ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে আশার আলো, নিজেই নিজেকে ধ্বংস করবে পরজীবী
ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় নতুন কিছু ওষুধ কার্যকরী হওয়ার তথ্য থাকলেও ম্যালেরিয়া সৃষ্টিকারী পরজীবীর মিউটেশন এবং ওষুধ প্রতিরোধী ক্ষমতা থাকায় রোগটি জনস্বাস্থের জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণার ফলাফল দেখাচ্ছে আশার আলো।
সম্ভাবনার নতুন অস্ত্র
মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এমন এক ধরনের রাসায়নিক যৌগের সন্ধান পেয়েছেন যা অত্যন্ত গোপনে ম্যালেরিয়া পরজীবীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করে পরজীবীটির ওপর এমন প্রভাব ফেলতে সক্ষম, যার ফলে পরজীবীগুলো নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করবে।
-
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে ২০২০ সালে পৃথিবীতে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২৪১ মিলিয়ন।
-
একই বছর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৬ লাখ ২৭ হাজার মানুষ মারা গেছে।
-
আফ্রিকা অঞ্চলে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহার ওই অঞ্চলে ম্যালেরিয়া ঘটিত মৃত্যুর ৮০ শতাংশ জায়গা দখল করে আছে।
এমএল৯০১ যৌগের লক্ষ্য
নিওক্লিওসাইট সাল্ফামেইটস এক প্রকারের রাসায়নিক উপাদান, যার আরেকটি নাম হলো এমএল৯০১। যৌগটির রয়েছে বিশেষ সক্ষমতা। যেটির অসাধারণ এক পন্থায় প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম নামের ম্যালেরিয়া পরজীবীর বিস্তার বন্ধ করতে দেখেছেন গবেষক দল। এমএল৯০১ ম্যালেরিয়া পরজীবী থেকে একটি উন্মুক্ত অংশ বের করে ফেলতে এবং পরজীবীর প্রোটিন তৈরির প্রক্রিয়াকে বন্ধ করে দিতে সক্ষম।
স্তন্যপায়ী প্রাণীদের কোষের গঠন ম্যালেরিয়া পরজীবী থেকে ভিন্ন হওয়ায় কাজটি করতে গিয়ে এমএল৯০১ ম্যালেরিয়া পরজীবী বাদে মানুষ বা স্তন্যপায়ী প্রাণীর সবল কোষে আক্রমণ করে না।
গবেষক দলের একজন প্রফেসর লিয়ান টিলে এমএল৯০১-এর কার্য-প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলেছেন, 'চিন্তা করুন এমন একটা গুপ্ত অস্ত্রের কথা যেটা আত্ম-বিধ্বংসী আক্রমণের জন্য আপনার গাড়িতে ব্যবহার করা হয়েছে। অস্ত্রটি আপনার গাড়িতে সক্রিয় হওয়ার পর গাড়িটি নিজেই নিজের ব্রেক থামিয়ে দিচ্ছে, ইঞ্জিনকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে। ম্যালেরিয়া পরজীবী যে প্রক্রিয়ায় নিজের বংশবৃদ্ধির জন্য প্রোটিন উৎপাদন করে থাকে। সেই প্রক্রিয়ায় এমএল৯০১ ফাঁটল ধরাতে সক্ষম হয়। যার ফলে গুপ্ত অস্ত্রটি সক্রিয় হওয়ার পর গাড়ি যেমন আত্ম-বিধ্বংসী হয়ে নিজের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়, তেমনি এমএল৯০১-এর আক্রমণের কারণে ম্যালেরিয়া পরজীবী আত্ম-বিধ্বংসী হয়ে ওঠে এবং নিজের প্রোটিন তৈরির প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়।'
পুরো প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন হয় অনেকটা এভাবে, এমএল৯০১ একটা অ্যামাইনো এসিডের সঙ্গে প্রথমে যুক্ত হয়ে পরজীবীর টিকে থাকার জন্য যে প্রোটিন উৎপাদন শৃংখলের ওপর নির্ভরশীল সেটা নষ্ট করে দেয়। এমএল৯০১-এর এমন কার্যক্রম মানুষের রক্তের কালচার এবং প্রাণী কোষে প্রদর্শন করতে দেখা যায়। এমএল৯০১ কে এমনকি ম্যালেরিয়া পরজীবীর জীবনচক্রের সব পর্যায়েই সক্রিয় হতে দেখা গেছে। যার অর্থ এমএল৯০১ কে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ ঠেকাতেও যেমন ব্যবহার করা যাবে, তেমনি রোগের চিকিৎসায়ও।
ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় বড় ধরনের সাফল্য বয়ে আনতে এমএল৯০১-এর অনুরূপ ওষুধ বের করার পরবর্তী কাজে নিয়োজিত হওয়া এখন গবেষক দলের লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন প্রফেসর লিয়ান টিলে।
এর আগে ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলের শিশুদের জন্য প্রথমবারের মতো ম্যালেরিয়া ভ্যাক্সিন আরটিএস, এস প্রদানের জন্য সুপারিশ করে।
মূলত ঘানা, কেনিয়া ও মালাউইয়ে ভ্যাকসিনটি পরীক্ষামূলকভাবে সফল হওয়ার পর এই সুপারিশ করা হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ৯ লাখের বেশি শিশুকে ভ্যাকসিন কার্যক্রমে যুক্ত করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র: বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, ফিজ ওআরজি
Comments