অস্ট্রেলিয়ায় ৫ লাখ শ্রমিক ঘাটতি, সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় প্রায় ১০ লাখ আবেদন

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের মতো অস্ট্রেলিয়াতেও দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল ঘুরে ফিরে ক্ষমতায় আসে। লিবারেল পার্টি 'অভিবাসনবিরোধী' এবং কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে দেশটির অভিবাসীরা মনে করেন তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক দল লেবার পার্টি। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী অধিকাংশ বাংলাদেশি সমর্থন করেন লেবার পার্টিকে। নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে দুজন বাংলাদেশি আছেন লেবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর। 

অস্ট্রেলিয়ায় এ বছরের আদমশুমারিতে দেখা গেছে, প্রায় অর্ধেক অস্ট্রেলিয়ানের অভিবাবকের জন্ম অস্ট্রেলিয়ার বাইরে। দেশটির শ্রমশক্তি সব সময়ই বিদেশমুখি। টানা ১১ বছর কট্টরপন্থী লিবারেল সরকার ক্ষমতায় থাকার ফলে অভিবাসনের গতি মন্থর হয়ে পড়েছে।   

গত মে মাসে ক্ষমতা পাওয়া নতুন সরকার একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করে জানিয়েছে যে, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৯ লাখ ৬১ হাজার ১৬টি ভিসা আবেদন বর্তমানে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে। যার মধ্যে ৫ লাখ ৬০ হাজার ১৮৭টি অস্ট্রেলিয়ার বাইরে থেকে জমা দেওয়া। বিগত সরকারের ধীর গতির অভিবাসন নীতিই এই 'ব্যাকলগ' তৈরি করেছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লেয়ার ও'নিল এই ব্যাকলগ সমস্যাটি মোকাবিলা করার জন্য একটি রূপরেখা দিয়েছেন। সরকার কীভাবে এই জটিল প্রক্রিয়া সমাধানের চেষ্টা করছে তা তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। 

প্রায় ১ মিলিয়ন ভিসা আবেদনের মধ্যে দক্ষ শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দক্ষ কর্মীদের আবেদনগুলোর মধ্য থেকে প্রথমে ৬০ হাজার স্থায়ী ভিসার আবেদনকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করা হবে। প্রক্রিয়াগত বিলম্বের কারণে শ্রমশক্তির ঘাটতির প্রতি ফেডারেল সরকারের দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত।'

তিনি এসবিএস রেডিওকে জানান, পরিবর্তনটি এমন লোকদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে, যারা অস্ট্রেলিয়ার বাইরে থেকে কাজ করতে সেখানে যেতে চায় এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেই আবেদনগুলোর সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, যখন আমরা একটি ব্যাকলগ সম্পর্কে কথা বলছি যা এক মিলিয়নের কাছাকাছি তখন আমরা কাজ করছি 'সমুদ্রের একটি ড্রপ' নিয়ে। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লেয়ার ও'নিল নিশ্চিত করেছেন যে তার পরিকল্পনা স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং বয়স্কদের যত্নের ওপর। এইসব বিষয়ে দক্ষ আবেদনকারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

এর মধ্যে স্থায়ী ভিসার জন্য ৫৭ হাজার ৯০৬ জন দক্ষ কর্মী রয়েছেন এবং অস্থায়ী ভিসা আবেদনকারী রয়েছেন ১৩ হাজার ৮০৬ জন।

সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আনা বাউচার এসবিএস নিউজকে বলেন, 'যখন আমরা ১০ লাখের কাছাকাছি একটি ব্যাকলগের কথা বলছি তখন আমাদের ৫ লাখ শ্রমিকের প্রয়োজন।' 

বিগত মরিসন সরকারের অধীনে স্থায়ী অভিবাসন প্রোগ্রাম প্রতি বছর ১ লাখ ৬০ হাজারে সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমান সরকার এটিকে ২ লাখে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, 'আমাদের অভিবাসন কর্মসূচি হলো একটি পবিত্র জাতি গঠনের অনুশীলন। খুব সাবধানতার সঙ্গে এটি ডিজাইন করতে হবে।'

'নৌকায় চড়বেন না এবং মনে করবেন না আপনি অস্ট্রেলিয়ায় একটি জীবন গড়তে সক্ষম হবেন। আপনাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে', তিনি যোগ করেন। 

কোষাধ্যক্ষ জিম চালমারস বলেছেন, ভিসা আবেদনকারীদের দীর্ঘ অপেক্ষা আমাদের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এই দেশে একটি বৃহত্তর, আরও উৎপাদনশীল, উন্নততর দক্ষ কর্মীবাহিনী গড়ে তোলার জন্য আমাদের যা করতে হবে তার জন্য অভিবাসনের কোনো বিকল্প নেই।'

 

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

 

Comments

The Daily Star  | English

Drug smuggling via air, land routes on the rise

This grim picture emerges as Bangladesh, like other countries around the world, observes the International Day Against Drug Abuse and Illicit Trafficking today.

12h ago