চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার পরিচালনায় নতুন রেকর্ড

চলতি বছর ৩১ লাখ ১৫ হাজার টিইইউ পরিমাণ কনটেইনার পরিচালনা করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। এই বন্দরে ১৯৭৭ থেকে কনটেইনার পরিচালনা শুরু হয়। তখন থেকে এ পর্যন্ত ১ বছরে কনটেইনার পরিচালনার পরিমাণ এটাই সর্বোচ্চ।
ফাইল ছবি

চলতি বছর ৩১ লাখ ১৫ হাজার টিইইউ পরিমাণ কনটেইনার পরিচালনা করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। এই বন্দরে ১৯৭৭ থেকে কনটেইনার পরিচালনা শুরু হয়। তখন থেকে এ পর্যন্ত ১ বছরে কনটেইনার পরিচালনার পরিমাণ এটাই সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার কারণে এই নতুন রেকর্ডের সৃষ্টি হয়েছে বলে ভাবছেন ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) ট্রাফিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দরে আমদানি, রপ্তানি ও খালি কনটেইনার পরিচালনায় এই নতুন রেকর্ড হয়েছে।

এই তথ্য পেতে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান জেটি, কেরানীগঞ্জের পানগাঁও ও ঢাকার কমলাপুরের ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোতে (আইসিডি) কনটেইনার থেকে ওঠানো ও নামানো পণ্যের হিসাব করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি খুবই ভাল লক্ষণ। আমরা আশা করছি এভাবেই আমদানি ও রপ্তানি বাড়তে থাকবে।'

উল্লেখ্য বাংলাদেশের ৩ হাজার ৮৭০ কোটি ডলার রপ্তানি বাণিজ্যের ৮৪ শতাংশই তৈরি পোশাক খাতের।

২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার পরিচালনার পরিমাণ ৩০ লাখ টিইইউ ছাড়ায়। মহামারির কারণে বিদেশের সঙ্গে বাণিজ্য কমে যাওয়ায় গত বছর কনটেইনার পরিচালনার প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক ছিল।

কনটেইনার পরিচালনার পরিমাণ কমে যাওয়ায় লয়েড'স লিস্টের বিশ্বের ১০০ ব্যস্ততম বন্দরের তালিকায় ৯ ধাপ পিছিয়ে ৬৭ স্থানে চলে গেছে চট্টগ্রাম বন্দর।

বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২১ এর শেষ নাগাদ কনটেইনার পরিচালনা ৩২ লাখ টিইইউ হতে পারে।

কনটেইনার পরিচালনার ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ডের বিষয়ে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মো. তানভির বলেন, 'নিশ্চিতভাবেই বোঝা যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি মহামারির আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে মহামারির মন্দা থেকে বের হয়ে এসেছি এবং আরও সামনে এগিয়ে যাব।'

ডেনিম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভির বলেন, 'প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে পূর্ণমাত্রায়। আমরা আশা করছি বন্দর সে প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে প্রস্তুত থাকবে।'

বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা বলেছেন, আমদানি ও রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে এই বন্দরের মাধ্যমে কনটেইনারের পরিবহন তুলনামূলক বেশি বেড়েছে। করোনাভাইরাসের ২য় ঢেউয়ের পর এ বছরের এপ্রিলের থেকে কারখানাগুলো আবারও চালু হচ্ছে এবং এতে শিল্প খাতের উৎপাদনও বেড়েছে।

তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য শিল্প খাতের কাঁচামালের আমদানি অনেক বেড়ে গেছে। সার্বিকভাবে উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে এরকম হচ্ছে। এছাড়াও, পণ্য রপ্তানিও বেড়েছে।

বিজিএমইএর প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেশব্যাপী লকডাউনের সময়েও বন্দরের কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় চবকের যথোপযোগী ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেন।

চবকের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান কনটেইনার পরিচালনার ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড গড়ায় সকল অংশীজনদের তাদের নিজ নিজ অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানান।

তিনি জানান, বন্দর কর্তৃপক্ষ নিবিড়ভাবে বেসরকারি আইসিডিদের কাজ নিরীক্ষণ করেছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছে।

তিনি আরও জানান, বন্দর কর্তৃপক্ষ সার্বক্ষণিকভাবে কনটেইনার রাখার জায়গা বাড়িয়েছে এবং ১০৪ ধরনের সরঞ্জাম কেনার উদ্যোগ নিয়েছে।

আমদানি হওয়া পণ্যের বেশিরভাগই কনটেইনার থেকে নামানোর পর সরাসরি বন্দর থেকেই ডেলিভারি দেওয়া হয়। শুধুমাত্র ৩৮ ধরনের আমদানি পণ্যকে বেসরকারি আইসিডির কাছে ডেলিভারির জন্য দেওয়া হয়, জানান এম শাহজাহান।

যদি সব ধরনের আমদানি পণ্যের কনটেইনারকে বন্দরে ডেলিভারির জন্য পাঠানো হয়, তাহলে বর্তমান সক্ষমতা অনুযায়ী, বন্দরে বার্ষিক ৪০ লাখ টিইইউ কনটেইনারের পরিচালনা করা সম্ভব হবে।

নির্মাণাধীন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল কাজ শুরু করলে বন্দরে প্রতি বছর আরও অতিরিক্ত ৫ লাখ টিইইউ পরিমাণ কন্টেইনার পরিচালনা করা যাবে।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Political parties want road map to polls

Leaders of major political parties yesterday asked Chief Adviser Prof Muhammad Yunus for a road map to reforms and the next general election.

7h ago