১৭ মাসের মধ্যে ১৩ দফা দাম বাড়ল জেট ফুয়েলের
বাংলাদেশে জেট ফুয়েলের দাম গত সপ্তাহ থেকে আবারও বাড়তে শুরু করেছে। এ নিয়ে ১৭ মাসের মধ্যে ১৩ দফা দাম বৃদ্ধি পেল জেট ফুয়েলের। এমন সময়ে জেট ফুয়েলের দাম বাড়তে শুরু করেছে যখন ধুকতে থাকা বিমান শিল্প আবারও স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশি উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো কম দামে জেট ফুয়েল পাওয়ায় স্থানীয় উড়োজাহাজ শিল্পকে বিশ্ব বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি জেট ফুয়েলের দাম লিটারপ্রতি ১৩ টাকা বাড়ানোর পর বর্তমানে দাম দাঁড়িয়েছে লিটারপ্রতি ১০০ টাকা।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে জেট ফুয়েলের দাম লিটারপ্রতি ৪৮ টাকা ছিল। একটি উড়োজাহাজ পরিচালন ব্যয়ের ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত জেট ফুয়েলের ওপর নির্ভর করে।
বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, জেট ফুয়েলের আন্তর্জাতিক মূল্য প্রতি লিটারে ১.০২ ডলার।
এভিয়েশন অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব মফিজুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধির ফলে টিকিট প্রতি ভাড়া প্রায় ৩০০ টাকা বাড়ানো হবে।
তিনি বলেন, ফলে আকাশপথে ভ্রমণকারীর সংখ্যা কমবে। যা দেশের উড়োজাহাজ শিল্পে গুরুতর প্রভাব ফেলবে।
গত বছরের জানুয়ারিতে অভ্যন্তরীণ রুটে সবচেয়ে কম উড়োজাহাজ ভাড়া ছিল ৩ হাজার ২০০ টাকা। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৪ হাজার টাকা। গত ফেব্রুয়ারিতে জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধির কারণে ন্যূনতম ভাড়া অন্তত ১৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছে বলে উড়োজাহাজ পরিবহন সূত্রের খবর।
রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্টসের (বিএআইআরএ) নেতারা অভিযোগ করেন, বিপিসি প্রায়ই কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া অন্যান্য দেশের কথা উল্লেখ করে জেট ফুয়েলের দাম বাড়ায়।
তারা বলেন, বিভিন্ন গন্তব্যে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অযৌক্তিকভাবে বেশি বিমান ভাড়ার কারণে অভিবাসী শ্রমিকরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।
রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদের সভাপতি টিপু সুলতান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, জেট ফুয়েলের দাম বাড়াতে সরকারের সর্বশেষ সিন্ধান্ত প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য অতিরিক্ত ভোগান্তির কারণ হবে। কারণ উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো এখন ভাড়া বাড়ানোর সুযোগ পাবে।
মফিজুর রহমান বলেন, একটি উড়োজাহাজের পরিচালন ব্যয়ের ৪০ থেকে ৪৬ শতাংশ জ্বালানিতে ব্যয় হয়। ফলে, অনিবার্যভাবে উড়োজাহাজ ভ্রমণ আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে এবং দিন শেষে যাত্রীদের এই বোঝা বহন করতে হবে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, আমাদের প্রতিবেশী ও অন্যান্য বিভিন্ন দেশের তুলনায় বাংলাদেশে জেট ফুয়েলের দাম বেশি।
তিনি বলেন, হাব বিমানবন্দরের কারণে আমাদের এয়ারলাইন্সগুলোকে বাংলাদেশ থেকে বেশি দামে জেট ফুয়েল কিনতে হবে। কিন্তু, যেসব বিদেশি এয়ারলাইন্স ঢাকায় আসা-যাওয়া করছে, তারা তাদের দেশ থেকে কম দামে জেট ফুয়েল কিনবে। এর ফলে আমরা বৈশ্বিক প্রতিযোগীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারব না।
বিপিসির এক শীর্ষ কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিপিসির সংশ্লিষ্ট কমিটি উচ্চ আমদানি খরচের কারণে জেট ফুয়েলের দাম বাড়িয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি আরও বলেন, কলকাতার বাজারের তুলনায় বাংলাদেশে জেট ফুয়েলের দাম কম।
Comments