নদী-খাল দূষণে পেশা ছেড়েছেন হাজারো জেলে

কর্ণপাড়া খাল, উলাইল, সাভার। ছবি: আকলাকুর রহমান আকাশ/স্টার

রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারের নয়ারহাট এলাকার বাসিন্দা মহাদেব রাজবংশী (৬০)। বংশ পরম্পরায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। একসময় গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বংশী নদীতে সারা বছর মাছ ধরতেন।

কলকারখানার তরল বর্জ্যে বংশীর পানি দূষিত হওয়ায়, এখন সেখানে আর মাছ পাওয়া যায় না। বছরের ১০ মাসই তাকে অন্য কাজ করতে হয় কিংবা বেকার থাকতে হয়।

নদী ও খালের পানি দূষিত হওয়ায় শুধু তিনিই না, সাভারের হাজারো জেলেকে একই সমস্যায় পড়তে হয়েছে।

কারখানার দূষিত পানি পড়ছে খালে। ছবি: আকলাকুর রহমান আকাশ/স্টার

সাভার উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় জেলের সংখ্যা ২ হাজারের বেশি। বছরে শুধু শ্রাবণ ও ভাদ্র এই ২ মাস জেলেরা নদী ও খালে মাছ ধরতে পারেন।

তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় নদীর সংখ্যা ৩টি ও সরকারি খাল ১৮টি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সাভারের কোনো নদী বা খাল দূষণমুক্ত হয়নি।

মহাদেব রাজবংশী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এক সময় আমরা নদীতে মাছ ধরেই চলতাম। কলকারখানার বর্জ্যে পানি দূষিত হওয়ায় নদীতে এখন আর মাছ পাওয়া যায় না। জেলে সম্প্রদায়ের অনেকে পেশা বদল করছে।'

নদী-খাল দূষণ বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না বলেও জানান তিনি।

'সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা করলে আমাদের উপকার হতো। কিন্তু, আমরা কোনো সহায়তা পাই না,' বলেন মহাদেব।

ছবি: আকলাকুর রহমান আকাশ/স্টার

বংশীর নামাবাজার এলাকায় গত ১০ বছর ধরে খেয়া পারাপার করেন আবেদ আলী। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এক সময় নদীর পানি পরিষ্কার ছিল। সেই পানি দিয়ে রান্না করা হতো। এখন বছরের অন্তত ৮ মাস নদীর পানি থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। খেয়া পারাপারের সময় অসুবিধা হয়। দুর্গন্ধের কারণে নদীতে গোসল করা যায় না।'

নদী-খালের পানি দূষিত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সাভার উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম সরকার। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাভারে জেলেদের অবস্থা বেশ করুণ। বছরে ২ মাস তারা নদী-খালে মাছ ধরতে পারেন।'

'আমি নিজেও সাভারের বংশী, ধলেশ্বরী ও তুরাগ নদীসহ বেশ কয়েকটি খাল পরিদর্শন করেছি। দেখেছি নদীর পানি আর নর্দমার পানির মধ্যে পার্থক্য নেই। পানির যে অবস্থা তাতে মাছ কেন, কোনো জলজ প্রাণীই এখানে টিকে থাকতে পারে না,' যোগ করেন তিনি।

কামরুল ইসলাম বলেন, 'গত ২ মাস আগে তুরাগে ২টি গাঙ্গেয় ডলফিন মরে ভেসে উঠেছিল। ধারণা করছি, দূষিত পানির কারণেই ডলফিন ২টি মারা গেছে।'

ছবি: আকলাকুর রহমান আকাশ/স্টার

নদী ও খালের পানিতে দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তর, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। কলকারখানার বর্জ্য সরাসরি যেন নদী-খালে ফেলা না হয় সেদিকে নজরদারি বাড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেন এই মৎস্য কর্মকর্তা।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলার উপপরিচালক জহিরুল ইসলাম তালুকদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দূষণ বন্ধে আমরা নিয়মিতই কারখানা পরিদর্শন করি এবং শিল্পকারখানা কর্তৃপক্ষকে অনেক সময় দূষণের দায়ে জরিমানা করি।'

নিয়মিত মনিটরিংয়ের পরও নদীর পানি দূষিত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ট্যানারি শিল্পের বাইরেও সাভারে ডায়িং কারখানা আছে প্রায় ১২০টি এবং ওয়াশিং কারখানা রয়েছে ৬০টি। কারখানা খোলা থাকে ২৪ ঘণ্টা আর আমরা মনিটরিং করতে পারি ৮ ঘণ্টা। এ ছাড়া, আমাদের জনবলও অনেক কম।'

'আমরা পরিদর্শনের সময় তারা সিইটিপি চালায় এবং আমরা চলে এলে তাদের অনেকেই হয়ত তা চালায় না। সে কারণে নদী ও খালের পানি দূষিত হচ্ছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি,' বলেন জহিরুল ইসলাম তালুকদার।

Comments

The Daily Star  | English

UN chief Guterres meets Prof Yunus in Davos

UAE invites Yunus to attend World Governments Summit in Dubai

48m ago