মালামাল পরিবহন করে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের ক্ষতি, বিমানকে সংসদীয় কমিটির ভর্ৎসনা

ছবি: স্টার ফাইল ফটো

লাভের আশায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজে ১ বছরেরও বেশি সময় ধরে মালামাল পরিবহন করে উড়োজাহাজের ভেতরের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত করায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভর্ৎসনা করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

বিমান সূত্র জানায়, ২০২০ সালের মার্চ থেকে অন্তত ৮টি উড়োজাহাজে মালামাল পরিবহণ করা হচ্ছিল। এতে উড়োজাহাজগুলোর আসন, হাতল, বিনোদন ব্যবস্থা, অভ্যন্তরীণ সজ্জা, টয়লেট, মেঝে, লাগেজ রাখার ওভারহেড কেবিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এর মধ্যে আছে নতুন ৪টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর, ২টি বোয়িং ৭৩৭ ও দুটি ভাড়া করা উড়োজাহাজ।

রোববার সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এসব ক্ষতির কথা উল্লেখ করে বলা হয়, সামান্য কয়েক কোটি টাকা লাভের আশায় বিমান ওই উড়োজাহাজগুলোর ব্যাপক ক্ষতি করেছে।

এসব ক্ষতির মোট মূল্যমান প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বলে জানা গেছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালকে কমিটির পরবর্তী বৈঠকে এসব ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরতে বলেছে কমিটি। আগামী ১ মাসের মধ্যে পরবর্তী বৈঠক হওয়ার কথা।

বৈঠকের পর কমিটির একজন সদস্য দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিমানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা করোনা মহামারির সময় যাত্রীবাহী ফ্লাইটকে কার্গো হিসেবে ব্যবহার করেছে। কিন্তু সে সময় উড়োজাহাজের মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও অভ্যন্তরীণ জিনিসপত্র রক্ষায় তারা কেন সতর্ক ছিলেন না, কমিটি তা জানতে চেয়েছে।'

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটির এই সদস্য বলেন, 'এটা বুঝতে পেরেছি যে বিশ্বব্যাপী মহামারি চলাকালে যখন সব যাত্রীবাহী ফ্লাইট বন্ধ ছিল, তখন বিমান উড়োজাহাজগুলোকে কার্গো হিসেবে ব্যবহার করে কিছু আয় করতে চেয়েছিল।'

'কিন্তু এটুকু লাভের আশায় উড়োজাহাজের আসন ও ভেতরের অনেক সরঞ্জামের ক্ষতি করবেন, এটা গ্রহণ করা যায় না,' বলেন তিনি।

বৈঠকে উপস্থিত আরেক সংসদ সদস্য বলেন, 'গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে এভাবে উড়োজাহাজগুলোর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এর সঙ্গে কোনো সিন্ডিকেট জড়িত কি না, আমরা তাও জানতে চেয়েছি।'

কমিটির পরবর্তী বৈঠকে বিমানের প্রধান নির্বাহীকে এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

বিষয়টি তদন্তে একটি অভ্যন্তরীণ কমিটি গঠন করা হয়েছে বিমান সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছে।

মিশর থেকে উড়োজাহাজ ভাড়ায় ক্ষতি ২২০০ কোটি টাকা: সংসদীয় কমিটি

মিশর থেকে ২০১৪ সালে 'অস্বচ্ছ চুক্তির' মাধ্যমে ২টি উড়োজাহাজ ভাড়া করায় বিমানের প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি জানিয়েছে।

একজন সংসদ সদস্য দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আওয়ামী লীগের প্রয়াত সংসদ সদস্য আসলামুল হকের নেতৃত্বে সংসদীয় কমিটির একটি উপকমিটির অনুসন্ধানে বিষয়টি প্রকাশ পায়। অনুসন্ধানে তারা বিমানের তৎকালীন শীর্ষ কর্মকর্তা এবং এই ভাড়া প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করেন।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে সংসদীয় কমিটি বিমানের সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) জামাল উদ্দিন আহমেদ, তৎকালীন এমডি মোসাদ্দিক আহমেদসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে তলব করে। 

সাবেক চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদ উড়োজাহাজ দুটির ভাড়ার বিষয়ে কমিটির সামনে বক্তব্য দেন। 

বৈঠক সূত্র জানায়, উপকমিটির প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা এবং বিমানের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাদের বক্তব্য শোনার পর নিয়ে আলোচনার পর কমিটি তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে তার সব নথিপত্র পাঠায়।

ইজিপ্ট এয়ার থেকে ৫ বছরের চুক্তিতে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ ২টি লিজ নিয়েছিল বিমান। এর একটি বিমানের বহরে যুক্ত হয় ২০১৪ সালের মার্চে এবং অন্যটি একই বছরের মে মাসে।

এক বছরের কম সময় ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লাইট পরিচালনার পর একটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন।

দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয় বাকি ইঞ্জিনটিও। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে আবারও ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। পরে ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়।

সেই ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। তবে কোনো সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। সে কারণে ইজিপ্ট এয়ার এবং মেরামতকারী কোম্পানি- উভয়কেই অর্থ দিতে হয় বিমানকে।

Comments

The Daily Star  | English

Shammo murder: DMP chief pledges to end probe within a week

Says case to be sent to a special tribunal after investigation

59m ago