বড়লেখার ২০০ গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দি প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ

বড়লেখা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ২০০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা

ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে, মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ২০০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া, উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে।

উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ জানান, ভারী বর্ষণে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউপির আয়েশাবাদ চা বাগানে টিলা ধসে রাজন ব্যুনার্জির মৃত্যু হয়েছে। এসময় ৪ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া বড়লেখা সদর ইউপির কেছরিগুল গ্রামে টিলা ধসে একজন আহত হয়েছেন।

টিলার পাদদেশে যারা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

বড়লেখা পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী বলেন, 'ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বড়লেখা পৌরসভার বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে পানি উঠেছে। পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের আদিত্যের মহাল এলাকায় ঢলের পানিতে তলিয়ে যাওয়া এক শিশুর মরদেহ আজ রোববার উদ্ধার করা হয়েছে। তবে, ওই শিশুর নাম জানা যায়নি। এতে প্রায় আড়াই হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোববার শহর থেকে পানি নেমে গেলেও পৌরসভার নিচু এলাকা এখনও পানিতে নিমজ্জিত আছে।'

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, 'বড়লেখায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ও টিলা ধস প্রতিরোধে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। পাশাপাশি ২১টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।'

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা উবায়েদ উল্লাহ খান বলেন, 'বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য শুকনো খাবার প্রস্তুত করা হয়েছে ও পানিবন্দি এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।'

বড়লেখা উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী মঈন উদ্দিন বলেন, 'জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে ২০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুত আছে। প্রায় ৩ হাজার ট্যাবলেট বিতরণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়াও নলকূপের প্লাটফর্ম উঁচু ও আশ্রয় কেন্দ্রে নলকূপ স্থাপন কার্যক্রম চলমান আছে।'

পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম এমাজ উদ্দিন সরদার আজ রোববার বিকালে বলেন, 'ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পল্লী বিদ্যুতের সাব-স্টেশন পানিতে ডুবে যায়। তবে, পানি এখন নেমেছে। ভারী বৃষ্টি হলে তা আবার তলিয়ে যেতে পারে। ভারী বৃষ্টিতে বিভিন্নস্থানে ২০টি বড় গাছ পড়েছে। ১৮টি স্থানে তার ছিঁড়েছে। ২২টি স্থানের কোথাও পল্লী বিদ্যুতের পোল ভেঙে গেছে, কোথাও হেলে পড়েছে ও আবার কোথাও তা পড়ে গেছে। ২৬টি মিটার ভেঙে গেছে। ১৬টি ইন্সুলেটর ভেঙে গেছে। ৮টি ক্রস আর্ম ভেঙে গেছে। ১২টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে গেছে। ২১ কিলোমিটার লাইন পানিতে তলিয়ে গেছে। কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের লোকজন লাইন মেরামতে কাজ করছেন। পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।'

বড়লেখা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা শামীম মোল্লা বলেন, 'ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে চান্দগ্রাম-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়েকের বিভিন্নস্থানে তলিয়ে যায়। আমাদের ফায়ার সার্ভিসে পানি উঠেছিল। আজ ভোরে পানি নেমে গেছে। তবে ভারী বৃষ্টি হলে তা আবার তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছে।'

এর আগে, শনিবার বিকেলে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বড়লেখার বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শন করেন। পরে তিনি উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে দুর্যোগ মোকাবিলায় জরুরি বৈঠক করেন।

জেলা প্রশাসক বলেন, 'শুধু বড়লেখা উপজেলায় প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ২০০টি গ্রাম প্লাবিত।'

Comments

The Daily Star  | English

Trump started this war, we will end it, says Iranian military

Iran vowed to defend itself a day after the US dropped 30,000-pound bunker-buster bombs onto the mountain above Iran's Fordow nuclear site

1d ago