বঙ্গোপসাগরের চর বিজয়ে পাখি নিধন, ব্যবস্থার আশ্বাস প্রশাসনের
পটুয়াখালীর কুয়াকাটার অদূরে বঙ্গোসাগরের জেগে উঠা 'চর বিজয়ে' পাখি নিধনের অভিযোগ উঠেছে।
পর্যটকরা বলছেন, মৌসুমি জেলেরা খাওয়ার জন্য পাখি শিকার করছেন এমনকি শিকার করা পাখি বিক্রিও করছেন।
ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ আহরোণের জন্য শীত মৌসুমে চরটিতে জেলেদের অনেক উপস্থিতি থাকে। অস্থায়ী বাসস্থান তৈরি করে মাছ শিকার ও শুঁটকি তৈরি করেন তারা।
মানুষের বিচরণ কম থাকায় শীতে সেখানে সমাগম ঘটে অতিথি পাখির।
কুয়াকাটা থেকে ভাড়া ট্রলারে বা স্পীড বোটে মৌসুমি পর্যটকরা চরটি ভ্রমণে যান।
পর্যটক আরিফুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সেখানে প্রায় শতাধিক মৌসুমি জেলেকে মাছ শিকার করে শুঁটকি করতে দেখা গেছে। জেলেরা সেখানে আগত দেশি বিদেশি পাখি ধরার জন্য বাঁশের সঙ্গে জাল টাঙ্গিয়ে রাখেন। পাখিরা নিচ দিয়ে ওড়ার সময় ওই জালে আটকা পড়লে তা শিকার করে খাবার হিসেবে ব্যবহার করেন তারা। বেশি পরিমাণে পাখি শিকার করতে পারলে তা বিক্রি করেন। ওই জালে আটকা পড়ে কিছু পাখি মারাও যায়।
তিনি বলেন, 'চর বিজয়ে গিয়ে কয়েকটি দেশি মরা পাখি পড়ে থাকতে দেখেছি। পাখিগুলো আকারে বেশ বড়। জালে আটকা পড়ে মৃত্যু হওয়ায় শিকারিরা সেগুলো চরে ফেলে রেখেছে বলে মনে হয়। পাখি নিধনে কর্তৃপক্ষের আশু ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।'
কুয়াকাটা ট্যুর অপারেট অ্যাসোসিশেনের সভাপতি রুম্মান ইমজিয়াজ তুষার জানান, সাগরের বুক চিড়ে জেগে ওঠা দ্বীপগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করলে দেশের পর্যটনশিল্পে ঘটবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এবং রাজস্ব খাতে যোগ হবে এক নতুন মাত্রা।
তিনি বলেন, 'প্রকৃতিকে নীরবে উপভোগ করতে হয়। কিন্তু সেখানে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার নিয়ে কিছু পর্যটক যান। এতে করে শব্দ দুষণের কারণে সেখানকার পাখিগুলোর স্বাভাবিক বিচরণ বাধাগ্রস্ত হয়। শব্দ দুষণ হয়না এমন জলযানে সেখানে যাতায়াত করা যেতে পারে। পর্যটন কর্তৃপক্ষ একটি বড় আকারের পন্টুন স্থাপন করতে পারেন যাতে পর্যটকরা ওই চরে বিচরণ না করে পন্টুন থেকেই প্রকৃতিকে উপভোগ করতে পারেন।'
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মাদ শহীদুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চরটিতে পাখি নিধনের খবর পেয়েছি এবং খুব শিগগির সেখানে অবৈধ পাখি শিকারি ও মাছ নিধনকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এ বিষয়ে চরে অবস্থান করা জেলেদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
জেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোল্যা এমদাদুল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সেখানে জেলেদের মাছ ধরার কোনো অনুমিত নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চরটি বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এবং সেখানে যাতায়াতে জলযান না থাকায় নজরদারি করা যাচ্ছে না। এ বছর আমরা চরটিতে বনায়নের পরিকল্পনা নিয়েছি যাতে এটি স্থায়ী হতে পারে এবং পাখিরা আশ্রয় নিতে পারে। পাখি নিধনের বিষয়টি জানা নেই তবে খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করা হবে।'
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে চরটির সন্ধান পাওয়া যায়। বিজয়ের মাস সন্ধান পাওয়ায় পর্যটনপ্রেমিরা এটির নাম দিয়েছেন 'চর বিজয়'।
Comments