বাঘ শাবক মৃত্যুর কারণ মাছি!

মায়ের সঙ্গে দুর্জয় ও অবন্তিকা। মাছিবাহিত রোগে গত ২০ নভেম্বর দুর্জয় এবং ২১ নভেম্বর অবন্তিকার মৃত্যু হয়। ছবি: স্টার ফাইল ছবি

মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় মাছির কারণে বাঁচতে পারছে না বাঘ শাবক। গত ৫ বছরে এই চিড়িয়াখানায় জন্ম নেওয়া ৪টি শাবকের সবগুলোই মাছিবাহিত রোগ ট্রাইপেনোসোমায় মারা গেছে।

করোনাকালে গত ২৬ মে জন্ম নেয় ২টি শাবক দুর্জয় ও অবন্তিকা। বাঘ যুগল টগর ও বেলী তাদের বাবা-মা। জন্মের ৬ মাস পর গত ২০ নভেম্বর দুপুর আড়াইটায় দুর্জয় এবং পরের দিন সকাল সাড়ে ৭টায় অবন্তিকার মৃত্যু হয়।

এর আগে ২০১৬ সালে এই চিড়িয়াখানায় জন্ম নেয় বাঘ শাবক টোকিও ও মৈত্রী। জন্মের প্রায় ৬ মাস পর মৈত্রী এবং প্রায় ১০ মাস পর টোকিওর মৃত্যু হয়। সেগুলোও মাছিবাহিত ট্রাইপেনোসোমা রোগে মারা যায়।

পৃথক খাঁচায় বন্দি টগর ও বেলীকে দেখতে উৎসুক দর্শনার্থীদের ভিড়। ১ ডিসেম্বর ২০২১ | স্টার ফাইল ছবি

গত বুধবার সরেজমিনে চিড়িয়াখানায় দেখা যায়, পৃথক খাঁচায় রয়েছে টগর ও বেলী। তাদের দেখতে উৎসুক দর্শনার্থীদের ভিড় চোখে পড়ে।

এ সময়েও বাঘের খাঁচার ভেতরে এবং আশেপাশে প্রচুর মাছি ও মশা দেখা যায়।

জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. আব্দুল লতিফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ১৭ নভেম্বর শাবক দুটির অসুস্থতা আমাদের নজরে আসলে দ্রুত তাদের আলাদা করে ফেলি। শাবক ২টির রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য জরুরিভিত্তিতে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। রক্ত পরীক্ষায় তাদের শরীরে একধরনের মাছিবাহিত পরজীবীর উপস্থিতি ধরা পড়ে।'

তিনি বলেন, 'আমরা সাধ্য মতো চিকিৎসা দিয়েও তাদের বাঁচাতে পারিনি।'

শাবক ২টির উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য কোথাও নেওয়ার প্রয়োজন ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সাধারণত এ ধরনের রোগের চিকিৎসার জন্য অন্য কোথাও নিতে হয় না। আমরা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছিলাম।'

তিনি বলেন, 'ভবিষ্যতে যাতে মাছির কারণে আর কোনো শাবকের মৃত্যু না হয় সে জন্য আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি।'

ট্রাইপেনোসোমা রোগ সম্পর্কে কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই রোগের বাহক "সেটসি ফ্লাই" নামের এক ধরনের মাছি। বাংলাদেশে ট্রাইপেনোসোমা রোগ নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা নেই এবং অনেকে এ রোগ সম্পর্কে তেমন একটা সচেতনও নন।'

তিনি বলেন, 'এই রোগ প্রতিরোধে এর ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ করাই কার্যকর সমাধান। ৩ ভাবে এর ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সেগুলো হলো—ধোঁয়া বা কেরোসিনের মাধ্যমে রিপ্লেন্ট করা, লার্ভি সাইট এবং অ্যাডাল্টি সাইট প্রয়োগ করা।'

'চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের নিজস্ব পেস্ট কন্ট্রোল পদ্ধতি না থাকলে সেখানে বাঘের শাবককে বাঁচানো কঠিন হবে,' তিনি যোগ করেন।

দুর্জয় ও অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

এই কমিটির সদস্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. দেবাশীষ দাশ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি ট্রাইপেনোসোমা রোগে দুর্জয় ও অবন্তিকার মৃত্যু হয়েছে। আমরা এই উপমহাদেশে রোগটির কারণে বেশ কিছু মৃত্যুর ঘটনা জানতে পেরেছি। শাবক ২টিকে বাঁচানোর জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত সময় না পাওয়ায় তাদেরকে অন্য কোথাও নেওয়া সম্ভব হয়নি।'

তিনি জানান, ভবিষ্যতে বাঘ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ওষুধ ক্রয়, বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ আনাসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।

আগামীকাল রোববার এই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে বলেও জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda acquitted in Zia Charitable Trust graft case

The HC scraped the trial court verdict that sentenced Khaleda and two others in the same case.

2h ago