পারকি সমুদ্র সৈকতে এক্সক্যাভেটরের থাবা, সৈকতের বালু যাচ্ছে স্কুল মাঠে

পারককি সৈকতের পর্যটন এলাকা থেকে এক্সক্যাভেটর দিয়ে বালু ও মাটি তুলে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় পারকি সমুদ্র সৈকত থেকে বালু উত্তোলন করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এক্সক্যাভেটর দিয়ে সৈকতের ঝাউ বাগান থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু ছাড়াও সৈকতের পাশে সরকারি খাস জমি থেকে প্রকাশ্যে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। প্রভাবশালীদের তালিকায় আছেন সরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকার দলীয় নেতা ও ব্যবসায়ী। এ বিষয়ে নীরব স্থানীয় প্রশাসন। 

সম্প্রতি পারকি বিচ এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সৈকতে নামার প্রথম রাস্তাটি যেখানে ঝাউ বাগান এলাকায় এসে মিলেছে, সেখানে খাদ তৈরি হয়েছে। খাদের চারদিকে এক্সক্যাভেটর দিয়ে বালু তোলার চিহ্ন দেখা গেছে।

খাদ তৈরি হওয়ায় সৈকতের সবুজ বেষ্টনীর ঝাউ গাছের নিচ থেকে বালু সরে যেতে শুরু করেছে। বালু সরে গিয়ে ঝাউ গাছগুলো উপড়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সৈকত সংলগ্ন সবুজ বেষ্টনীর মধ্য থেকে বালু তুলে নেওয়া হয়েছে। ড্রোন দিয়ে ধারনকৃত

সৈকত এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ভারি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সৈকত থেকে বালু তুলছে। ট্রাকে করে বালু নিয়ে যাচ্ছে অন্য কোথাও।

জানা যায়, এসব বালু দিয়ে আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জমি ভরাটের কাজ চলছে। স্থানীয় কয়েকজন ঠিকাদার এ কাজ করছেন এবং জনপ্রতিনিধি, সরকার দলীয় নেতা এবং প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা এতে সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে আনোয়ারা পারকি সৈকতকে 'পর্যটন এলাকা' ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগের সাবেক বর্ষীয়ান নেতা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আকতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল এই সৈকতকে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলা।

রাশেদ খান মেনন পর্যটনমন্ত্রী থাকাকালে পারকি সৈকত এলাকা পরিদর্শন করেন। পরবর্তীতে এ এলাকার ৬২৯ দশমিক ৬৬ একর জমি পর্যটন করপোরেশনের নামে গেজেটভুক্ত হয়।

এলাকার একাধিক বাসিন্দার অভিযোগ, সৈকতের বালু উত্তোলনের পর এখন সরকারি খাস জমি থেকে প্রকাশ্যে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। এলাকার প্রভাবশালীরা এ কাজ করছেন।

সৈকত থেকে মাটি তুলে স্কুলের মাঠ ভরাটের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না বলে তারা জানান।

সৈকত থেকে বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে জানতে আনোয়ারার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভির চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা থেকে মাটি নিয়ে স্কুলের মাঠ ভরাট করা হয়েছে। সৈকতের বালু দিয়ে স্কুলের মাঠ ভরাটের বিষয়টি আমার বোধগম্য হচ্ছে না।'

'এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলতে পারবেন,' বলেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়েরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সৈকত থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করেন।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আনোয়ারা হাই স্কুলের মাঠ ভরাটের জন্য মাটি পাচ্ছিলাম না। তাই সৈকত থেকে বালু উত্তোলন করে স্কুলের মাঠ ভরাট করেছি।'

এতে পরিবেশের ক্ষতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করলে তিনি বলেন, 'আপাতদৃষ্টিতে বালু উত্তোলনের জায়গাটিকে খাদ মনে হলেও, জোয়ারের পানি এলে জায়গাটি আবারও বালুতে পূর্ণ হয়ে যাবে।'

এতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না বলে দাবি করেন তিনি।

১নং খতিয়ানভুক্ত সরকারি খাস জমি থেকে মাটি উত্তোলন প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে ইউএনও বলেন, 'এ বিষয়ে আমি অবগত নই। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।'

এ দিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সৈকতের বালু উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকে। বালু উত্তোলনের কারণে সৈকতের সবুজ বেষ্টনী (ঝাউ বাগান) ধ্বংস হতে পারে।'

পারকি সমুদ্র সৈকত থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা প্রশাসন পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমতি বা ছাড়পত্র নেয়নি বলে জানান তিনি।

ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, 'সরকার অনুমোদিত বালুমহাল ছাড়া অন্য কোনো স্থান থেকে বালু উত্তোলনের বিধান পরিবেশ আইনে নেই। বালুমহালগুলো জেলা প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করে।'

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের সঙ্গে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও কোনো মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

US welcomes Bangladesh election plan

The US yesterday welcomed plans by Bangladesh's interim leader to hold elections next year or in early 2026

1h ago