মুশফিকের এমন ইনিংসের ব্যাখ্যা কি?

Mushfiqur Rahim
নিজের ছায়া হয়ে উইকেটে ছিলেন মুশফিকুর রহিম। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

উইকেট ভীষণ মন্থর, কন্ডিশন বিচারে লক্ষ্যটাও চ্যালেঞ্জিং বলা চলে। এক পাশে টপাটপ উইকেট পড়তে থাকায় কাজটা ক্রমশ হচ্ছিল দুরূহ। কিন্তু ২০ ওভার পর্যন্ত ক্রিজে থাকলে একজন ব্যাটসম্যানের লক্ষ্যটা কী থাকবে? টিকে থেকে নিশ্চিত হারের অপেক্ষা নাকি জেতার ন্যূনতম সুযোগটা গ্রহণ করা? এসব প্রশ্নের জন্ম দিয়ে মুশফিকুর রহিমের ব্যাটিং হলো বড় দৃষ্টিকটু। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাকিদের ব্যাটিংও ক্রিকেটীয় ভাষায় 'ভেরি পুওর'।

রোববার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ১২৯ রান তাড়ায় শেষ ওভারে গিয়ে বাংলাদেশ অলআউট হলো মাত্র ৭৬ রানে। অর্থাৎ ৭৬ রান বাংলাদেশ করেছে ১৯.৪ ওভার ব্যাট করে! ১১৮ বলের মধ্যে ৩৭ বল একা মোকাবিলা করে মুশফিক করতে পারেন মাত্র ২০ রান। আর দুজনই কেবল যেতে পারেন দুই অঙ্কে। ওপেনিংয়ে লিটন দাস করেন ১০ বলে ১৫ আর ১৯ বলে ১৩ করেন নাঈম শেখ।

বাকিদের রান যেন টেলিফোন ডিজিট। কেউ করেন অহেতুক তাড়াহুড়ো, কেউ বাছেন ভুল শট। রান তাড়ার হিসাব-নিকাশ কারো মাথাতেই ছিল বলে মনে হয়নি। জট পাকানো ভাবনায় ব্যাটিং হয়েছে তালগোল পাকানো। সর্বোচ জুটি ওপেনিংয়ে, তাও কেবল ২৩ রানের।

এর মাঝেও মুশফিককে আলাদা করার কারণ তার অভিজ্ঞতা ও  ব্যাটিংয়ের মান বিচারে এদিনের পারফরম্যান্স। তার ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে, অন্তত ৮-১০ ওভার আগেই হার মেনে নিয়ে খেলেছে বাংলাদেশ!

ক্রিকেট বা যেকোনো খেলায় জেতা এবং হারার মাঝে বিস্তর ফারাক। কিন্তু কম ব্যবধানে হার আর বড় ব্যবধানে হারের মধ্যে বাস্তবিক অর্থে কোনো পার্থক্য নেই। হয় আপনি জিতলেন না হয় হারলেন। বরং জেতার চেষ্টা করে ঠিক পথে থাকার পর শেষ পর্যন্ত না পারলে সেটাই ইতিবাচক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ হয়।

দশম ওভারে ৪৩ রানে যখন ষষ্ঠ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। জেতার জন্য ওভারপ্রতি তখন রান দরকার দাঁড়ায় প্রায় ৮ করে। দুই ওভার পরই সেটা ছাড়াল ১০-এর বেশি। মুশফিক তখন উইকেট আগলে সিঙ্গেল বের করার চেষ্টায় ছিলেন, তাও হচ্ছিল ডট বল । এই সময়ে তাকে একবার রিভার্স সুইপ মারার চেষ্টা করে ব্যর্থ হতে দেখা যায়। এমন কন্ডিশনে খেলার অনেক অভিজ্ঞতা থাকলেও টামিং করতে পারছিলেন না। ভিন্ন রকম কিছু করে তেমন কোনো ঝুঁকি নেননি। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি দলের। মুশফিক আরেক প্রান্তে অপরাজিত থাকেন ঠিকই। কিন্তু দল হেরেছে ৫২ রানে।

এদিন রান তাড়ায় বাংলাদেশের শুরুটা আবার একদম ভিন্ন অ্যাপ্রোচের। বলে বলে বাউন্ডারি মারার দিকে ঝুঁকে শুরুর দিকের ব্যাটসম্যানরা দেন আত্মাহুতি। প্রথম ওভারে নাঈম পান দুই বাউন্ডারি। তবে পরে তাকে বিস্তর ভুগতে দেখা গেছে।

লিটনের শুরুটা ছিল একদম ঝলমলে। দলের বাকি সবার থেকে সবচেয়ে সাবলীল লাগছিল তাকে। এজাজ প্যাটেলকে একটি আ কোল ম্যাককনকিকে দারুণ দুই চারে দিচ্ছিলেন ভালো কিছুর আভাস। কিন্তু রান তাড়ার লক্ষ্যের তুলনায় তার হিসাব-নিকাশ ছিল বড় গোলমেলে। ১০ বলে ১৫ করে যখন বাউন্ডারির নেশায় আড়াআড়ি খেলে এলবিডব্লিউ হন, ওই পরিস্থিতিতে প্রান্ত বদলই হতো আদর্শ অ্যাপ্রোচ। বাউন্ডারি আর প্রান্ত বদলের সমন্বয় করতে না পারায় থিতু হয়েও বিদায় ঘটে তার।

শেখ মেহেদী হাসানকে তিনে পাঠানোকেও বাংলাদেশের পাওয়ার প্লে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা বলা যায়। বল ধীরে আসে এমন উইকেটে মেহেদী মেটাতে পারেননি চাহিদা। সাকিব আল হাসান ক্রিজে এসেই ছক্কার নেশায় পড়ে যান। তখনো আস্কিং রেট ছিল একদম নাগালে। ডট বলের সংখ্যা কম রেখে খেললেই নিরাপদ থাকত বাংলাদেশ। সাকিব বাছলেন বিপদ বাড়ানোর পথ।

খানিক পর মাহমুদউল্লাহ হাঁসফাঁস করে নিতেই সম্ভবত মুশফিকের মনে বইতে থাকে নেতিবাচক বাতাস। বাউন্ডারি বের করা কঠিন হলেও তার মতো মানের ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে প্রান্ত বদলের চাহিদা পূরণের  আশা করা বাড়াবাড়ি ছিল না। কিন্তু তিনিই ডট বলে বাড়ান চাপ। ওভারপ্রতি রানের চাহিদা বেড়েই চলেছে, দ্রুতই তা চলে যাচ্ছে নাগালের বাইরে; তবু তেমন কোনো তাগিদই দেখাননি তিনি।

সপ্তম উইকেটে ১৪ রানের জুটির পর নুরুল হাসান সোহান  আউট হন ১৩.১ ওভারে। এরপর আরও ৩৯ বল টিকেছে বাংলাদেশের ইনিংস। ততক্ষণে ২৪ বল খেলে ১৪ রান করা মুশফিক থিতু হয়ে গেছেন। কিন্তু শেষ ৩৯ বলের মধ্যে ব্যাটিং লাইনআপের লেজের দিকের মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, নাসুম আহমেদ আর মোস্তাফিজুর রহমান মিলে খেলেন ২৬ বল। আর মুশফিক মোকাবিলা করেন কেবল ১৩ বল। সিনিয়র একজন খেলোয়াড় ক্রিজে থাকলে টেল এন্ডারদের আগলে তাকেই বেশি স্ট্রাইক নিয়ে খেলতে দেখা স্বাভাবিক। কিন্তু এদিন হলো একদম বিপরীত।

নিশ্চিতভাবেই অন্যরা উইকেট ছুঁড়ে দেওয়াতেই মুশফিকের জন্য কাজটা হয়ে গিয়েছিল ভীষণ কঠিন। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে, উইকেটে পড়ে থেকে হারের অপেক্ষা এবং ইনিংসের মাঝামাঝি সময়ে হার মেনে নেওয়া যদি শরীরী ভাষায় প্রকাশিত হয়ে যায়, সেটা কি কোনো সুন্দর বিজ্ঞাপন?

Comments

The Daily Star  | English
Grameen Bank ownership changes in Bangladesh

Grameen Bank ownership, board to see major changes 

The plan has been outlined in the draft of a new ordinance

2h ago