মিচেল-নিশামের ঝড়ে ইংল্যান্ডকে বিদায় করে ফাইনালে নিউজিল্যান্ড

মঈন আলী ও ডাভিড মালানের ব্যাটে চড়ে ভালো পুঁজি পেল ইংল্যান্ড। সেটা নিয়ে লড়াইয়ে বোলিংয়ে নেমে তাদের শুরুটাও হলো দারুণ। দ্রুত সাজঘরে ফিরলেন নিউজিল্যান্ড ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। তবে চাপের মুখে ড্যারিল মিচেল ও ডেভন কনওয়ের বড় জুটিতে ঘুরে দাঁড়াল তারা। এরপর উইকেটে গিয়েই ঝড় তুললেন জিমি নিশাম। তিনি আউট হলেও দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়লেন মিচেল। ফলে ইংলিশদের বিদায় করে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল কিউইরা।
বুধবার আবুধাবিতে আসরের রোমাঞ্চকর প্রথম সেমিফাইনালে ৫ উইকেটে জিতেছে উইলিয়ামসনের দল। ওয়েন মরগ্যানরা আগে ব্যাটিংয়ে নেমে তুলেছিলেন ৪ উইকেটে ১৬৬ রান। জবাবে ৬ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটে ১৬৭ রান তুলে জয় নিশ্চিত করেছে নিউজিল্যান্ড। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের রান তাড়ার রেকর্ডও গড়েছে তারা। আগে মাত্র একবারই দেড়শ ছাড়ানো লক্ষ্য পেরিয়েছিল দলটি।
সবশেষ ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল এই দুদল। সুপার ওভারেও ম্যাচ টাই হওয়ার পর বেশি বাউন্ডারি মারার সুবাদে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইংল্যান্ড। এবারের লড়াইয়ে জিতে সেই গভীর ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দিয়েছে নিউজিল্যান্ড।
দুর্দান্ত ইনিংসে ওপেনার মিচেল ৪৭ বলে ৭২ রানে অপরাজিত থাকেন। তার ব্যাট থেকে আসে সমান ৪টি করে ছয় ও চার। চারে নামা কনওয়ে খেলেন ৩৮ বলে ৪৬ রানের কার্যকর ইনিংস। তিনি মারেন ৫ চার ও ১ ছয়। ছয় নম্বরে উইকেটে যাওয়া নিশাম আগ্রাসন চালিয়ে মাত্র ১১ বলে ১ চার ও ৩ ছয়ের সাহায্যে করেন ২৭ রান।
শেষ চার ওভারে কিউইদের দরকার ছিল ৫৭ রান। তখন ম্যাচের পাল্লা হেলে ছিল ইংলিশদের দিকে। কিন্তু পেসার ক্রিস জর্ডানের করা ১৭তম ওভারে বিস্ফোরণ ঘটান নিশাম। ওই ওভার থেকে ২ ছক্কা ও ১ চারে আসে ২৩ রান।
এরপর মিচেলও যোগ দেন তাণ্ডবে। পরের ওভারে ১৪ রান আসলেও নিশামকে বিদায় করেন লেগ স্পিনার আদিল রশিদ। ততক্ষণে অবশ্য লক্ষ্য চলে আসে নিউজিল্যান্ডের নাগালে। এরপর ক্রিস ওকসের করা ১৯তম ওভারে ২ ছক্কা ও ১ চার মেরে ম্যাচ শেষ করে দেন মিচেল।
লক্ষ্য তাড়ায় তৃতীয় ওভারে দলীয় ১৩ রানে আউট হন গাপটিল ও উইলিয়ামসন। দুজনকেই ফেরান ওকস। গাপটিল ৩ বলে ৪ করে লিডিং এজ হয়ে ধরা পড়েন মঈনের হাতে। ডট বলের চাপ নিতে না পেরে উদ্ভাবনী শটে রশিদের তালুবন্দি হন উইলিয়ামসন। তিনি ১১ বলে করেন ৫ রান।
তৃতীয় উইকেটে মিচেল ও কনওয়ে ৬৭ বলে ৮২ রান যোগ করেন। শুরুতে দেখেশুনে খেললেও থিতু হওয়ার পর রানের চাকায় গতি দেন তারা। স্পিনার লিয়াম লিভিংস্টোন কনওয়েকে বিদায় করে ইংল্যান্ডকে দেন ব্রেক থ্রু। বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হন তিনি। এরপর গ্লেন ফিলিপসকেও টিকতে দেননি লিভিংস্টোন। ৪ বলে ২ করে স্যাম বিলিংসের হাতে ক্যাচ দেন তিনি।
তবে ভড়কে না গিয়ে উইকেটে নেমে নিশাম খেলেন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। আর নিজের সেরাটা যেন শেষের জন্য জমিয়ে রেখেছিলেন মিচেল! ইংলিশদের লিভিংস্টোন ২২ ও ওকস ৩৬ রানে নেন ২টি করে উইকেট।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকে নিয়মিত বাউন্ডারি আদায় করে নিতে থাকে ইংলিশরা। দুই অভিজ্ঞ পেসার টিম সাউদি-ট্রেন্ট বোল্ট মিলে পাঁচ ওভার করার পর বোলিংয়ে পরিবর্তন আনেন উইলিয়ামসন। তাতে মেলে সাফল্য। আক্রমণে এসে প্রথম বলেই জনি বেয়ারস্টোকে ফেরান আরেক গতি তারকা অ্যাডাম মিলনে। মিড অফে সামনে ঝাঁপিয়ে দারুণ এক ক্যাচ লুফে নেন উইলিয়ামসন।
বেয়ারস্টোর বিদায়ে ভাঙে ৩৭ রানের উদ্বোধনী জুটি। ১৭ বলে ১৩ রান আসে তার ব্যাট থেকে। রিভার্স সুইপ করে রান পাচ্ছিলেন আরেক ওপেনার বাটলার। কিন্তু ওই শট খেলতে গিয়েই ঘটে বিপত্তি। নবম ওভারে স্পিনার ইশ সোধির বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে যান। রিভিউ নিলেও কাজ হয়নি। ২৪ বলে ৪ চারের সাহায্যে তিনি করেন ২৯ রান।
ইংলিশদের আরও চেপে ধরতে পারত নিউজিল্যান্ড। নিশামের করা পরের ওভারে মালানের দুরূহ ক্যাচ ফেলে দেন উইকেটরক্ষক ডেভন কনওয়ে। তখন ১০ রানে খেলছিলেন তিনি। ১৪তম ওভারে ব্যক্তিগত ৩১ রানে ফের জীবন পান মালান। জোরালো ফিরতি ক্যাচ হাতে জমাতে পারেননি মিলনে।
ওই ওভারের শেষে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ছুঁয়ে ফেলে শতরান। পরের ওভারে পূরণ হয় মঈনের সঙ্গে তার জুটির ফিফটি। সেখানে অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন মালান। তবে আক্রমণে ফেরা সাউদির প্রথম ডেলিভারিতে ছক্কা মারার পরপরই সাজঘরের পথ ধরতে হয় তাকে। এবার ক্যাচ নিতে ভুল করেননি কনওয়ে। এতে ভাঙে ৪৩ বলে ৬৩ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি। মালান ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৩০ বলে করেন ৪১ রান।
শুরুতে ব্যাটে-বলে ভুগছিলেন মঈন। সময় নিয়ে থিতু হওয়ার পর হাত খুলতে শুরু করেন তিনি। উপযুক্ত পরিস্থিতি পেয়ে মারমুখী মেজাজ দেখান লিভিংস্টোন। এই জুটিতে আসে ২৪ বলে ৪০ রান।
ইনিংসের শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে নিশামের শিকার হন লিভিংস্টোন। লং অনে মিচেল স্যান্টনারের হাতে ধরা পড়ার আগে ১০ বলে একটি করে চার-ছয়ে ১৭ রান করেন তিনি। পরের বলে চার মেরে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন মঈন।
এক পর্যায়ে, মঈনের রান ছিল ১৭ বলে ১৭। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থাকেন ৩৭ বলে ৫১ রানে। তার ব্যাট থেকে আসে ৩ চার ও ২ ছক্কা। মরগ্যান অপরাজিত থাকেন ২ বলে ৪ রানে। শেষ ছয় ওভারে ইংল্যান্ড তোলে ৬৬ রান। নিউজিল্যান্ডের হয়ে সাউদি, নিশাম, সোধি ও মিলনে নেন একটি করে উইকেট। তবে খরুচে ছিলেন বোল্ট। চার ওভারে ৪০ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন তিনি।
আগামী ১৪ নভেম্বর দুবাইতে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া কিংবা পাকিস্তানকে মোকাবিলা করবে নিউজিল্যান্ড। এই দুদল আগামীকাল বৃহস্পতিবার মুখোমুখি হবে পরস্পরের।
Comments