ভ্যাট আদায় বাড়াতে ইএফডির ব্যবহার বাড়ানোর সুপারিশ
ভ্যাট আদায়ের জন্য ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইসের (ইএফডি) ব্যবহার দ্রুত বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) সুপারিশ করেছেন কয়েকজন সাবেক শীর্ষ কর কর্মকর্তা ও অর্থনীতিবিদ।
তাদের মতে, ইএফডির মাধ্যমে নিরীক্ষণ বাড়ালে কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ কমে আসবে। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সহায়তায় ভ্যাট আদায় কার্যক্রমের সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে।
বহুল আলোচিত ইএফডি প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তারা এসব মন্তব্য করেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব মোহাম্মদ আবদুল মজিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অটোমেশন বা মেশিনে লেনদেনের হিসাব রাখার বিষয়ে অনেক ব্যবসায়ীর মধ্যে জড়তা রয়েছে।'
'ব্যবসায়ীদের মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে যে, যদি মেশিন ব্যবহার করা হয়, তবে ডিভাইসগুলো সব লেনদেনের তথ্য সংরক্ষণ করবে। একটি দেশে, যেখানে দুটি রেজিস্টারের ব্যবহার বেশ সাধারণ, সেখানে কে ডিভাইস ব্যবহার করতে আগ্রহী হবে?', প্রশ্ন তোলেন তিনি।
২০০৭-০৮ সালে কর প্রশাসন যখন ইএফডির পূর্বসূরি ইলেক্ট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার (ইসিআর) চালু করে, তখন এনবিআরের নেতৃত্বে ছিলেন আবদুল মজিদ।
'অসাধু ব্যবসায়ীদের মধ্যে এমন আশঙ্কাও রয়েছে যে তারা যদি ডিভাইস ব্যবহার করে, তবে তাদের সব লেনদেন স্বচ্ছ হবে। এটি করার পরিবর্তে, তাদের মধ্যে অনেকেই (ইএফডি জনপ্রিয় না হওয়ার জন্য) গ্রাহকদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন', যোগ করেন তিনি।
এনবিআরের আরেক সাবেক চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন আহমেদের মতে, এই ব্যর্থতার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে খুচরা দোকানগুলোর সার্বক্ষণিক নিরীক্ষণের ব্যবস্থা না থাকা।
'এটা এনবিআরের কাজ। খুব সম্ভবত এ বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধতায় ঘাটতি রয়েছে', যোগ করেন তিনি।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মনে করেন, কার্যকর রিফান্ড বা ক্রেডিট ব্যবস্থা চালু না করা হলে ব্যবসায়ীরা সঠিকভাবে ভ্যাট সংগ্রহ ও জমা দিতে আগ্রহী হবেন না।
তিনি বলেন, 'ইনপুট কর ক্রেডিট ব্যবস্থা সঠিকভাবে কাজ করে না। ব্যবসায়ীরা ভ্যাটকে বোঝা হিসেবে দেখেন।'
এই অর্থনীতিবিদের মতে, দ্বিতীয় সমস্যাটি হচ্ছে সুশাসন ও নজরদারির অভাব।
জাহিদ বলেন, 'এক্ষেত্রে দুর্নীতির একটা ভূমিকা আছে। ব্যবসায়ীরা ইএফডি ব্যবহার না করে সুবিধা পাচ্ছেন। অসাধু কর্মকর্তারাও এ সুবিধার একটি অংশ ভোগ করছেন।'
বাংলাদেশের পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, এনবিআরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ উদ্যোগ সফল করতে চান না।
তিনি বলেন, 'নিরীক্ষণ ও বাস্তবায়নের কাজকে আলাদা করতে হবে। যে কর্মকর্তা এই প্রক্রিয়ার নিরীক্ষণ করবেন, তাকেই এর বাস্তবায়নের কাজ দেওয়া যাবে না।'
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক অর্থনীতিবিদ মনসুর বলেন, উন্নত দেশগুলোতেও ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
তিনি বলেন, 'আমাদের দেশে খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায়ের পরিমাণ কম হবে। কারণ তাদের দোকানগুলো আকারে ছোট। পাইকারি ও উৎপাদন পর্যায় থেকে যথাযথ ভ্যাট আদায়ের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।'
'এজন্য নজরদারি বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে অটোমেশন প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করতে হবে', যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'ইএফডি পরিচালনার ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করতে এনবিআরের উদ্যোগ ঠিক আছে। তবে ব্যবসায়ী ও বেসরকারি সেবা প্রদানকারী—উভয়ের ওপর এনবিআরের নজরদারি অব্যাহত থাকতে হবে।'
Comments