২০০১-২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সুন্দরবনে অন্তত ৪৬ বাঘ মারা গেছে
বাঘ রয়েছে এমন ১৩ দেশে আজ শুক্রবার পালিত হচ্ছে 'বিশ্ব বাঘ দিবস'। বাঘের অন্যতম আবাসস্থল বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা বাগেরহাটে দিবসটি উপলক্ষে নানান কর্মসূচির আয়োজন করেছে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ।
বন বিভাগ আশা করছে, সুন্দরবনে এ বছর বাঘের সংখ্যা বাড়বে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের হিসাব মতে, ২০০৪ সালের জরিপ অনুসারে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৪৪০টি। ২০১৮ সালের জরিপে দেখা যায়, তা কমে হয়েছে ১১৪টি। ২০০১ থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সুন্দরবনে বাঘ মারা গেছে কমপক্ষে ৪৬টি। এর মধ্যে প্রাকৃতিক কারণে মরেছে ৮ বাঘ।
বিভিন্ন সময় শিকারিদের হাতে বাঘ মরেছে ১৩টি। লোকালয়ে প্রবেশ করায় স্থানীয়দের হাতে মারা গেছে ৫ বাঘ। এ ছাড়া, ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরে মারা গেছে এক বাঘ।
বিভিন্ন সময় দুর্বৃ্ত্তদের হাতে মারা যাওয়া ১৯টি বাঘের চামড়া উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। বন বিভাগ দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, গত জরিপ থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৮টি বাঘ মরেছে। একই সময়ে কয়টি বাঘ জন্ম নিয়েছে সেই তথ্য তাদের কাছে নেই। সে অনুযায়ী এখন সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১০৬।
এরপরও সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়বে বলে আশাবাদী বন বিভাগ ও সুন্দরবন সংশ্লিষ্টরা। সুন্দরবনে বাঘের আনাগোনা বেড়ে যাওয়া ও বাঘ দেখতে পাওয়াকেই কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তারা।
গত ১২ মার্চ সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের চিতা কটকা খালে একসঙ্গে ৪ বাঘ দেখতে পান সুন্দরবনে ঘুরতে আশা পর্যটকরা। তার আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি, বনরক্ষীরা কটকায় একসঙ্গে ৩ বাঘ দেখেন।
শরণখোলা ও মংলায় বাঘের দেখা পাওয়ার সংবাদও রয়েছে বন বিভাগের কাছে।
শরণখোলার ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের (ভিটিআরটি) লিডার আলম হাওলাদার ডেইলি স্টারকে জানান, ২০২১-২০২২ সালে অনেকবার বাঘ শরণখোলা এলাকায় ঢুকেছে।
'এতবার লোকালয়ে বাঘ ঢোকার কথা আগে কখনো শোনা যায়নি' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরাও সুন্দরবনে বেশ কয়েকবার বাঘ দেখেছি। কটকায় বাঘের সঙ্গে বাচ্চাও দেখা গেছে।'
একই উপজেলার বাসিন্দা বেল্লাল শেখ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সম্প্রতি, শরণখোলা রেঞ্জের চাপড়াখালী, সুপতি ও আলী বান্দাসহ কয়েকটি এলাকায় বাচ্চাসহ বাঘ দেখেছি, গর্জনও শুনেছি। আগে এত কম সময়ে এতবার বাঘ দেখিনি।'
পূর্ব সুন্দরবন বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন ডেইলি স্টারকে জানান, সুন্দরবনে বাঘ রক্ষায় বন বিভাগ দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে সুন্দরবনে বনরক্ষীদের টহল বাড়ানো হয়েছেন।
তিনি বলেন, 'বনে চোরাশিকারিদের আনাগোনা অনেক কমে গেছে। করোনার কারণেও অনেকদিন সুন্দরবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।'
'এর ফলে সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে উঠেছে। টহল টিম বেশ কয়েকবার বাঘ দেখেছে। আমাদের জনসচেতনতামূলক কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রতি বছর ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে ঢোকা নিষেধ থাকায় বন্যপ্রাণীর আশানুরূপ বিকাশ ঘটে।'
নানা কারণে এবার সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করেন এই বন কর্মকর্তা।
Comments