শ্রমিক নিয়োগে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার সমঝোতা সই

ছবি: সংগৃহীত

শ্রমিক নিয়োগে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে শ্রম বাজার সংক্রান্ত সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) সই হয়েছে।

আজ রোববার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে চুক্তি সই হয়। দেশটির পক্ষে মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান এবং বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ চুক্তিপত্রে সই করেন।

এ সময় মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার, শ্রম কাউন্সিলর মো. জহিরুল ইসলাম, শ্রম কাউন্সিলর (দ্বিতীয়) মো. হেদায়েতুল ইসলাম মন্ডলসহ দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিন স্থানীয় সময় ভোর ৫টায় মালয়েশিয়ায় পৌঁছান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ।

শ্রম শোষণের পাশাপাশি কর্মীপ্রতি ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত উচ্চ অভিবাসন ব্যয়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মালয়েশিয়ার তৎকালীন সরকার ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেয়।

এর আগে বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের সব এজেন্টের জন্য বাজার উন্মুক্ত রাখছে না। এ বিষয়ক উদ্বেগগুলো ন্যায্য। এ ছাড়া খসড়া সমঝোতা স্মারকে বলা হয়েছে, নৈতিক নিয়োগের মডেল অনুসারে কর্মীরা নিয়োগদাতাদের পুরো অর্থ প্রদানের পরিবর্তে অভিবাসন ব্যয় পরিশোধ করবেন।

তবে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছেন, 'সিন্ডিকেট হতে পারে এমন কোনো ব্যবস্থা আমরা রাখছি না।'

এর আগে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, একটি স্বার্থান্বেষী মহল পুরো প্রক্রিয়াটিকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে।

অভিবাসন ব্যয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর জন্য খরচের এমন একটি 'স্তর' নির্ধারণ করা, যা 'দরিদ্র চাকরিপ্রার্থীরা বহন করতে পারবেন। এটা অনেক কম হবে, যা নির্ভর করবে মালয়েশিয়ার সঙ্গে সফলভাবে সমঝোতা স্মারক সইয়ের উপর।

মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুসারে সেখানে বৃক্ষরোপণ, কৃষি, উৎপাদন, সেবাখাত, খনি ও খনন এবং নির্মাণখাতসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশি কর্মীদের কাজের সুযোগ থাকবে।

জানতে চাইলে কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, 'অভিবাসন খরচ আপনি কীভাবে কমাবেন, যখন চাকরিপ্রার্থীরা নিজেরাই সেটি দিতে রাজি থাকেন?'

ঢাকা ও কুয়ালালামপুরের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কর্মী নিয়োগ ব্যবস্থার পেছনে আছে ২ দেশেরই একটি শক্তিশালী লবি। এটি চায় মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের জন্য মাত্র ২৫টি বাংলাদেশি এজেন্সি অনুমতি পাক। তাদের সহযোগিতা করার জন্য অন্য আড়াই শ রিক্রুটিং এজেন্ট থাকতে পারে।

এটি প্রায় একই ধরনের ঘটনা, ২০১৬ সালে যা জি টু জি প্লাস (সরকার থেকে সরকার) প্রক্রিয়ায় ঘটেছিল। যখন মালয়েশিয়া সরকার কর্মী নিয়োগের জন্য মাত্র ১০ জন বাংলাদেশি এজেন্ট নির্বাচন করে। যদিও বাংলাদেশ সরকার ৭৪৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির নাম প্রস্তাব করেছিল।

সিন্ডিকেটে সদস্যরা হলেন: ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেডের নূর আলী, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের রুহুল আমিন, প্রান্তিক ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজম লিমিটেডের গোলাম মোস্তফা, রাব্বি ইন্টারন্যাশনালের মোহাম্মদ বশির, আল ইসলাম ওভারসিজের জয়নাল আবেদীন জাফর, আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের রুহুল আমিন, ক্যারিয়ার ওভারসিজ কনসালট্যান্টস লিমিটেডের এ এস এম খায়রুল আমিন, আইএসএমটি হিউম্যান রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের তুহিন সিদ্দিকী অমি, প্যাসেজ অ্যাসোসিয়েটসের আরিফ আলম এবং শানজারি ইন্টারন্যাশনালের শেখ আবদুল্লাহ।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউনিক ইস্টার্নের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূর আলী স্বীকার করেন যে, অভিবাসন খরচটা বেশিই। তবে জানান, এর ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।

২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, 'চাকরিপ্রার্থীরা সরাসরি আমাদের কাছে আসে না। তারা দালালদের কাছে যায়…এর ৬ থেকে ৭টি স্তর আছে। তাই আমরা খরচ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।'

জনশক্তি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) অধুনালুপ্ত কমিটির মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমানের ভাষ্য, মালয়েশিয়া সরকার যদি বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি বাছাই করে, তাহলে তা উদ্বেগের বিষয়।

বাংলাদেশ সরকারকে এই ধরনের প্রচেষ্টা দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, 'এটি এই খাতকে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মতোই আরেকটি সিন্ডিকেশন ও মনোপলির দিকে নিয়ে যাবে।
 
নোমান জানান, অন্য কোনো দেশ এভাবে সিন্ডিকেটভুক্ত এজেন্টের অধীনে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠায় না।

মালয়েশিয়ার একজন স্বাধীন শ্রম অভিবাসন বিষয়ক গবেষক অ্যান্ডি হল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বেশ কয়েকটি মালয়েশিয়ান কোম্পানি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিল। কারণ কোম্পানিগুলোর জোরপূর্বক শ্রম এবং অভিবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকে উচ্চ ফি নেওয়ার রেকর্ড ছিল।

বর্তমানে নেপালে অবস্থানরত হল আরও বলেন, 'এই কোম্পানিগুলো বিদেশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে পুরো খরচ বহনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। শ্রমিকদের ফি দিতে হলে তারা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করবে না।'

হলের ভাষ্য, বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইনের ক্ষেত্রে পরিবেশগত ও লেবার কমপ্লায়েন্সের বিষয়গুলো গুরুতর তদন্তের আওতায় আসছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে নৈতিক নিয়োগ মডেলের অধীনে কাতারে কর্মী পাঠানোর উদাহরণও আছে।

এই গবেষকের প্রশ্ন, 'মালয়েশিয়া সরকার তাহলে কেন এটি অনুসরণ করবে না এবং বিষয়টিকে একটি উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনার আওতায় আনবে না?'

অনেক অভিবাসী কর্মী অভিবাসনের জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করে আরও দরিদ্র ও শোষিত হন জানিয়ে হল বলেন, 'বাংলাদেশ নিশ্চয়ই চায় না যে তার জনগণ আরও দরিদ্র হোক। তাই তার উচিত সে অনুসারে আলোচনা করা।'

Comments

The Daily Star  | English

1,500 dead, nearly 20,000 injured in July uprising: Yunus

He announced plans to demand the extradition of deposed dictator Sheikh Hasina from India

1h ago