মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বৈশ্বিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, বিকল্প খুঁজছে রাশিয়া
ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর থেকে রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। নিষেধাজ্ঞার এই তালিকা নেহায়েত কম লম্বা নয়—তেল, গ্যাস, বিলাসী পণ্য, ভদকা, বাণিজ্য, অর্থনীতি, ভ্রমণ এমনকি ব্যক্তি বিশেষ পর্যন্ত রয়েছে এই তালিকায়। এর বিপরীতে ক্রমাগত হুমকি এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ক্রেমলিনও জানিয়েছে, তারা মুখ বুজে পাশ্চাত্যের সব নিষেধাজ্ঞা মেনে নেওয়ার পাত্র না।
তবে, সম্প্রতিকালে বিশেষ এক নিষেধাজ্ঞায় রুশ কর্তৃপক্ষ নিজেদের সম্পূর্ণ নতুন এক পরিস্থিতিতে আবিষ্কার করেছে— আর সেটি হলো প্রযুক্তিগত নিষেধাজ্ঞা।
কারা আরোপ করেছে এই প্রযুক্তিগত নিষেধাজ্ঞা
ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর থেকে একের পর এক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান রাশিয়াতে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করছে। নেটফ্লিক্স, টিকটকের মতো প্রতিষ্ঠান দেশটিতে তাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। যন্ত্রাংশের চালান বাতিল করেছে স্যামসাং।
মোবাইল নেটওয়ার্ক পরিচালনার জন্য নোকিয়া, এরিকসন কিংবা সিসকোর মতো প্রতিষ্ঠান থেকে নতুন কোনো সেবা বা যন্ত্রাংশ পাচ্ছে না রাশিয়ান টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিগুলো। অ্যাপল, ডেল, এইচপির মতো নিত্যকার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো হয় পুরোপুরি, নয়তো আংশিকভাবে দেশটিতে নিজেদের কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে।
বহির্বিশ্ব থেকে সেমিকন্ডাক্টর আসা এক প্রকার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাশিয়ান কোম্পানিগুলো নতুন মাইক্রোপ্রসেসর তৈরিতে শঙ্কার মুখে পড়েছে। সেমিকন্ডাক্টরের জন্য রাশিয়া পুরোপুরি তাইওয়ানের ওপর নির্ভরশীল। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, টিএসএমসি-এর ওপর। সাধারণ একটি স্মার্টফোন থেকে শুরু করে বিশেষ সামরিক যন্ত্রাংশ, দেশটির যেকোনো ডিভাইস উৎপাদিত হয় টিএসএমসি-এর সেমিকন্ডাক্টার দিয়ে। চলমান সংঘাতে এই প্রতিষ্ঠানটি রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ইন্টেলও। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ব্যবহারের জন্য রাশিয়ায় প্রসেসর পাঠানো বন্ধ রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি।
মাইক্রোসফট এবং ওরাকলের মতো অফিস সফটওয়্যারগুলোও রাশিয়ার জন্য তাদের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বা আংশিক স্থগিতের নীতি অবলম্বন করছে। শুধু তাই নয়, সেবার এবং অ্যামাডেউস—উড়োজাহাজের টিকিট বুকিং সফটওয়্যারের জগতে সবচেয়ে বড় দুটি নাম অ্যারোলফটকে নিজেদের সিস্টেম থেকে বাদ দিয়েছে। যেটি কি না রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় এবং সবচাইতে বড় উড়োজাহাজ কোম্পানি। বলা বাহুল্য, রাশিয়ার পর্যটন এবং উড়োজাহাজ খাতে এটি বেশ বড় ধরনের আঘাত হেনেছে।
ডিজিটাল এই যুগে অর্থের লেনদেনও ডিজিটাল রূপ নিয়েছে। পেপাল, গুগল পে, অ্যাপল পে, ভিসা কিংবা মাস্টার কার্ডের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহক তাই গত দুই দশকে বেড়েছে চক্রবৃদ্ধি হারে। এমন প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার বর্তমান কার্যকলাপ বিবেচনায় নিয়ে পেপাল দেশটিতে তাদের সব কার্যক্রম স্থগিত করেছে। এতে সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে রুশ ফ্রিল্যান্সাররা। অন্যান্য ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনের প্রতিষ্ঠানগুলোও দেশটিতে তাদের সেবা ভীষণভাবে সংকুচিত করে এনেছে।
ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর তথ্যযুদ্ধের এই যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ডিজিটাল মিডিয়াগুলো রাশিয়ায় কী পরিস্থিতিতে আছে?
মার্চের শুরুতেই ক্রেমলিন ফেসবুক নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। টুইটার এবং ইনস্টাগ্রামও বাধ্য হয় একই পরিণতি বরণ করতে। ইউটিউবে আরোপ করা হয় বহুবিধ বিধিনিষেধ। বিপরীতে, ইউটিউবও সব রাশিয়ান অ্যাকাউন্টের আয়ের পথ বন্ধ করে দেয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো অনেকটাই সংকুচিত আকারধারণ করে দেশটিতে।
দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিবিসি, ডয়েচেভেলে, ভয়েজ অব আমেরিকা, সিএনএন ও ব্লুমবার্গের মতো বহু গণমাধ্যমকে হয় রাশিয়া নিষিদ্ধ করেছে অথবা তারা নিজেরাই দেশটিতে সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়ে সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে সাংবাদিকদের কার্যক্রম।
এরই মধ্যে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার 'হেট স্পিচ পলিসিতে' সাময়িক এক পরিবর্তন আনা হয়। ইউক্রেনে আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে, নির্দিষ্ট কিছু দেশে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীদের রুশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে সহিংস পোস্ট দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। ফেসবুকের এমন দ্বিচারিতায় ক্ষুব্ধ মস্কো মেটাকে 'চরমপন্থী সংগঠন' ঘোষণা করে।
বিকল্প প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে রাশিয়া
বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর অবর্তমানে বেশকিছু বিকল্প বেছে নিয়েছে রুশ সরকার ও দেশটির জনগণ। এই বিকল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর কয়েকটি আগে থেকেই রাশিয়ায় বেশ জনপ্রিয়, সম্প্রতি কয়েকটি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং কয়েকটি একদমই নতুন সংযোজন।
ইয়ানডেক্স
রাশিয়ায় সর্বাধিক ব্যবহৃত সার্চ ইঞ্জিন। প্রতিষ্ঠানটি বহুবিধ ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ই-মেইল, মানচিত্র, যাতায়াত, কেনাকাটা ইত্যাদি। অর্থাৎ, একইসঙ্গে এটি গুগল, উবার এবং অ্যামাজনের বিকল্প হিসেবে কাজ করছে। তবে, সম্প্রতিকালে আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা ইয়ানডেক্সের গায়ে এসেও লেগেছে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান অর্থনৈতিক স্থিতি খুব বেশি আশা জাগানিয়া নয়।
ভিকন্ট্যাক্টে (ভিকে)
ফেসবুক এবং টুইটারের রুশ বিকল্প এটি। দেশটিতে ফেসবুক এবং টুইটারের চাইতেও ভিকে বেশি জনপ্রিয়। ২০২০ সালের পরিসংখ্যান মোতাবেক, রাশিয়ায় ৭৮ শতাংশ নাগরিক ভিকে ব্যবহার করে। যেখানে ফেসবুকের ব্যবহার মাত্র ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ। রাশিয়ার সরকারি মিডিয়াগুলোকে ফেসবুক এবং টুইটার থেকে একপ্রকার অবাঞ্চিত ঘোষণা করবার পর ভিকের গুরুত্ব বহুগুণে বেড়ে গেছে।
মেইল.আরইউ
রাশিয়ার অন্যতম প্রধান মেইল সেবা এটি। জিমেইল বা ইয়াহুর মতো প্রতিষ্ঠানের অবর্তমানে এটি রাশিয়ার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
ইয়াপ্পি
টিকটককে টেক্কা দেওয়ার জন্য ২০২১-এর শেষের দিকে এই অ্যাপটি বাজারে এনেছে রাশিয়া। বর্তমান বাস্তবতায় এই অ্যাপটির মূল্য রাশিয়ায় বহুগুণ বেড়েছে।
রসগ্রাম
১৪ মার্চ ইন্সটাগ্রাম নিষিদ্ধের পর তার বিকল্প রসগ্রাম আনার ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। আশা করা যাচ্ছে ইনস্টাগ্রামের প্রায় সবগুলো ফিচারই এতে থাকবে।
ইউনিয়নপে
ভিসা ও মাস্টারকার্ড রাশিয়ায় তাদের সেবা বন্ধ করে দেওয়ায় আর্থিক লেনদেনের জন্য দেশটি চীনা প্রতিষ্ঠান ইউনিয়নপের দিকে ঝুঁকেছে।
র্যাম্বল
কানাডিয়ান ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম। পশ্চিমা দেশগুলোর ভার্চুয়াল স্পেসে রুশ রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম রাশিয়া টুডে এবং স্পুটনিককে ক্রমাগত সংকুচিত করে ফেলায় মাধ্যমগুলো র্যাম্বলের দ্বারস্থ হয়েছে। র্যাম্বলের মতে, এই প্ল্যাটফর্মটি তৈরিই হয়েছে, যাতে সব কন্টেন্ট প্রস্তুতকারক স্বাধীনভাবে নিজস্ব মত তার অনুসারীদের কাছে পৌঁছে দিতে পারে।
উল্লেখ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের অধিভুক্ত অঞ্চলে রাশিয়া টুডে এবং স্পুটনিকের সম্প্রচার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
রুটিউব
রুশ ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম। রাশিয়ায় এটিকে ইউটিউবের বিকল্প ভাবা হচ্ছে। ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে প্ল্যাটফর্মটির প্রসার বেড়েছে। সম্প্রতিকালে জনপ্রিয় রুশ তারকাদের মধ্যে প্ল্যাটফর্মটিতে যোগদানের ঝোঁক দেখা যাচ্ছে। তবে ডিজিটাল অধিকারের সংগঠন 'ইন্টারনেট প্রটেকশন সোসাইটির' সহপ্রতিষ্ঠাতা লিওনিদ ভলকভের মতে, রুটিউব এখনো এতটাই ক্ষুদ্র যে এর মার্কেট শেয়ার একেবারে অস্তিত্বহীন।
এখানে একটি বিষয় বলে রাখা ভালো। বহু পশ্চিমা প্রযুক্তিকে নিষিদ্ধ এবং মেটাকে চরমপন্থী সংগঠন আখ্যা দেওয়ার পরও মেটার হোয়াটসঅ্যাপ এবং বিধিনিষেধ মাথায় নিয়ে গুগলের ইউটিউব কিন্তু রাশিয়ায় পুরোদমে চলছে। এর একটি কারণ হতে পারে রাশিয়ায় প্ল্যাটফর্ম দুটির বেশুমার জনপ্রিয়তা। ২০২০ সালের স্ট্যাটিস্টার পরিসংখ্যান বলছে, ইউটিউব রাশিয়ায় সর্বাধিক ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। ৮৫ দশমিক ৪ শতাংশ রুশ নাগরিক এর গ্রাহক। তৃতীয় অবস্থানে থাকা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন ৭৫ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ। প্ল্যাটফর্ম দুটির ভালো কোনো রুশ বিকল্প না থাকায় সরকার চাইলেই যে কোনো সময় এদের বন্ধ করতে পারছে না। এতে জনগণের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
এ তো গেল ইন্টারনেটে বিকল্প প্রযুক্তির কথা। কেমন হবে যদি ইন্টারনেটেরই বিকল্প তৈরি করে ফেলা যায়?
২০১৯-এর ডিসেম্বরে বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রাশিয়া সফলতার সঙ্গে দেশব্যাপী আলাদা একটি ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক পরীক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। যা কি না বৈশ্বিক ইন্টারনেটের বিকল্পস্বরূপ। রুশ যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এর সত্যতা নিশ্চিত করে। একই বছর রুশ 'সার্বভৌম ইন্টারনেট আইন' আলোর মুখ দেখে। এই আইন দেশটির ইন্টারনেট অবকাঠামোর নিয়ন্ত্রণ এবং রুশ ইন্টারনেটকে সমগ্র বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করবার ক্ষমতা সরকারের হাতে ন্যস্ত করে।
বিকল্প ইন্টারনেটের ধারণা বেশ আগে থেকেই রুশ কর্তাব্যক্তিদের মাথায় খেলছিল। ইউক্রেন ইস্যুর ফলে সেই ধারণা বাস্তবে রূপ নেওয়ার সবচেয়ে কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে। তবে এটি বুঝতে বেগ পেতে হয় না যে, এই বিকল্প ইন্টারনেট জনগণের তথ্যের অধিকার, কথা বলবার অধিকার ভূলুণ্ঠিত করবে।
ইউনিভার্সিটি অব সারের অধ্যাপক অ্যালেন উডওয়ার্ডের মতে, 'এই বিকল্প ইন্টারনেটের অর্থ, নিজ দেশে কী হচ্ছে সে ব্যাপারে সাধারণ মানুষের কথা বলার কোনো সুযোগ থাকবে না। তাদের নিজ গণ্ডিতেই আবদ্ধ রাখা হবে।'
প্রযুক্তি নিষেধাজ্ঞার প্রভাব এবং রাশিয়ান বাস্তবতা
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর বিকল্প দাঁড় করিয়ে ফেললেও রাশিয়া মূলত ধুঁকছে হার্ডওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি এবং ক্ষেত্রবিশেষে সফটওয়্যার মার্কেটে।
লেখার শুরুর দিকে সেমিকন্ডাক্টার সংকটের কথা বলা হয়েছে। রাশিয়া চাইলে চীন থেকে তুলনামূলক কম ক্ষমতাসম্পন্ন চিপ আমদানি করে সাধারণ ডিভাইস উৎপাদন করতে পারে। তবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সামরিক খাতের যন্ত্রাংশের জন্য দেশটির নিকট বর্তমানে কোন চিপ সরবরাহকারী নেই।
এই সময়ে দাঁড়িয়ে কোনো দেশের যাবতীয় চাহিদা দেশটির একার পক্ষে পূরণ করা বেশ কঠিন। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও বেশি সত্য। একের পর এক 'টেক' নিষেধাজ্ঞার পাল্লায় পড়ে মস্কো বিষয়টি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।
বর্তমান বিশ্বে রাশিয়ার সবচাইতে বড় অস্ত্র হচ্ছে তাদের তেল এবং গ্যাস। সেই তেল-গ্যাস উত্তোলন থেকে শুরু করে রপ্তানির মাধ্যম পর্যন্ত রাশিয়া অনেকাংশে বিদেশি যন্ত্রাংশ এবং সফটওয়্যারের ওপর নির্ভরশীল। বিদ্যমান আগ্রাসন রুশদের সবচেয়ে মূল্যবান এই খাতকে সম্ভাব্য ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে।
সাইবার সিকিউরিটি জগতে ক্যাসপারস্কির নাম কমবেশি সবারই জানা। বর্তমানে রাশিয়ান এই অ্যান্টিভাইরাস প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা এবং গ্রাহকসংখ্যা দুই-ই হারাচ্ছে। রাশিয়া থেকে বহু সফটওয়্যারকে হালনাগাদ করা যাচ্ছে না। এতে সফটওয়্যারগুলোর কার্যক্ষমতা যেমন কমছে, সাইবার আক্রমণের ঝুঁকিও কিন্তু বাড়ছে।
রাশিয়া প্রযুক্তিগতভাবে চীনের মতো স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। এই খাতে দেশটি বহুলাংশে বৈদেশিক রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। রাতারাতি দেশটির পক্ষে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া বা বিদ্যমান হার্ডওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকল্প খুঁজে বের করা শুধু কঠিনই নয়, রীতিমতো অসম্ভব। নিষেধাজ্ঞার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে চীন তাদের কতটুকু সাহায্য করতে পারবে বা করলেও সেই সাহায্য রাশিয়ার মতো দেশের জন্য যথেষ্ট কিনা সে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়।
ইউক্রেন সংকট দীর্ঘায়িত হলে সেটি প্রযুক্তি খাতে রাশিয়ার জন্য তীব্র মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। এই সেক্টরের চলমান এবং সম্ভাব্য সংকটের কথা মাথায় রেখে এর উন্নতিকল্পে রুশ প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন সম্প্রতি অর্থ সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছেন। আইটি প্রতিষ্ঠানগুলোর ট্যাক্স লঘুকরণ এবং তাদের জন্য লোন সুবিধাও এতে রাখা হয়েছে। প্রকল্পটি এই সংকট কাটাতে রুশদের কতটুকু সাহায্য করবে বা আদৌ করবে কি না, সেটির উত্তর সময়ের হাতে তোলা রইল।
তথ্যসূত্র:
বিবিসি, ব্লুমবার্গ, নিউইয়র্ক টাইমস, গার্ডিয়ান, পেস্ট ম্যাগাজিন, রয়টার্স, ভাইস, ইনভেস্টমেন্ট মনিটর, ভয়েস অব আমেরিকা, স্ট্যাটিস্টা, মস্কো টাইমস, ওয়্যার্ড।
Comments