পরিত্যক্ত উড়োজাহাজ বিক্রির সিদ্ধান্তে ইউনাইটেড এয়ারের উদ্বেগ
২০১৬ সাল থেকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের আটটি উড়োজাহাজ বিক্রির সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়েছে সংস্থাটি।
গত ১৪ জুলাই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে লেখা এক চিঠিতে ইউনাইটেড এয়ারের নতুন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান কাজী ওয়াহিদুল আলম এ ব্যাপারে দুপক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে একটা ‘গ্রহণযোগ্য’ সমাধানে আসার ব্যাপারে অনুরোধ জানান।
বেবিচক সম্প্রতি ঢাকা বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ অংশে দুই থেকে আট বছর ধরে পড়ে থাকা চারটি বেসরকারি সংস্থার ১২টি উড়োজাহাজ বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
পড়ে থাকা ১২টি উড়োজাহাজের মধ্যে আটটি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের। এ ছাড়া রিজেন্ট এয়ারওয়েজের দুটি এবং জিএমজি ও অ্যাভিনা এয়ারলাইন্সের একটি করে উড়োজাহাজ আছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক ও গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ-উল আহসান জানান, বর্তমানে এই চারটি বেসরকারি সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ আছে।
বিমানবন্দরের সূত্রগুলো বলছে, পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলোর কারণে কার্গো ভিলেজ অংশটি অনেকটা ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। যা অনেকখানি জায়গা দখল করে রেখেছে। পাশাপাশি এর কারণে বিমানবন্দরের মূল পার্কিং জোনে মালামাল ওঠানো-নামানোর কাজে বিঘ্ন ঘটছে।
তৌহিদ-উল আহসান জানান, জিএমজি এয়ারওয়েজ, জিএমজি ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কাছে বেবিচকের প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা পাওনা আছে। তিনি বলেন, ‘পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো সরিয়ে ফেললে সেখানে অন্তত চার থেকে পাঁচটি কার্গো বিমান রাখার জায়গা হবে।’
এ ছাড়া মোট বকেয়ার মধ্যে বেবিচক ইউনাইটেড এয়ারের কাছে প্রায় ১৯০ কোটি টাকা পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উড়োজাহাজগুলো বিক্রির জন্য নিলাম প্রক্রিয়া ঠিক করতে এর মধ্যে বেবিচক তৌহিদ-উল আহসানকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করেছে।
এর আগে বেবিচকের চেয়ারম্যান ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান এই দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছিলেন যে, পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো বিমানবন্দর এলাকা থেকে সরিয়ে নিতে ও বকেয়া পাওনা পরিশোধের তাগিদ দিয়ে বেবিচক সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে কয়েক বার নোটিশ দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমরা তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাইনি। যে কারণে আমরা শেষ পর্যন্ত উড়োজাহাজগুলো বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই তাদের ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়। ২০০৫ সালে অনুমোদন পাওয়ার পর পরের বছরের ১০ জুলাই সংস্থাটি তাদের কার্যক্রম শুরু করে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কার্যক্রম পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেয়।
এর অংশ হিসেবে সংস্থাটির পুরনো পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে বিমান বিশেষজ্ঞ ও সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলমকে চেয়ারম্যান করে নতুন পর্ষদ গঠন করে বিএসইসি।
এতে ইউনাইটেড এয়ারের আগের পরিচালনা পর্ষদের প্রধান তাসবিরুল আলম চৌধুরী বাদ পড়েন। সংস্থাটি ২০১০ সাল থেকে বিএসইসির তালিকাভুক্ত। যা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রথম কোনো বেসরকারি বিমান সংস্থা।
বেবিচকের কাছে পাঠানো চিঠিতে ইউনাইটেড এয়ার প্রযুক্তিগত নিরীক্ষা ও তার ভিত্তিতে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের জন্য সংস্থাটির কর্মকর্তা ও কারিগরি দলকে উড়োজাহাজগুলো পরিদর্শনের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানায়। একই সঙ্গে সংস্থাটি তাদের উড়োজাহাজগুলো দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে।
চিঠিতে বলা হয়, ‘আমরা জেনেছি যে উড়োজাহাজগুলোর ৫০ শতাংশ উড্ডয়ন সক্ষমতা আছে। তাই প্রয়োজনীয় মেরামতের পর সেগুলো আবার উড়তে পারবে বলে আমরা আশাবাদী।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘এই সংস্থায় মালিকদের পাশাপাশি দেড় লাখ শেয়ারহোল্ডার ও বিভিন্ন ব্যাংকের বিনিয়োগ আছে। উড়োজাহাজগুলো নিলামের সিদ্ধান্তে তারাও খুব উদ্বিগ্ন।’
প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ।
Comments