৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সম্মান রক্ষা’র ঢাকা-টরেন্টো ফ্লাইট
প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করেই আগামীকাল থেকে বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা-টরন্টো-ঢাকা রুটে প্রথম ফ্লাইট পরিচালনা করতে যাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ফ্লাইটটিকে একটি 'পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক' ফ্লাইট হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।
বিমান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রুটে নিয়মিত ফ্লাইট শুরু করতে ২ মাসেরও বেশি সময় লাগতে পারে। তবে বিভিন্ন মহল এটিকে একটি 'বিতর্কিত সিদ্ধান্ত' হিসেবে দেখছে। জনগণের ৪ কোটি টাকা খরচ করে পরীক্ষামূলক ফ্লাইট পরিচালনা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তারা।
রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বিমানের কর্পোরেট পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক মাহবুব জাহান খান এ তথ্য জানান।
বাংলাদেশ থেকে কানাডায় সরাসরি ফ্লাইট উদ্বোধনের জন্য ঢাকায় কানাডিয়ান হাইকমিশন এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
এখানে উল্লেখ্য যে, পরীক্ষামূলক ফ্লাইটে ১০০ জন যাত্রীর মধ্যে মাত্র ৩৬ জন সাধারণ যাত্রী রয়েছেন। মাহবুব জাহান খান জানান, বাকিরা সরকারি কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্য। জেনারেল সেলস এজেন্ট নিয়োগ ও ট্রান্সপোর্ট কানাডা সিভিল এভিয়েশন (টিসিসিএ) এবং অন্যান্য সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে পরামর্শের জন্য ফ্লাইটটি কমপক্ষে ৫৫ জন সরকারি কর্মকর্তার একটি প্রতিনিধিদলকে কানাডায় নিয়ে যাবে। প্রতিনিধি দলে বিমানের কর্মকর্তারা, বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) রয়েছেন। বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী এম মাহবুব আলীসহ একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার পরিবারের সদস্যরাও প্রতিনিধি দলে রয়েছেন।
ফ্লাইটটি আজ, ২৬ মার্চ রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ছাড়বে। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে, রাশিয়ান এয়ার স্পেস এড়াতে অতিরিক্ত দুই ঘণ্টা ফ্লাই টাইম প্রয়োজন হবে, অর্থাৎ টরন্টো পৌঁছাতে প্রায় ১৮ ঘন্টা সময় লাগবে।
ফিরতি ফ্লাইটে এখন পর্যন্ত সাধারণ যাত্রীর সংখ্যা ১৯ জন।
সংবাদ সম্মেলনে বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, বিমানের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি ছাড়া এমন ফ্লাইট চালুর অভিযোগের বিষয়ে। জবাবে তিনি বলেছিলেন যে, এই জনপ্রিয় গন্তব্যে ফ্লাইট চালু করা তাদের দীর্ঘ লালিত স্বপ্ন ছিল, এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করাও একটি সম্মান রক্ষার বিষয়।
তিনি বলেন, 'উদ্বোধনের এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে আমরা ২৬শে মার্চ দেশের স্বাধীনতা দিবসে ফ্লাইটটি উদ্বোধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
ফ্লাইটে মোট সরকারি কর্মকর্তার সংখ্যা এবং কেন এত কর্মকর্তাকে জনগণের অর্থে কানাডায় নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে মন্ত্রী এর সরাসরি কোনো উত্তর দেননি।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কানাডার হাইকমিশনার ডা. লিলি নিকোলস বলেন, 'ঢাকা ও টরন্টোর মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট ক্রমবর্ধমান ব্যবসা এবং দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের জনগণের মধ্যে সংযোগ প্রসারিত করবে।'
বাংলাদেশ হাইকমিশন, অটোয়ার মতে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ছিল ২.৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে বাংলাদেশ কানাডায় ৪৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। অন্যদিকে, একই সময়ে বাংলাদেশ ২৩১.২৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।
কানাডায় বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করছেন, যেখানে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী সেখানকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছেন।
Comments