খটকা নিয়েই লঙ্কান চ্যালেঞ্জের সামনে বাংলাদেশ
কোন একজন ক্রিকেটার খেলছেন নাকি খেলছেন না এই নিয়ে এত নাটকীয়তা বিশ্ব আর কোথাও হয় না। বাকি দুনিয়ায় যা একদম বিরল, বাংলাদেশের জন্য তা অবশ্য নিয়মিত ঘটনা। প্রতি সিরিজেই সাকিব আল হাসানের খেলা- না খেলা নিয়ে হয়ে যায় এক প্রস্ত নাটক। এবার কোভিড পজিটিভ হয়ে ছিটকে যাওয়া, দুদিনের মধ্যে সেরে আবার খেলার সিদ্ধান্ত। ফিটনেস পরীক্ষা উপেক্ষা করা মিলিয়ে প্রশ্নের জায়গা আছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় বিধ্বস্ত হওয়া দল পায়ের নিচে ভিত শক্ত করতে কোন অ্যাপ্রোচে হাঁটবে তা নিয়েও আছে কৌতূহল।
লঙ্কানদের বিপক্ষে ঘরের মাঠে কখনই টেস্ট জেতা হয়নি বাংলাদেশের। ইতিহাস বদলাতে এবার প্রথম টেস্টের ভেন্যুতে আটদিন আগেই চলে এসেছিলেন মুমিনুল হকরা। সম্ভাব্য সেরা দল নিয়ে নামার জায়গায় আঘাত লেগেছিল আগেই। প্রিমিয়ার লিগে চোটে ছিটকে গিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাসকিন আহমেদ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকেই বয়ে আনা চোটে বাইরে।
এরপর দল চট্টগ্রাম এসে যখন শুনল কোভিডে আক্রান্ত হয়ে সাকিবও নেই, হিসাব-নিকাশ তখনই গোলমাল হওয়ার জোগাড়। গত তিন সিরিজের মতন আবারও সাকিব ছাড়া নামার প্রস্তুতিও চলছিল। দুদিনের মাথায় সাকিবের সেরে উঠা তাই নিশ্চিতভাবেই দলের জন্য বোনাস।
কিন্তু এখানে থেকে যাচ্ছে প্রশ্নের জায়গাও। সাকিব সেরে উঠার পর প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো তার ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। করোনা থেকে সেরে উঠেই হুট করে একটি টেস্ট খেলা যে কত কঠিন তাও বলেছিলেন। কেবল ফিটনেস পরীক্ষায় পাশ করতে পারলেই সাকিবের খেলার কথা ছিল। সেই কথা আর পরে থাকেনি।
শনিবার ঐচ্ছিক অনুশীলনে কোন পরীক্ষা নিতেই যে দেখা গেল না। বোলিং-ফিল্ডিং- রানিং কিছুই করেননি, সাকিব শুধু নেটে ব্যাট করলেন ৩৫ মিনিট। এরপর অধিনায়ক মুমিনুল সংবাদ সম্মেলনে এসে জানিয়ে দিলেন তার খেলার কথা।
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড খরতাপে কোভিড থেকে সেরে উঠা সাকিব বোলিং-ফিল্ডিংয়েও ফিট থাকবেন কিনা সেই প্রশ্ন হয়ে পড়ল অবান্তর। তিনি খেলছেন। জানা গেছে, টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে এক্ষেত্রে সাকিবের নিজের সিদ্ধান্তটাই ছিল আসল। মুমিনুলের মতে মনের জোরেই সাকিব শতভাগ ফিট।
সাকিব ইস্যু মনোযোগটা নাড়িয়ে দিলেও এই টেস্টে বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ বিস্তর। দক্ষিণ আফ্রিকায় ৫৩ ও ৮০ রানে গুটিয়ে ব্যাটিং ধসের যে হাল দেখা গেছে তা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে। কেশব মহারাজের বলে যেভাবে ব্যাটসম্যানরা ধুঁকেছেন তাতে লাসিথ এম্বেলদেনিয়া, প্রবিন জয়াবিক্রমারারা যে লোভাতুর চোখে তেতে থাকবেন তা অনুমিত।
ব্যাটারদের রক্ষণের দুর্বলতা, পরিস্থিতির বিপরীতে গিয়ে তালগোল পাকানো সব ভুলও পিছু পিছু ধাওয়া করছে তাদের।
মিরাজ ও তাসকিনের মতন দুজন না থাকায় বোলিং আক্রমণও পুরো শক্তি পাচ্ছে না। সাকিব ব্যাট হাতে প্রস্তুতি সারলে তার বোলিং ফিটনেস কতটা আছে তা নিয়ে আছেন প্রশ্ন। চট্টগ্রামের ফ্লাট উইকেটে প্রতিপক্ষের উইকেট পেতে কতটা শ্রম দিতে হবে বোলারদের, তাও দেখার বিষয়।
প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কার বোলিং আক্রমণও অপেক্ষাকৃত অনভিজ্ঞ। সুরাঙ্গা লাকমাল অবসরে যাওয়ার পর চামিকা করুনারত্নে, বিশ্ব ফার্নান্দোদের উপর লঙ্কানদের পেস আক্রমণ সামলানোর ভার। এম্বুলদেনিয়া, জয়াবিক্রমার সঙ্গে রমেশ মেন্ডিস ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা মিলিয়ে স্পিন বিভাগ জুতসই।
তবে লঙ্কানদের শক্তির জায়গায় বোধহয় তাদের ব্যাটিং। অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নের সঙ্গে আছেন দুই অভিজ্ঞ দিনেশ চান্দিমাল আর অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। পাথুম নিশানকা, লাহিরু থিরিমান্নেরা না থাকায় এই জায়গাও ঘাটতি আছে তাদের। কুশল মেন্ডিস, নিরোশান ডিকভেলারা অবশ্য তা পুষিয়ে দিতে সক্ষম।
চট্টগ্রামে এসেই উইকেট নিয়ে বেশ কথাবার্তা বলছেন করুনারত্নে। বলা যায় অনেকটা হতাশাও আছে তার কন্ঠের সুরে। চার বছর আগে এই মাঠে দুদলের সবশেষ দেখায় উইকেট ছিল নিষ্প্রাণ। দুদলের তিন ইনিংস মিলিয়ে রান হয়েছিল ১৫৩৩! ম্যাচ অনুমিতভাবেই ড্র। ডিমেরিট পাওয়া সেই উইকেট হয়ত এবার থাকবে না। তবে আরেকটি ফ্লাট উইকেটই দেখছে লঙ্কানরা। যেখানে ব্যাটারদের আউট করতে হলে বাড়তি চতুর পথে হাঁটতে হবে বোলারদের।
সাকিব ফেরায় এই জায়গায় বাংলাদেশের আছে বেশ স্বস্তি। এমন পাটা উইকেটে পাঁচ বোলার নিয়ে নেমেও একাদশে সমন্বয় রাখতে পারবেন মুমিনুলরা।
দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসানের সঙ্গে সাকিব তো আছেনই। তাদের সঙ্গে যোগ হবেন দুই পেসার। পাঁচ বোলার রেখেও তাই সাত ব্যাটসম্যান খেলাতে পারছে বাংলাদেশ।
রোববার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু হতে যাওয়া প্রথম টেস্টে আছে বৃষ্টির শঙ্কাও। তবে সেই বৃষ্টি খুব বেশি সময় স্থায়ী হওয়ার আভাস নেই।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ: তামিম ইকবাল, মাহমুদুল হাসান জয়, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, নাঈম হাসান, তাইজুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম ও ইবাদত হোসেন।
শ্রীলঙ্কা সম্ভাব্য একাদশ: দিমুথ করুনারত্নে, ওসাদা ফার্নান্দো, কুশল মেন্ডিস, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, দীনেশ চান্দিমাল/ রমেশ মেন্ডিস, নিরোশান ডিকভেলা, লাসিথ এম্বুলদেনিয়া, কাসুন রাজিতা, প্রবিন জয়াবিক্রমা, বিশ্ব ফার্নেন্দো।
Comments