জেন্টলসম্যান'স গেম এবং একজন মিচেলের উদারতা

ছবি: টুইটার

ক্রিকেটকে বলা হয়ে থাকে জেন্টলম্যান'স গেম অথবা ভদ্রলোকের খেলা। বর্তমান সময়ে মাঠে আগ্রাসন দেখানোর যুগেও এই ঐতিহ্য সত্যিকার অর্থে যারা ধরে রেখেছে, সেই দলটির নাম নিউজিল্যান্ড। আরও একবার তারা প্রমাণ রেখেছে কেন তাদের স্পোর্টসম্যানশিপ নিয়ে তাবৎ দুনিয়ার ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে কোনো প্রশ্ন নেই। তাই তো দলকে ফাইনালে তোলার 'নায়ক' হওয়ার আগেই অনেকের চোখে 'নায়ক' বনে যান ড্যারিল মিচেল।

আবুধাবিতে স্টেডিয়ামে তখন রোমাঞ্চের সব রসদ প্রস্তুত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠতে হাতে ৬ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডের চাই ১৮ বলে ৩৪ রান। অর্থাৎ প্রতিটি বলই তখন তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি রানই। আর সেসময়ই স্পোর্টসম্যানশিপের দারুণ এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন মিচেল।

পেন্ডুলামের মতো ম্যাচের ভাগ্য যখন এদিক-ওদিক হেলছে, তখন ১৮তম ওভার করতে বল হাতে তুলে নেন ইংল্যান্ডের লেগ স্পিনার আদিল রশিদ। তার প্রথম বলটি সোজা ব্যাটে খেলেন স্ট্রাইকে থাকা জিমি নিশাম। রশিদ যান বল থামাতে, নন-স্ট্রাইকে থাকা মিচেল যান রান নিতে। দুজন দুজনের গতিপথে এসে পড়ায় বল ধরা সম্ভব হয়নি রশিদের পক্ষে। বরং সেটা চলে যায় লং-অনের দিকে।

সিঙ্গেল নেওয়ার তখন সুবর্ণ সুযোগ। বলের সঙ্গে প্রয়োজনীয় রানের ব্যবধান প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় সুযোগটা হয়তো লুফে নিত যেকোনো দলই। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা অন্য ধাতুতে গড়া। মিচেল অনুভব করেন যে অনিচ্ছা সত্ত্বেও রশিদের সামনে এগিয়ে গিয়ে তাকে বল থামাতে বাধা দিয়েছেন। তাই সিঙ্গেল নেওয়া থেকে বিরত থাকেন! অথচ নিশাম ততক্ষণে পৌঁছে গিয়েছিলেন ক্রিজের মাঝপথে। হাত উঁচিয়ে তাকে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন মিচেল।

বুধবারের এই রুদ্ধশ্বাস সেমিফাইনাল ম্যাচে স্কাই স্পোর্টসের হয়ে ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক নাসের হুসেইন। মিচেল যখন রান নিতে অস্বীকৃতি জানান, তখন তিনি বলে ওঠেন, 'এটাই হলো নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের স্বরূপ, আসলেই এটা। খুব সহজেই এক রান নেওয়া যেত। কিন্তু নন-স্ট্রাইকার (মিচেল) বললেন, "না, আমি রশিদের গতিপথে বাধা দিয়েছিলাম।" যদি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটকে সংক্ষেপে বোঝাতে হয়, তাহলে এটাই হলো সেটা।'

শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড হেরে গেলে মিচেলের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে হয়তো জোর তর্ক-বিতর্ক জমত। তবে তেমনটা ঘটেনি। মিচেলই ঘটতে দেননি। নিশাম ঝড় তুলে ১১ বলে ২৭ রান করে সাজঘরে ফেরার পরও কিছুটা শঙ্কায় ছিল কিউইরা। তবে ১২ বলে ২০ রানের সমীকরণ মিচেল মিলিয়ে দেন ৬ বল বাকি থাকতেই। ৪৭ বলে ৭২ রানের অপরাজিত ইনিংসে তার হাতে ওঠে ম্যাচসেরা পুরস্কারও।
 

Comments

The Daily Star  | English

Govt publishes gazette of 1,558 injured July fighters

Of them, 210 have been enlisted in the critically injured "B" category, while the rest fall under the "C" category of injured fighters

1h ago