হাওরে এখনো ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা বাকি
টানা ২ সপ্তাহের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখনো মাঠে ডুবে থাকা প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান কীভাবে কাটবেন, তা নিয়ে চিন্তিত হাওরপাড়ের কৃষক। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে আরও ১০ দিন সময় লাগবে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার করচার হাওরপাড়ের কৃষক সাইদুল ইসলাম সকাল থেকেই একটু রোদের অপেক্ষা করেন।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি সকালেই চলে যাই, হাওর থেকে ডুবা ধান কাটা যায় কিনা সেই চেষ্টা করি। ডুবা ধান থেকে যা কাটতে পারি তাই লাভ। আর আমার স্ত্রী হোসনা চেষ্টা করে মাড়াই দেওয়া ধান একেবারে যেন নষ্ট না হয়ে যায়, সেজন্য সে সকাল থেকে ধান শুকানোর চেষ্টা করে।'
হোসনা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সড়কে ধান শুকাই। বৃষ্টি এলে তুলে ফেলি। আবার একটু রোদ পেলে মেলে দেই। এটা চলে সারাদিন ধরে।'
জেলার তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের শক্তিয়ারখলা, আনোয়ারপুর ও বালিজুরী এলাকা ঘুরে একই দৃশ্য চোখে পড়ে। ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার কৃষক পরিবারের সবাই।
শক্তিয়ারখলা এলাকার জায়মা বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পানি বাড়ার কারণে জমি তলিয়ে গেছে, ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজে ব্যবহৃত খলাও পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। হাওরের ধান মাড়াই ও শুকানোর জন্য বর্তমানে স্থানীয় সড়কগুলোই একমাত্র ভরসা।'
তবে হাওরে যেন পানি কমে ও বাকি ধান যেন পচে না যায় বা না পচার আগেই কাটা যায়, তাই একটু রোদের জন্য দিনরাত প্রার্থনা করছেন বলেও জানান তিনি।
জায়মা বেগম আরও বলেন, 'এই শেষ সময়ে এসেও যদি রোদ উঠে, তবে নষ্ট ধানগুলো শুকিয়ে রাখলে বর্ষাকালে লবণ দিয়ে হলেও ভাত খাওয়া যাবে।'
শক্তিয়ারখলা এলাকার আরেক কৃষক রফিকুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভাবতেই পারিনি উঁচু জমিতে পানি উঠে যাবে। গত ২০ বছরেও এমন পানি দেখিনি।'
বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাসেল আহমদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বেশীরভাগ জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। বাকি ধান কাটতে পারলেও বৈরি আবহাওয়া ও শুকানোর জায়গা পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় ধান শুকানো যাচ্ছে না।'
এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে বধূনগর গ্রামের কৃষক মঞ্জুর আলীর মতো অনেকেই নিজ পরিবারের সদস্যসহ শিক্ষার্থী ভাই-ভাইপোদের নিয়ে ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সর্বশেষ বন্যায় সুনামগঞ্জে ৮২৯ হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গিয়েছিল। জেলায় এবার ছোট–বড় ১৩৭টি হাওরে ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। এপ্রিলের পাহাড়ি ঢলে ২০টি ছোট–বড় হাওরের প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'
'হাওরের ভেতরের ধান কাটা শেষ। তবে হাওরের উঁচু অংশের প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা এখনো বাকি। এগুলো কাটতে আরও ১০ দিন সময় লাগবে। এ ছাড়া, বন্যায় আউশ ধানের ৪৮ হেক্টর জমির বীজতলা ও ৪০ হেক্টর জমির সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে', যোগ করেন তিনি।
Comments