টোকিও অলিম্পিকস, ষষ্ঠ দিন: পদক জিতলেন যারা
টোকিও অলিম্পিকের ষষ্ঠ দিনে বৃহস্পতিবার নিষ্পত্তি হয়েছে আটটি খেলার (আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্স, ক্যানু স্ল্যালম, ফেন্সিং, জুডো, রোয়িং, শুটিং, সাঁতার ও টেবিল টেনিস) মোট ১৭টি ইভেন্টের।
এদিন স্বাগতিক জাপানকে টপকে পদক তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে চীন। দুদলের সোনার পদক সমান হলেও মোট পদক জয়ে এগিয়ে আছে চাইনিজরা। ১৫টি সোনা, সাতটি রুপা ও নয়টি ব্রোঞ্জ নিয়ে তাদের পদকের সংখ্যা ৩১টি। দুইয়ে নেমে যাওয়া জাপান ১৫টি সোনা, চারটি রুপা ও ছয়টি ব্রোঞ্জসহ মোট ২৫টি পদক পেয়েছে।
তিনে থাকা যুক্তরাষ্ট্র নিঃশ্বাস ফেলছে চীন ও জাপানের ঘাড়ে। ১৪টি করে সোনা ও রুপা এবং দশটি ব্রোঞ্জসহ সর্বোচ্চ ৩৮টি পদক জিতেছে তারা। তাদের মতো স্থান ধরে রেখেছে চারে থাকা আরওসি। আটটি সোনা, ১১টি রুপা ও নয়টি ব্রোঞ্জ নিয়ে তাদের পদকের সংখ্যা ২৮টি। আটটি সোনা, দুটি রুপা ও দশটি ব্রোঞ্জসহ মোট ২০টি পদক নিয়ে অস্ট্রেলিয়া রয়েছে পাঁচে।
টেবিল টেনিস
ম্যাচের ফল যা-ই হোক না কেন, মেয়েদের এককের সোনার পদক চীনের ঘরেই যেত। কারণ, ফাইনালের দুই প্রতিযোগীই ছিল তাদের। সেখানে জমজমাট লড়াইয়ে বিশ্বের এক নম্বর তারকা মেং চেন হয়েছেন বিজয়ী। তিনি র্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বর তারকা ইয়াংশা সুনকে হারিয়েছেন ৪-২ গেমে। বিশ্বের তিন নম্বর তারকা মিমা ইতো ব্রোঞ্জ জিতে গড়েছেন অনন্য এক কীর্তি। অলিম্পিকে এই ইভেন্টে জাপানের হয়ে পদক জেতা প্রথম নারী তিনি।
আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকস
নারীদের ব্যক্তিগত অল-অ্যারাউন্ডে আগের পাঁচটি অলিম্পিকে সোনা জিতেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেই ধারা অব্যাহত থেকেছে ১৮ বছর বয়সী সুনিসা লির হাত ধরে। ৫৭.৪৩৩ স্কোর গড়ে সোনা জিতে ইতিহাসেও ঢুকে গেছেন তিনি। এশিয়ান বংশোদ্ভূত প্রথম আমেরিকান জিমন্যাস্ট হিসেবে অল-অ্যারাউন্ডে সেরা হয়েছেন তিনি। ব্রাজিলের রেবেকা আন্দ্রাদেও রুপা জিতে গড়েছেন রেকর্ড। তার আগে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের আর কোনো অ্যাথলেট এই ইভেন্টে পদক জিততে পারেনি। আরওসির অ্যাঞ্জেলিনা মেলনিকোভা পেয়েছেন ব্রোঞ্জ। গত রিও অলিম্পিকে সোনা জেতা লির স্বদেশি বাইলস ফাইনাল থেকে নাম প্রত্যাহার করেন আগেই। নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
ফেন্সিং
মেয়েদের দলগত ফয়েলে সোনা জিতেছে আরওসি। তাদের কাছে ৪৫-৩৪ ব্যবধানে হেরে রুপা পেয়েছে ফ্রান্স। ইতালির নামের পাশে জমা হয়েছে ব্রোঞ্জ।
জুডো
জুডোতে জাপানের জয়রথ চলছেই। ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১০০ কেজি ওজন শ্রেণিতে অ্যারন উলফ সোনা জিতেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার গুহাম চোকে হারিয়ে। পর্তুগালের জর্জ ফনসেকা ও আরওসির নিয়াজ ইলিয়াসভ পেয়েছেন ব্রোঞ্জ।
জুডো
মেয়েদের অনূর্ধ্ব-৭৮ কেজি ওজন শ্রেণিতে সোনা জিতেছেন স্বাগতিক জাপানের শোরি হামাদা। তার কাছে হেরে রুপা পেয়েছেন ফ্রান্সের মাদেলেইন মালোঙ্গা। ব্রোঞ্জ জিতেছেন জার্মানির অ্যানা-মারিয়া ওয়াগনার ও ব্রাজিলের মাইরা অ্যাগুইয়ার।
ক্যানু স্ল্যালম
আগের দুই অলিম্পিকে খুব কাছে গিয়েও লক্ষ্য ছোঁয়া হয়নি। সেই হতাশা ঝেড়ে অবশেষে সোনার পদক জেতার স্বাদ নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার জেসিকা ফক্স। মেয়েদের সি-১ স্ল্যালমের ফাইনালে ১০৫.০৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে সেরা হয়েছেন তিনি। গ্রেট ব্রিটেনের ম্যালরি ফ্র্যাঙ্কলিন রুপা ও জার্মানির আন্দ্রেয়া হার্জগ ব্রোঞ্জ জিতেছেন।
শুটিং
ছেলেদের ট্র্যাপে টাইব্রেকারে ৭-৬ ব্যবধানে জিতে গলায় সোনার পদক ঝুলিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের জিরি লিপটাক। রুপার পদক জিতেছেন তার স্বদেশি ডেভিড কস্টেলেস্কি। ফাইনালে নির্ধারিত ৫০ শটের ৪৩টিতে লক্ষ্যভেদ করে দুজনেই গড়েন অলিম্পিক রেকর্ড। এরপর শুট-অফে লিপটাক কেড়ে নেন সব আলো। ৩৩টি লক্ষ্যভেদ করে ব্রোঞ্জ জিতেছেন গ্রেট ব্রিটেনের ম্যাথু কাওয়ার্ড-হলি।
শুটিং
মেয়েদের ট্র্যাপের বাছাইপর্বেই তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন রেহাক স্তেফেচকোভা। একটি শটেও ব্যর্থ না হয়ে গড়েছিলেন বিশ্ব রেকর্ড। স্লোভাকিয়ার এই শুটার ফাইনালেও ছন্দ ধরে রেখে জিতেছেন প্রত্যাশিত সোনা। ৫০টি শটের ৪৩টিতেই লক্ষ্যভেদ করেছেন তিনি, যা শুটিংয়ের নতুন এই সংস্করণের ফাইনালে অলিম্পিক রেকর্ড। যুক্তরাষ্ট্রের কাইলি ব্রাউনিং ৪২টি লক্ষ্যভেদ করে পেয়েছেন রুপা। ২৯টি লক্ষ্যভেদ করে ব্রোঞ্জ জিতে ইতিহাস গড়েছেন স্যান ম্যারিনোর আলেসান্দ্রা পেরিল্লি। অলিম্পিকে এটিই দেশটির প্রথম পদক।
সাঁতার
মেয়েদের ৪ গুণিতক ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইল রিলেতে হয়েছে রেকর্ডের ছড়াছড়ি। চীনের জুনজুয়ান ইয়াং, মুহান ট্যাং, ইউফেই ঝ্যাং ও বিংজিয়ে লি ৭ মিনিট ৪০.৩৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে গড়েছেন বিশ্ব রেকর্ড। এই ইভেন্টে চাইনিজদের এটি প্রথম সোনার পদক। নিজেদের জাতীয় রেকর্ড (৭ মিনিট ৪০.৭৩ সেকেন্ড) গড়েও যুক্তরাষ্ট্র রুপার বেশি পায়নি। ওশেনিয়া অঞ্চলের নতুন রেকর্ড গড়া অস্ট্রেলিয়া (৭ মিনিট ৪১.২৯ সেকেন্ড) পেয়েছে ব্রোঞ্জ।
সাঁতার
ছেলেদের ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে হয়েছে অলিম্পিক রেকর্ড। যুক্তরাষ্ট্রের ২৪ বছর বয়সী সাঁতারু ক্যালেব ড্রেসেল সোনা জিতেছেন ৪৭.০২ সেকেন্ড সময় নিয়ে। অলিম্পিকে এটি তার ব্যক্তিগত প্রথম সোনার পদক। এর আগে তিনি তিনটি সোনা জিতলেও সেগুলো ছিল দলগত ইভেন্টে। সবশেষ রিও অলিম্পিকে সেরা হওয়া অস্ট্রেলিয়ার কাইল ক্যালমার্স ০.০৬ সেকেন্ড পেছনে থেকে পেয়েছেন রুপা। আরওসির ক্লিমেন্ত কোলেসনিকভ পেয়েছেন ব্রোঞ্জ।
সাঁতার
অলিম্পিক রেকর্ড গড়ে মেয়েদের ২০০ মিটার বাটারফ্লাইতে সোনা জিতেছেন চীনের ইউফেই ঝ্যাং। তিনি সময় নিয়েছেন ২ মিনিট ০৩.৮৬ সেকেন্ড। ২৩ বছর বয়সী এই সাঁতারু শুরু থেকেই এগিয়ে ছিলেন। শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রতিযোগী চাপ বাড়ালেও সহজ জয়ই পেয়েছেন ঝ্যাং। রেগান স্মিথ ২ মিনিট ০৫.৩০ সেকেন্ড সময় নিয়ে জিতেছেন রুপা। ব্রোঞ্জ জিতেছেন তার স্বদেশি হ্যালি ফ্লিকিঙ্গার (২ মিনিট ০৫.৬৫ সেকেন্ড)।
সাঁতার
ছেলেদের ২০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে অলিম্পিক রেকর্ড গড়ে সোনা জিতেছেন অস্ট্রেলিয়ার আইজ্যাক স্টাবলেটি-কুক। তিনি সময় নিয়েছেন ২ মিনিট ০৬.৩৮ সেকেন্ড। শেষ ২৫ মিটারে পিছিয়ে পড়া নেদারল্যান্ডসের আর্নো কামিঙ্গা হয়েছেন দ্বিতীয় (০.৬৩ সেকেন্ড পিছিয়ে)। এবার ১০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকেও রুপা জিতেছেন তিনি। ফিনল্যান্ডের ম্যাটি ম্যাটসন হয়েছেন তৃতীয় (০.৭৫ সেকেন্ড পিছিয়ে)।
সাঁতার
রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে ছেলেদের ৮০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে সোনা জিতেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রবার্ট ফিঙ্ক। শেষ ৫০ মিটারে অসাধারণ নৈপুণ্য উপহার দেন তিনি। তার সময় লেগেছে ৭ মিনিট ৪১.৮৭ সেকেন্ড। পরের তিনজনও এক সেকেন্ডের কম সময় নিয়ে সাঁতার শেষ করেন। ইতালির জর্জিও পালত্রিনিয়েরি শুরুতে অনেকটা এগিয়ে থাকলেও পেয়েছেন রুপা। জার্মানির ফ্লোরিয়ান ওয়েলব্রোককে পেছনে ফেলে ব্রোঞ্জ জিতেছেন ইউক্রেনের মিখাইলো রোমানচুক।
রোয়িং
মেয়েদের লাইটওয়েট ডাবল স্কালসে হয়েছে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। মাত্র আধা সেকেন্ডের ব্যবধানে প্রতিযোগিতা শেষ করে চারটি দল! ৬ মিনিট ৪৭.৫৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে সোনা জিতেছে ফেদেরিকা চেসারিনি ও ভ্যালেন্তিনা রোদিনির সমন্বয়ে গঠিত ইতালি। তাদের চেয়ে ০.১৪ সেকেন্ড পিছিয়ে থেকে রুপা পেয়েছে ফ্রান্স। ব্রোঞ্জ বিজয়ী নির্ধারণের জন্য 'ফটো ফিনিশ'-এর দ্বারস্থ হতে হয়। গ্রেট ব্রিটেনের চেয়ে কেবল ০.০১ সেকেন্ডে এগিয়ে থেকে নেদারল্যান্ডস (৬ মিনিট ৪৮.০৩ সেকেন্ড) পেয়েছে ওই পদক।
রোয়িং
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ছেলেদের লাইটওয়েট ডাবল স্কালসে শেষ হাসি হেসেছে আয়ারল্যান্ড। ৬ মিনিট ০৬.৪৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে তারা হারিয়েছে জার্মানিকে (৬ মিনিট ০৭.২৯ সেকেন্ড)। ১০০০ মিটার পর্যন্ত এগিয়ে ছিল জার্মানরা। কিন্তু পল ও'ডনোভান ও ফিন্ট্যান ম্যাককার্থিকে নিয়ে গঠিত আইরিশ দলের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেনি তারা। অনেকটা পিছিয়ে থেকে ইতালি জিতেছে ব্রোঞ্জ।
রোয়িং
মেয়েদের দ্বৈতে সোনার পদক পেয়েছে নিউজিল্যান্ড। তাদের দুই ক্রীড়াবিদ গ্রেস প্রেডারগাস্ট ও কেরি গাওলার সময় নিয়েছেন ৬ মিনিট ৫০.১৯ সেকেন্ড। রুপা জেতা আরওসির লেগেছে ৬ মিনিট ৫১.৪৫ সেকেন্ড। তাদের চেয়ে ১.৯১ সেকেন্ড পিছিয়ে থেকে ব্রোঞ্জ জিতেছে কানাডা। গত দুই আসরে (লন্ডন ও রিও) এই ইভেন্টে বিজয়ী গ্রেট ব্রিটেনকে সন্তুষ্ট থাকতে হয় চতুর্থ হয়ে।
রোয়িং
ছেলেদের দ্বৈতে ফেভারিট ছিল ক্রোয়েশিয়া। দুই ভাই মার্তিন সিনকোভিচ ও ভ্যালেন্ত সিনকোভিচ পা হড়কাননি। প্রত্যাশার চাপ সামলে তারা অর্জন করেছেন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। ৬ মিনিট ১৫.২৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে সোনার পদক গলায় ঝুলিয়েছেন তারা। ১.২৯ সেকেন্ড পিছিয়ে থেকে রুপা জিতেছে রোমানিয়া। ৬ মিনিট ১৯.৮৮ সেকেন্ড সময় নেওয়া ডেনমার্ক পেয়েছে ব্রোঞ্জ।
Comments