টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া

mitchell marsh
মিচেল মার্শ। ফাইল ছবি: আইসিসি

বাকিদের নিষ্প্রভ থাকার দিনে একা হাতে দলকে টেনে অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলেছিলেন কেইন উইলিয়ামসন। অধিনায়কের চওড়া ব্যাটে চ্যালেঞ্জিং পুঁজিও মিলেছিল নিউজিল্যান্ডের। কিন্তু রান তাড়ায় ডেভিড ওয়ার্নার, মিচেল মার্শ মিলে কাজটা করে দিলেন অতি সহজ। বড় রান তাড়াতেও নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়েই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হলো অস্ট্রেলিয়া। বুঝিয়ে দিল বড় মঞ্চে তারা ভিন্ন এক দল 

রোববার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফাইনালের ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত জমল না। নিউজিল্যান্ডের ১৭২ রান ৭ বল আগে টপকে অস্ট্রেলিয়া জিতল  ৮  উইকেটে। সপ্তম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এসে প্রথম শিরোপার স্বাদ পেল ওয়ানডে বিশ্বকাপের সফলতম দলটি। 

৫০ বলে ৭৭ রান করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন মার্শ। জেতার ভিত তৈরি করে ওয়ার্নার করে যান ৩৮ বলে ৫৩ রান। এর আগে কিউইদের নাগালে আটকে রাখার কাজ করেন জশ হ্যাজেলউড। এই পেসার ৪ ওভার বল করে ১৬ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। দল হারলে অবশ্য তিনি হতে পারতেন ভিলেনও। মিচেল স্টার্কের বলে ২১ রানে থাকা উইলিয়ামসনের ক্যাচ ফেলেছিলেন তিনিই। শেষ পর্যন্ত উইলিয়ামসন থামেন ৪৮ বলে ৮৫ করে। ব্যাটররা কোন ভুল না করায় হ্যাজেলউডকে পুড়তে হয়নি আক্ষেপে। বরং ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও চ্যাম্পিয়ন হতে না পারার যন্ত্রনায় বিদ্ধ উইলিয়মসনরা। 

David Warner
জয়ের ভিত গড়ে দেন ওয়ার্নার

বড় রান তাড়ায় নেমে প্রথম ওভারে নিরব থাকার পর দ্বিতীয় দুই চারে শুরু ওয়ার্নারের, তৃতীয় ওভারে এক চারের পর আরেকটি চেষ্টায় অধিনায়ক ফিঞ্চের বিদায়। বোল্টের বলে ডিপ মিড উইকেট থেকে অনেকখানি ছুটে তার ক্যাচ জমান ড্যারেল মিচেল।

এই ধাক্কা বুঝতে দেননি মার্শ। ক্রিজে নেমেই চড়াও হন তিনি। অ্যডাম মিলনে মুখোমুখি প্রথম তিন বলে এক ছক্কা, দুই চার মেরে শুরু তার।

ওয়ার্নারও চালাতে থাকেন রান বাড়ানোর কাজ। দ্বিতীয় উইকেটে ৩৫ বলেই আসে ৫০ রান। লেগ স্পিনার ইশ সোধিকেও থিতু হতে দেননি তারা। প্রথম ১০ ওভারে স্কোরবোর্ডে ৮২ চলে আসে অস্ট্রেলিয়ার। শেষ ১০ ওভারে দরকার দাঁড়ায় ৯১।

ড্রিংকস বিরতির পর আরও ঝাঁজালো অজিরা। জিমি নিশাম আসতে তাকে ছক্কায় উড়ান মার্শা। ওয়ার্নার তাকে আরেক ছক্কায় উড়িয়ে ৩৪ বলে পুরো করেন ফিফটি। দুজনেই যখন খেলা অনেকটা মুঠোয় নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই ব্রেক থ্রো আনেন বোল্ট। ৩৮ বলে ৫৩ করা ওয়ার্নারকে বোল্ড করে দেন তিনি। ৫৯ বলে ৯২ রানের বিস্ফোরক জুটি থামিয়ে তখন লড়াইয়ে ফেরার আশা কিউইদের।

মার্শ পরিস্থিতি সামলে ৩১ বলে ছক্কা মেরে পৌঁছান ফিফটিতে। তার সঙ্গে যোগ দিয়ে ম্যাক্সওয়েল খেলতে থাকেন আগ্রাসী মেজাজে। কাজটা শেষ করতে একদম দেরি করেননি তারা। খেলা নিতে দেননি শেষ ওভারে। পুরো আসরে তেমন কিছু করতে না পারলেও ফাইনালের মঞ্চে ১৮ বলে ২৮ রানে অপরাজিত থাকেন ম্যাক্সওয়েল।

kane williamson
বৃথা গেল উইলিয়ামসনের লড়াই

টস হেরে ব্যাট করতে গিয়ে শুরুতেই আগ্রাসী হয়েছিলেন মার্টিন গাপটিল। স্পিনে দুর্বল ড্যারেল মিচেলও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ছক্কায় উড়িয়ে বড় কিছুর আভাস দিয়েছিলেন।

তবে হ্যাজেলউডের শিকার হয়ে মিচেল ফেরার পর অ্যাপ্রোচ বদলে যায় গাপটিলের। অধিনায়ক উইলিয়ামসন ক্রিজে এসে থিতু হতে সময় নিচ্ছিলেন, গাপটিল সেই সময়টা রানের চাকা বাড়াতে পারেননি, টাইমিং পেতে ধুঁকছিলেন তিনি।

থিতু হয়েই অবশ্য ফিরতে পারতেন উইলিয়ামসন। স্টার্কের বলে ফাইন লেগে তার সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন হ্যাজেলউড। এরপর সেই স্টার্কের উপরই রানের বন্যা বইয়ে দেন কিউই কাপ্তান।

তার আগে ৩৫ বল খেলে ২৮ রান করে অ্যাডাম জাম্পার বলে স্লগ সুইপে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ উঠিয়ে বিদায় নেন গাপটিল।

josh hazlewood
১৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে আটকে রাখেন জশ হ্যাজেলউড

প্রথম ওভারে দারুণ করা স্টার্ক নিজের দ্বিতীয় ওভারেই দেন ১৯ রান। অবশ্য হ্যাজেলউড ক্যাচ নিতে পারলে উইকেট তো পেতেন, রানও এত আসত না।

ম্যাক্সওয়েলকে দুই ছক্কায় উড়িয়ে ৩২ বলে ফিফটি তুলেন উইলিয়ামসন। স্টার্কের তৃতীয় ও ইনিংসের ১৬তম ওভারের একটি বল ছাড়া সবগুলো বলই বাউন্ডারিতে ছাড়া করেন তিনি। চার বাউন্ডারির আর এক ছক্কায় ওই ওভার থেকেই আনেন ২২ রান। ৩ ওভারেই রান দেওয়ার ফিফটি হয়ে যায় স্টার্কের।

উইলিয়ামসের ব্যাটে এদিন ছিল আগ্রাসন আর নান্দনিকতার অদ্ভুত মিশেল। স্টার্কের বল বলগুলোও টাচ শটে বাউন্ডারিতে পাঠাচ্ছিলেন তিনি।

অজিদের অনেকটা অসহায় বানিয়ে দলকে বড় রানের দিকে নিয়ে যান বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটারদের একজন। তৃতীয় উইকেটে গ্লেন ফিলিপসের সঙ্গে ৩৭ বলে ৬৮ রানের জুটি আসে উইলিয়ামসনের। যাতে উইলিয়ামসন একাই ২০ বলে করেন ৪৬। ফিলিপস ১৭ বলে ফেরেন ১৮ রান করে। শেষ দিকে অবশ্য পর্যাপ্ত রান আসেনি।নিশাম ৭ বলে ১৩ করলে আরও কিছু রান যোগ হয়। তবে শেষ পর্যন্ত  এই উইকেটে অন্তত ২০ রান কম করেছে কিউইরা। সেই ঘাটতি স্পষ্ট টের পাওয়া গেছে তাদের বোলিংয়ে। বিশেষ করে পরে বল করতে হওয়ায় শিশিরের ঝামেলাও পোহাতে হয়েছিল। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

নিউজিল্যান্ড:  ২০ ওভারে ১৭২/৪ (গাপটিল ২৮, মিচেল ১১, উইলিয়ামসন ৮৫, ফিলিপস ১৮, নিশাম ১৩*, সেইফার্ট ৮* ; স্টার্ক ০/৬০, হ্যাজেলউড ৩/১৬, ম্যাক্সওয়েল ০/২৮, কামিন্স ০/২৭, জাম্পা ১/২৬, মার্শ ০/১১)

অস্ট্রেলিয়া: ১৮.৫ ওভারে ১৭৩/২ (ওয়ার্নার ৫৩, ফিঞ্চ  ৫,  মার্শ ৭৭*  , ম্যাক্সওয়েল ২৮* ; বোল্ট ২/১৮ ,  সাউদি ০/৪৩, মিলনে ০/৩০, সোধি ০/৪০, স্যান্টনার ০/২৩ , নিশাম ০/১৫)

ফল: অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অফ দ্য ম্যাচ: মিচেল মার্শ।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Chief Adviser suggests minimum voter age of 17

"If the majority of the people of the country like the age to be recommended by the Commission, I will accept it"

2h ago