জাবিতে উন্নয়নের ‘অপচয়’ শত কোটি টাকা, তথ্য গোপনের অভিযোগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপের কাজ। কিন্তু উন্নয়নের নামে এখানে প্রায় ১০০ কোটি টাকা অপচয় ও তথ্য গোপন করার গুরুতর অভিযোগ উঠছে। কোনো কেন্দ্রীয় মাস্টারপ্ল্যান না করে এই প্রকল্পে চলছে ভবন ভাঙা-গড়া।
জাবিতে বিদ্যমান প্রশাসনিক ভবনের ২০০৮ সালের নকশা। নকশার বাম দিকের চিহ্নিত অংশটুকুর কাজ শেষ হয়েছে। নকশার বাকি অংশটুকু আর নির্মাণ করা হয়নি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপের কাজ। কিন্তু উন্নয়নের নামে এখানে প্রায় ১০০ কোটি টাকা অপচয় ও তথ্য গোপন করার গুরুতর অভিযোগ উঠছে। কোনো কেন্দ্রীয় মাস্টারপ্ল্যান না করে এই প্রকল্পে চলছে ভবন ভাঙা-গড়া।

জাবিতে এখন প্রশাসনিক ভবন আছে দুইটি। এর মধ্যে নতুন প্রশাসনিক ভবনটি অসম্পূর্ণ রেখেই ২০১৬ সালে নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়। এখন অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ তলা আরেকটি প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।

নতুন ভবনের প্রয়োজনের ব্যাপারে প্রশাসন বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব দাপ্তরিক কার্যক্রম এক ভবনে আনার জন্যই নতুন ভবন প্রয়োজন। বিদ্যমান প্রশাসনিক ভবন দুটিতে এই সুবিধা নেই।

কিন্তু বিদ্যমান নতুন প্রশাসনিক ভবনটির কাজ সম্পন্ন করলেই সকল দাপ্তরিক কার্যক্রম এই ভবনটিতেই সম্ভব। প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়েই এই ভবনের বাকি অংশটুকু নির্মাণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী৷ সেক্ষেত্রে, আরেকটি প্রশাসনিক ভবনের প্রয়োজন হবে না।

জাবির বিদ্যমান নতুন প্রশাসনিক ভবন। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অফিসের নথি অনুসারে, জাবির বিদ্যমান নতুন প্রশাসনিক ভবনটির নকশা করা হয় ২০০৮ সালের নভেম্বরে। ২০০৯ সালে শুরু হয়ে ২০১৬ সালে এর একটি অংশের কাজ শেষ হয়। এতে খরচ হয় প্রায় ১১ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এই ভবনটি অসম্পূর্ণ রেখেই এখন তৃতীয় প্রশাসনিক ভবন তৈরির কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।

২০০৮ সালে করা সেই প্রশাসনিক ভবনের নকশাটি দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে। এতে দেখা যায়, এই ভবনটির কাজ সম্পন্ন করা হলে সেখানে প্রশাসন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরগুলো নিয়ে আসা সম্ভব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সালাম মো. শরীফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অসম্পূর্ণ অংশটি এখন সম্পূর্ণ করতে আনুমানিক ৪০ কোটি টাকার প্রয়োজন। নকশা অনুসারে কাজটি হলে সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ প্রশাসনিক ভবন হবে।'

অন্যদিকে জাবিতে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের ডিপিপিতে বিদ্যমান নতুন প্রশাসনিক ভবনটির কথা কোথাও উল্লেখ নেই। সেখানে কেবলমাত্র একটি প্রশাসনিক ভবনের কথা উল্লেখ করে নতুন ভবনের জন্য ১৫২ কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়।

এ ব্যাপারে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, 'নতুন প্রশাসনিক ভবন তৈরি করা হলে প্রায় ১০০ কোটি টাকার অপচয় হবে। প্রশাসন চাইলেই খেয়াল খুশিমতো এটা করতে পারে না৷ যেখানে নতুন আরেকটি প্রশাসনিক ভবনের কোনো প্রয়োজনই নেই সেখানে প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ভবনের চেয়ে বিদ্যমান ভবনটি সম্পূর্ণ করলে এতো টাকার অপচয় হবে না। এমন পরিস্থিতিতে নতুন ভবন করতে চাওয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।'

নতুন এই প্রশাসনিক ভবনের নকশা ২০০৮ সালে করা হলেও ডিপিপির কোথাও এটির উল্লেখ না থাকা তথ্য গোপনের সামিল বলেছেন শিক্ষাবিদ আনু মুহাম্মদ।

তিনি বলেন, 'বিদ্যমান নতুন প্রশাসনিক ভবনের উল্লেখ না করে কেবলমাত্র পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের উল্লেখ করে ডিপিপি উপস্থাপন করাটা তথ্য গোপনের সামিল। প্রথম থেকেই সঠিকভাবে কোনো তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি। আমাদেরকে একটা ধোঁয়াশার ভেতর রেখেই সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। অংশীজনদের কোনো মতামতই নেওয়া হয়নি।'

তাছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় কোনো মাস্টারপ্ল্যান ছাড়াই ইচ্ছেমতো বিভিন্ন জায়গায় ভবন ভাঙা-গড়ায় কোটি কোটি টাকা অপচয় হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজনরা।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাকিবুল রনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিদ্যমান প্রশাসনিক ভবনটি সম্পন্ন করলে কোটি কোটি টাকার অপচয় রোধ করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে, প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা খরচের কোনো প্রয়োজন নেই।'

জাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। ছবি: সংগৃহীত

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনটিও ভেঙে নতুন গ্রন্থাগার ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। পুরনো গ্রন্থাগারটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ১৯৮১ সালে। এতে ব্যয় হয় প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এই ভবনটিও অসম্পূর্ণ রেখেই নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছিল।

বর্তমান প্রকল্প অনুযায়ী, এই লাইব্রেরি ভেঙে সেখানেই নতুন আরেকটি গ্রন্থাগার তৈরি হবে। এতে খরচ হবে প্রায় ১০১ কোটি টাকা।

বিদ্যমান প্রশাসনিক ভবন অসম্পূর্ণ রেখেই নতুন আরেকটি ভবন নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন করলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল আলম বলেন, 'আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না কারণ এগুলো যখন হয়েছে তখন আমি এসবের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। এখন আর আমার কিছু করার নেই।'

তথ্য গোপন করে ডিপিপি উপস্থাপনের ব্যাপারে জানতে চাইলেও একই কথা বলেন উপাচার্য।

সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে চেষ্টা করেও মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করার ব্যাপারে জানতে চাইলে উপাচার্য নুরুল আলম বলেন, 'এটা আমরা কবে নাগাদ তৈরি করব সে বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
What constitutes hurting religious sentiments

Column by Mahfuz Anam: What constitutes hurting religious sentiments?

The issue of religious tolerance have become a matter of great concern as we see a global rise in narrow-mindedness, prejudice and hatred.

11h ago