পায়ের নিচে শক্ত ভিত খুঁজছেন মুমিনুল
বাংলাদেশ দলের অনুশীলন তখন শেষ। এর আগে তিন দফায় ব্যাটিং অনুশীলন সেরে নিয়েছিলেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। সব শেষের পর হয়ত তার মনে হলো আরেকটু কিছু বাকি। কয়েকটি বল আর একজন থ্রোয়ার নিয়ে ফের ঢুকলেন নেটে।
ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স সেখানে আগে থেকেই হাজির। মূলত সুইপ শটের ঝালাই করলেন বেশ কিছুটা সময় নিয়ে। সিডন্স তার শটগুলো ভিডিও করে দেখাচ্ছিলেন কোন জায়গায় আছে ঘাটতি।
বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়কের সময়টা ভালো যাচ্ছে না। গত ৬ টেস্টে ১২ ইনিংস ১৫ গড়ে করেছেন মোটে ১৬৫ রান। নিউজিল্যান্ডকে হারানো মাউন্ট মাঙ্গানুই টেস্টে করা ৮৮ রানই এই সময়ে একমাত্র ফিফটি।
ব্যাট রান থাকায় তার অধিনায়কত্ব হয়ে পড়েছে প্রশ্নবিদ্ধ। অধিনায়ক জানেন সব চাপ সরাতে তাকে ফিরতে হবে রানে।
বৃহস্পতিবার সিডন্সের সঙ্গে দুই দফা, প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর সঙ্গে একদফা সেশন করেন মুমিনুল। সেন্টার উইকেটে ম্যাচ পরিস্থিতির অনুশীলন তো ছিলই।
প্রেসবক্সের কাছাকাছি নেটে ডমিঙ্গো তার শরীরের ভারসাম্য নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছিলেন। মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন প্রিয় মাঠে তার ব্যাটিং প্রাইডের কথা। একজন ব্যাটসম্যান যখন গর্ব নিয়ে খেলেন তখন তার খেলার ধরণই বদলে যায়। শরীরী ভাষায় দেখা দেয় বাড়তি তাড়না।
স্পিনারদের বল যখন সামলাচ্ছিলেন, সামনের পায়ে ঠেকাতে গিয়ে পা পাচ্ছিল না শক্ত ভিত। সিডন্স বোঝাচ্ছিলেন ডিফেন্সটা করতে হবে অথরিটি নিয়ে, কোন রকম দ্বিধা রাখা যাবে না।
দক্ষিণ আফ্রিকায় সব শেষ সিরিজে ডিফেন্সের দুর্বলতাই হয়েছে প্রকাণ্ড। কেশব মহারাজ, সাইমন হার্মারদের ঘূর্ণি সামলাতে না পারার চিন্তা পেয়ে বসায় আগ্রাসী শটে দুর্বলতা ঢাকতে দেখা গেছে বেশিরভাগ ব্যাটসম্যানদের। মুমিনুলের অবস্থাও ছিল তাই। দুই অঙ্কে যাওয়া নিয়েই ভুগছিলেন তিনি।
এবার ঘরের মাঠে খেলা হলেও প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা হওয়ায় পড়তে হবে স্পিন পরীক্ষায়। লাসিথ এম্বুলদেনিয়া, প্রবিন জয়াবিক্রমা, রমেশ মেন্ডিসরা শক্ত পরীক্ষাই দিবেন।
মুমিনুল অবশ্য সেই পরীক্ষাত উৎরে যেতে পয়মন্ত মাঠে তার উজ্জ্বল পরিসংখ্যানের দিকে চোখ ফেরাতে পারেন। ডমিঙ্গোর বলা প্রাইড খুঁজতে পারেন তাতে।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মুমিনুলের রেকর্ড চোখ ধাঁধানো। ১১ ম্যাচে ৬৬.৮৩ গড়ে করেছেন ১২০৩ রান। ক্যারিয়ারের ১১ সেঞ্চুরির সাতটাই চট্টগ্রামের এই মাঠে।
প্রিয় মাঠের মতো শ্রীলঙ্কাও তার প্রিয় প্রতিপক্ষ। তাদের বিপক্ষে ৯ ম্যাচে ৫৮.৯৩ গড়ে ৮৮৪ রান করেছেন তিনি। আছে ৪ সেঞ্চুরি আর তিন ফিফটি। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই মাঠেই খেলেছিলেন ১৭৬ রানের ইনিংস। মুমিনুলের ফেরার মঞ্চ খুঁজতে আর কি লাগে!
তবে যেটা লাগে সেটা হচ্ছে আদর্শ প্রস্তুতি। সেই জায়গায় কোন ফাঁকফোকর রাখছেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক।
মুমিনুলের থেকেও এদিন বেশি অনুশীলন করেছেন আরেকজন। তার নাম বললে অবশ্য সেটাকে আর নতুন খবর মনে হবে না। বরাবরের মতো আবারও দলের অনুশীলন শেষ হওয়ার পর আরও দেড় ঘন্টা একা খেটেছেন মুশফিকুর রহিম। রান নেই এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের ব্যাটেও।
গত ৯ ইনিংসে করেছেন একটাই মাত্র ফিফটি। সেই ফিফটির পর পরিস্থিতিতে একদম বিপরীতে গিয়ে রিভার্স সুইপে আত্মাহুতি দিয়ে পড়েছিলেন সমালোচনায়। চাপে থাকা মুশফিক নেট বোলার আর থ্রোয়ারদের নিয়ে বাড়তি খাটুনিতে ঘাটতি রাখেননি। কেউ কেউ হয়ত প্রশ্ন রাখতে পারেন, শরীরকে প্রয়োজনের বেশি খাটিয়ে হীতে বিপরীত করছেন না তো তিনি?
Comments