আজ শুরু দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ, আসরটি অনেকের কাছে দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ বলে সমাদৃত। আজ (১ অক্টোবর) থেকে মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে শুরু হতে যাচ্ছে এ আঞ্চলিক আধিপত্যের লড়াই। আগামী ১৬ দিন দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল ভক্তদের উপভোগ করতে পারবেন এ ক্রীড়াযজ্ঞ। আসরটির ১৩তম সংস্করণে মোকাবেলা করছে এ অঞ্চলের পাঁচটি দেশ - সাতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত, স্বাগতিক ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মালদ্বীপ, উঠতি শক্তি নেপাল, এক সময়ের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা এবং অবশ্যই বাংলাদেশ, যারা ১৮ বছর আগে এ শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছিল।
সুনীল ছেত্রী, আলী আশফাক এবং জামাল ভূঁইয়ার মতো আইকনিক খেলোয়াড়দের পাশাপাশি আহমদ ওয়াজিম রাজিক, আনিসুর রহমান এবং অনিরুদ্ধ থাপার মতো উঠতি তারকারাও এই রাউন্ড-রবিন সংস্করণের প্রতিযোগিতায় একে অপরের বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ রেখে লড়াই করার সুযোগ পাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত কোন দুটি দল ১৬ অক্টোবর ফাইনাল খেলবে, ১৬ দিনের রোমাঞ্চকর লড়াই শেষেই তা জানা যাবে। তবে আপাতত আপনার প্রিয় দল এবং ফুটবলারদের উপর চোখ রাখুন।
১৩তম সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ
দল: ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা।
ভেন্যু: ন্যাশনাল ফুটবল স্টেডিয়াম, মালে।
বাংলাদেশ: দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান কি হবে?
ফিফা র্যাঙ্কিং - ১৮৯
অংশগ্রহণ - ১১
চ্যাম্পিয়ন - ১ (২০০৩)
রানার্স-আপ- ২ (১৯৯৯, ২০০৫)
তারকা খেলোয়াড় - জামাল ভূঁইয়া
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের সেরা সময় ছিল ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত, যখন লাল-সবুজ জার্সি ধারীরা টানা তিনটি ফাইনাল খেলে এবং ২০০৩ সালে নিজেদের মাঠে শিরোপাও জিতে নেয়। তবে সে সকল দিন অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। গত চারটি সংস্করণে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে তাদের। তার উপর আরেকটি টুর্নামেন্টের আগে, দীর্ঘদিনের কোচ জেমি ডে'র বিদাইয়ে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে রয়েছে দলটি। তবে অন্তর্বর্তীকালীন কোচ অস্কার ব্রুজনের অধীনে এবং তরুণ ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের দারুণ সমন্বয়ে এবার ফাইনালে উঠে ১৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটানোর স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ।
ভারত: অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে
ফিফা র্যাঙ্কিং - ১০৭
অংশগ্রহণ - ১২
চ্যাম্পিয়নস - ৭ (১৯৯৩, ১৯৯৭, ১৯৯৯, ২০০৫, ২০০৯, ২০১১, ২০১৫)
রানার্স-আপ - ৪ (১৯৯৫, ২০০৮, ২০১৩, ২০১৮)
তারকা খেলোয়াড় - সুনীল ছেত্রী
নিঃসন্দেহে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের পরাশক্তি। তাদের ক্যাবিনেটেই সর্বাধিক শিরোপা রয়েছে এবং ফিফা র্যাঙ্কিংয়েও বাকি প্রতিযোগীদের চেয়ে অনেক উপরে তারা। ২০০৩ সালে আসরটির পঞ্চম সংস্করণে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের কাছে হেরে সেমি-ফাইনালে বিদায় নিয়েছিল ব্লু টাইগাররা। সেই একটি আসর ছাড়া প্রতিটি আসরের ফাইনাল খেলেছে দলটি। এর পরের সাতটি ফাইনালে ধারাবাহিকভাবে খেলেছে তারা এবং চারবার চ্যাম্পিয়নও হয়। এমনকি অনূর্ধ্ব-২৩ দল খেলিয়েও তিনটি শিরোপা জিতে নেয় তারা। ইগোর স্টিম্যাকের নির্দেশনায়, সুনীল ছেত্রী অ্যান্ড কোং আরও একবার জয়ের লক্ষ্যেই নামবে।
মালদ্বীপ: ঘরের মাঠে শিরোপা ধরে রাখার লড়াই
ফিফা র্যাঙ্কিং - ১৫৮
অংশগ্রহণ - ১০
চ্যাম্পিয়ন - ২ (২০০৮, ২০১৮)
রানার্স-আপ - ৩ (১৯৯৭, ২০০৩, ২০০৯)
তারকা খেলোয়াড় - আলী আশফাক
একসময় এ অঞ্চলের খুব সাধারণ মানের ফুটবল দল মালদ্বীপ, ধীরে ধীরে নিজেদেরকে ভারতের পর দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ক্ষুদ্র দ্বীপ দেশটি পাঁচবার ফাইনাল খেলে দুবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে। অন্যতম সেরা খেলোয়াড় আলী আশফাক এ দেশ থেকে উঠে এসেছেন এবং এই অঞ্চলের সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ২০১৮ সালে দেশটির দ্বিতীয় সাফল্যে অবশ্য খেলতে পারেননি। ২০০৮ সালে যেবার প্রথম শিরোপা জিতেছিল দলটি সেবার শ্রীলঙ্কার সঙ্গে চ্যাম্পিয়নশিপের সহ-আয়োজক ছিল মালদ্বীপ। এবার আসরটির একমাত্র আয়োজক তারা এবং শিরোপার জন্য শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীও।
নেপাল: দীর্ঘস্থায়ী আন্ডারঅ্যাচিভার
ফিফা র্যাঙ্কিং - ১৬৮
অংশগ্রহণ - ১২
চ্যাম্পিয়ন - কখনো না
রানার্স-আপ - কখনো না
তারকা খেলোয়াড় - রোহিত চান্দ
তর্কসাপেক্ষে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে নেপালের ভক্তরা সবচেয়ে আবেগপ্রবণ। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাদের দলের পারফরম্যান্স ভক্তদের উচ্চ প্রত্যাশার সঙ্গে খুব কমই মিলেছে। এই একটি দল যারা কখনোই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠতে পারেনি, জেতা তো অনেক দূরের। শেষ চারটি সংস্করণে সেমিফাইনালে তাদের যাত্রা শেষ হয়েছে। তবে গোর্খালীরা সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপ এবং এএফসি সলিডারিটি কাপের মতো প্ল্যাটফর্মে সাফল্যের স্বাদ পেয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচগুলোতেও প্রশংসনীয় পারফরম্যান্স করা দলটির দায়িত্বে থাকা আবদুল্লাহ আলমুতাইরি মনে করছেন এবার অন্তত তাদের ফাইনালে উঠার সব উপাদান রয়েছে দলটিতে।
শ্রীলঙ্কা: নিজেদের ফিরে পাওয়ার লড়াই
ফিফা র্যাঙ্কিং - ২০৫
অংশগ্রহণ - ১২
চ্যাম্পিয়ন - ১ (১৯৯৫)
রানার্স-আপ - ১ (১৯৯৩)
তারকা খেলোয়াড় - ডিলন ডি সিলভা
১৯৯৩ এবং ১৯৯৫ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম দুটি সংস্করণে বেশ প্রভাবশালী দলই ছিল শ্রীলঙ্কা। সে দুই আসরে ফাইনাল খেলে একবার শিরোপাও জিতেছিল তারা। কিন্তু তখন থেকে দ্বীপপুঞ্জটি টুর্নামেন্টের পরবর্তী ১০ সংস্করণে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ২০০৮ এবং ২০০৯ সালে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয়, এরপর বাকি আসরে তো গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় তাদের। তবে ইংল্যান্ড ভিত্তিক মিডফিল্ডার মারভিন হ্যামিল্টন, কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্স উইঙ্গার ডিলন ডি সিলভা এবং জার্মানি ভিত্তিক আহমেদ ওয়াজিম রাজিককে অন্তর্ভুক্তিতে গড়া শ্রীলঙ্কা বর্তমানে যে কোনো দলের জন্যই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
Comments