বেশি আফ্রিকায় গিয়েছেন এবং সেখানে ৩০টির বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন।

তার মতে, এই সম্মেলন আফ্রিকার প্রতি তুরস্কের ক্ষণস্থায়ী স্বার্থ নয় বরং স্থায়ী স্বার্থের সাক্ষর। তিনি বলেন, 'তুরস্কের সঙ্গে উন্নত সহযোগিতায় আমাদের আফ্রিকান ভাই-বোনেরা আগ্রহী।'

ভ্যাকসিন, ড্রোন ও ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য

করোনা মহামারিতে নাস্তানাবুদ তুরস্ক। দেশটির অর্থনীতি পড়েছে চরম সংকটে। ক্রমাগত কমছে তুরস্কের জাতীয় মুদ্রা লিরার মান। এমন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আফ্রিকায় ১ কোটি ৫০ লাখ ডোজ করোনার টিকা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

পাশাপাশি বলেছেন, 'এটি মানবতার জন্যে লজ্জার যে, মহাদেশটির মাত্র ৬ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে।'

শুধু টিকা নয়, সন্ত্রাস মোকাবিলায় আফ্রিকার দেশগুলোয় তুরস্কের বিশেষজ্ঞ ও সামরিক প্রযুক্তি পাঠাতেও প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন এরদোয়ান।

তিনি বলেন, 'ইসলামিক স্টেট, বোকো হারাম ও আল-শাবাবের মতো সশস্ত্র সংগঠনগুলো কয়েকটি দেশে সক্রিয় থাকলেও তারা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে। সন্ত্রাস মোকাবিলায় তুরস্কের বিশাল অভিজ্ঞতা আছে। আমরা সেই অভিজ্ঞতা আফ্রিকার সঙ্গে ভাগ করে নিতে প্রস্তুত।'

আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে তুরস্ক কী ধরনের সামরিক সহযোগিতা চায় তা এই সম্মেলনে পরিষ্কার হয়নি বলে মনে করছেন ইস্তাম্বুল কমার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ ইজিদ।

তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, 'সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আফ্রিকায় তুরস্ক সামরিক সাফল্য পেয়েছে। এখন আশা করা হচ্ছে, সোমালিয়া, নাইজার ও ইথিওপিয়ার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা আরও বাড়বে।'

সংবাদমাধ্যম আল-মনিটর জানিয়েছে, কেনিয়ায় সামরিক খাতে প্রভাব বিস্তারে মিশরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছে তুরস্ক।

আফ্রিকায় তুরস্কের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে তুরস্কের বাণিজ্য বেশ নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। চলতি বছরের গত ১১ মাসে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। তা আগামীতে ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন এরদোয়ান।

সম্মেলনে তিনি জানান, প্রায় ২৫ হাজার আফ্রিকান তুরস্কের প্রতিষ্ঠানগুলোয় কাজ করছেন এবং ১৪ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী সে দেশে পড়ছেন।

শুধু তাই নয়, সোমালিয়ায় তুরস্কের বড় সামরিক ঘাঁটি আছে। সেখানে অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি নিরাপত্তাকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে তুরস্ক।

বর্তমানে লিবিয়ায় আছে তুর্কি সেনা। সেখানে জাতিসংঘ-স্বীকৃত সরকারকে সামরিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে তুরস্ক।

মরক্কো ইতোমধ্যে তুরস্ক থেকে অস্ত্র কিনতে শুরু করেছে। গত অক্টোবরে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, মরক্কো তুরস্কের তৈরি 'বৈরাকতার টিবি২' ড্রোন কিনেছে। এই ড্রোন আজারবাইজান, পোল্যান্ড ও ইউক্রেনেও বিক্রি করেছে তুরস্ক।

আঙ্কারার সেন্টার ফর মিডল ইস্টার্ন স্টাডিজের উপপরিচালক ইসমাইল নুমান তেলজি আল-জাজিরাকে জানান, আফ্রিকার সঙ্গে তুরস্কের এই ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক সম্পর্ক আংশিকভাবে তুরস্কের স্বার্থেই হচ্ছে।

তার মতে, নিকটতম প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক 'সীমিত' করে তুরস্ক আফ্রিকাসহ দূরের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, 'এ ক্ষেত্রে তুরস্ক সম-অংশীদারিত্বের নীতি গ্রহণ করেছে।'

এদিকে, আফ্রিকার নেতারা প্রতিনিয়ত ঔপনিবেশিক ইউরোপের বাইরে উন্নয়ন অংশীদার খুঁজে চলছেন। সে সুযোগে 'উন্নয়নের' নামে আফ্রিকায় নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে আগ্রহী এশিয়ার উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিগুলো।

তবে উসমানীয় যুগে উত্তর আফ্রিকা শাসনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন তুরস্ক নানা কারণে সম্পদশালী ও একাধারে দারিদ্র্যপীড়িত মহাদেশটিতে প্রভাব বিস্তারে পিছিয়ে আছে চীন ও ভারতের তুলনায়।

Comments

The Daily Star  | English

288 Myanmar security personnel sent back from Bangladesh

Bangladesh this morning repatriated 288 members of Myanmar's security forces, who had crossed the border to flee the conflict between Myanmar's military junta and the Arakan Army

14m ago