বায়ুদূষণ এবং আমাদের ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যঝুঁকি!

ঢাকার বায়ু দূষণ
স্টার ফাইল ফটো

কিছুদিন আগে হঠাৎই নিউজে দেখলাম ইরানের কিছু শহরের স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ভাবলাম হয়তো আবারো করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে পারে সেজন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিউজটি পুরোটা পড়ে বুঝলাম এ ছুটি সে কারণে ছিল না। শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সবার স্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও প্রতিদিন বায়ুর অবস্থা জানিয়ে এবং দূষণ বিপজ্জনক হলে সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রচারণা চালানো হয়। শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।

অন্যদিকে গত ৩ বছরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা আইকিউএয়ার'র তালিকায় বিভিন্ন সময় পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত শহরের দিক থেকে শীর্ষ অবস্থানে ছিল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। কিন্তু, এত অস্বাস্থ্যকর বায়ুর পরও কখনো আমরা দেখিনি এ বিষয় নিয়ে ছুটি ঘোষণা করতে অথবা এ বিষয়ে যারা বিপজ্জনক সারিতে আছেন তাদের সচেতন করতে।

বাতাসের গুণমানের সূচককে একিউআই বলা হয়, যা প্রতিদিনের বাতাসের অবস্থা নির্ধারণে ব্যবহৃত হয় এবং নির্ণয় করে আপনার চারপাশের বাতাস কতটা পরিষ্কার বা দূষিত এবং এই দূষণের মাত্রা স্বাস্থ্যের ওপর কী প্রভাব ফেলতে পারে। বাতাসের গুণমানের সূচকটি কণাযুক্ত-বস্তুর-পরিমাপ (পিএম ২.৫ এবং পিএম ১০), ওজোন (O3), নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (NO2), সালফার ডাইঅক্সাইড (SO2) ও কার্বন মনোক্সাইড (CO) নির্গমনের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়েছে।

মূলত বাতাসে অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম-২.৫ এর পরিমাণ পরিমাপ করে বায়ুর মান নির্ধারণ করা হয়। পিএম-২.৫ কণা পিএম ১০ কণার চেয়ে বেশি বিপজ্জনক, এ কারণে যে এটি দীর্ঘ সময় (দিন বা সপ্তাহ) বাতাসে থাকে এবং বাতাসের মাধ্যমে অনেক দূর ছড়িয়ে যেতে পারে। আর সূক্ষ্ম কণা হওয়ার ফলে ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে এবং দ্রুত ফুসফুস আক্রান্ত করে।

একিউআই সূচকে বায়ুর মান, শূন্য থেকে ৫০ থাকলে ওই স্থানের বাতাস স্বাস্থ্যকর। ১০০ থেকে ১৫০ এর মধ্যে থাকলে প্রত্যেকের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়তে পারে, বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারেন।

২০০ থেকে ৩০০–এর মধ্যে থাকা মানে খুবই অস্বাস্থ্যকর। এতে স্বাস্থ্য সতর্কতাসহ জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।

বায়ুর মান ৩০০–র বেশি থাকা মানে ওই স্থানের বায়ু 'বিপজ্জনক' বোঝায়।

বায়ুদূষণ আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর নানাভাবে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। ফুসফুসের নানা রোগ, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, ক্যানসার, লিউকেমিয়া, অটিজম, স্নায়ুজনিত সমস্যা বেড়ে যাওয়া, বুদ্ধিমত্তা কমে যাওয়াসহ অনেক শিশু দূষণের ফলে নানা স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে জন্ম নিচ্ছে।

পিওর আর্থের মতে, বিশ্বব্যাপী অসংক্রামক রোগের প্রধান কারণ দূষণ। অসংক্রামক রোগের মৃত্যুর ৭২ ভাগ এর জন্য দায়ী, যার ১৬ ভাগ দূষণের কারণে ঘটে থাকে।

এছাড়া, কার্ডিওভাসকুলার রোগের ২২ ভাগ, স্ট্রোক ২৫ ভাগ, ফুসফুসের ক্যানসারে ৪০ ভাগ ও ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পুলমানারি ডিজিজ (COPD) ৫৩ ভাগ মৃত্যুর জন্য দায়ী বিষাক্ত দূষণ। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, বায়ুদূষণে প্রতি বছর ৭০ লাখ মানুষ অকালে মারা যায়।

এ অবস্থায় দেশের অন্যান্য সব সমস্যা সমাধানের মতো বায়ুদূষণকেও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ভেবে দ্রুত এ সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের এগিয়ে আসা উচিত।

এটি যেমন আমাদের বসবাসের জন্য জরুরি তেমনি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতেও অনেকটা সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

কামরুজ্জামান নাবিল, শিক্ষার্থী, ডক্টর অব মেডিসিন (এমডি) ইস্পাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইরান

[email protected]

Comments

The Daily Star  | English

No scope to avoid fundamental reforms: Yunus

Conveys optimism commission will be able to formulate July charter within expected timeframe

6h ago