দুই ওপেনারের সঙ্গেই পেরে উঠল না বাংলাদেশ
স্লগ ওভারে বিগ হিটিংয়ের অভাব, মাঝারি সংগ্রহ এরপর নির্বিষ বোলিং। মুশফিকুর রহিমের ব্যাটিং ছাড়া প্রায় বাকিটা সময়ই হতাশার গল্প। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। প্রথম ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে স্রেফ উড়ে গেছে বাংলাদেশ। টাইগারদের দেওয়া ২৭৯ রানের টার্গেট প্রোটিয়া দুই ওপেনারই মামুলি বানিয়ে ছেড়েছেন। টার্গেটে পৌঁছাতে কোন উইকেটই খোয়াতে হয়নি তাদের।এমনকি খেলার জন্য তখনো পড়েছিল ৪৩টি বল।এই জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল ফাফ ডু প্লেসির দল।
বাংলাদেশকে উড়িয়ে দেওয়ার ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে রেকর্ড ওপেনিং জুটি গড়েছেন কুইন্টেন ডি কক ও হাশিম আমলা। এর আগে রেইলি রুশো আর হাশিম আমলার ছিল ২৪৭ রানের জুটি। তা হাওয়ায় উড়ে গেছে বাংলাদেশের বোলারদের ব্যর্থতায়। ওয়ানডে ইতিহাসেই যা তৃতীয় সেরা ওপেনিং জুটি। দলকে ম্যাচ জিতিতে ডি কক অপরাজিত ছিলেন ১৬৮ রানে। ২৬তম সেঞ্চুরি তুলে আমলা হাসি মুখে মাঠ ছেড়েছেন ১১০ রান করে।
কিম্বার্লির ডায়মন্ড ওভালে ২৭৮ রান মাঝারি সংগ্রহই। গতিময় আউটফিল্ড, উইকেটের বাউন্স শট খেলার জন্য ব্যাটসম্যানদের কাছে জিভে জল আসার মতো। তাতে নানামুখী বিতর্কে চাপে থাকা মুশফিকুর রহিম বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই করেছেন সেঞ্চুরি। কিন্তু তাকে লম্বা সময় সঙ্গ দিতে পারেননি কেউ। ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাত্র ৩১ বলে দেয় বাকিরা কতটা হেলায় হারিয়েছেন সুযোগ। স্লগ ওভারে দ্রুত রান আসার মতো দাপট দেখা যায়নি কারো ব্যাটেই। শেষ ১৭ ওভারে হাতে সাত উইকেট নিয়েও বাংলাদেশ তুলেছে মাত্র ১১৩ রান। যেখানে তিনশ ছাড়ানো সংগ্রহ গড়লেও দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং অর্ডারের সামনে যথেষ্ট নয়, সেখানে বাংলাদেশ থেমেছে তিনশ থেকে ২২ রান দূরে।
২৭৮ রানের পূঁজিতে হয়ত লড়াই করা কঠিন। তবে বোলারদের মধ্যে সে চেষ্টাও দেখা গেল না। কারো বোলিংয়েই ছিল না ঝাঁজ। দক্ষিণ আফ্রিকান দুই ওপেনার কুইন্টন ডি কক আর হাশিম আমলা হেসেখেলেই এগিয়েছেন লক্ষ্যের দিকে। উইকেটের চারপাশে চোখ জুড়ানো সব শট খেলেছেন ডি কক। ওদিকে আমলা মনোযোগ দিয়েছেন স্ট্রাইক রোটেটে। তিন অঙ্কে পৌঁছাতে মেরেছেন মাত্র আটটি চার। অথচ স্ট্রাইক রেট তখন একশোর বেশি!
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে বরং তুলনামূলক কিপটে ছিলেন ওই অধিনায়ক মাশরাফিই। পেসের সীমাবদ্ধতা নিয়েও লাইন লেন্থে ঠিক রাখার চেষ্টা করেছেন। পেসারদের মধ্যে কেবল তিনিই ছয়ের নিচে রান দিয়েছেন। নাসির হোসেন শেষ দিকে ডি ককের ক্যাচ না ফেললে একটা উইকেটও পেতে পারতেন টাইগার অধিনায়ক। ঠিক উল্টোটা দেখা গেছে তাসকিন আহমেদের বেলায়। এই পেসার প্রথম দুই ওভারেই দিয়েছেন ২৩ রান। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেও চিত্র বদলায়নি। আট ওভার বল করেই দিয়েছেন ৬১ রান। বিবর্ণ রুবেলকেও ছয় ওভারের বেশি বল করাতে পারেননি মাশরাফি। হতাশ করেছেন সাকিব আল হাসানও। তার তূণ থেকে বের হয়নি উইকেট নেওয়ার মতো কোন তীর। অভিষিক্ত সাইফুদ্দিন বেদম মার খেয়েছেন ডি ককদের হাতে। ব্রেক থ্রু আনতে নাসির হোসেন আর মাহমুদউল্লাহকে দিয়ে বল করিয়েও ফল পাননি মাশরাফি। প্রোটিয়া দুই ওপেনার সবাইকেই মাঝ ব্যাটে খেলেছেন। মার বল পেলে রক্ষে নেই, করেছেন সীমানা ছাড়া।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া বাংলাদেশের ইনিংস ওপেন করতে নামেন ইমরুল কায়েস ও লিটন দাস। চোটে পড়া তামিম নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দেশের মাঠে আগের সিরিজের সেরা সৌম্য সরকারও অফ ফর্মের কারণে বাইরে। নতুন ওপেনিং জুটি কি করে দেখার কৌতূহল ছিল সবার। শুরুতে বেশ ভালোই খেলছিলেন লিটন। চার বাউন্ডারিতে ২৯ বলে ২১ রান করে আউট হন তিনি। অপরদিকে প্রথম থেকেই নড়বড়ে থাকা ইমরুল করেছেন ৩১ রান। সবচেয়ে হতাশার পাওয়ার প্লেতেও এই রান তুলতে ৪৩ বল লাগিয়েছেন তিনি। আউট হয়ে যাওয়ায় শ্লথ ব্যাটিং পরে পুষিয়ে দেওয়ারও সুযোগ মেলেনি তার।
ইমরান তাহিরের গুগলিতে গড়বড় করার আগে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে চনমনেই ছিলেন সাকিব। তার ২৯ রানের ইনিংস থামার পর মাহমুদউল্লাহর কাছ থেকে বড় ইনিংস প্রত্যাশা করেছিল বাংলাদেশ। প্রথম বল থেকেই খেলছিলেনও ছন্দে। ২৭ বলে ২৬ রান করে মাহমুদউল্লাহ আউট হয়ে গেলে বড় সংগ্রহ করতে আসল ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। বিগ হিটার বলে খ্যাত সাব্বির রহমান মেটাতে পারেননি পরিস্থিতিতির দাবি। নাসির হোসেনের বিগ হিটিং সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন আছে আগে থেকে। তিনিও পারেননি। শেষ দিকে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ১১ বলে ১৬ করলে ২৮০ রানের কাছাকাছি যেতে পারে দল। কিন্তু টি-টোয়েন্টির যুগে তা যে একেবারেই মামুলি হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া গেছে খানিক পর। নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ ম্যাচটিই খেলল কিনা তা নিয়েই বোধহয় এখন গবেষণা হতে পারে। সে গবেষনায় রসদ যোগাবে একটা তথ্য। ২৭৮ রানের টার্গেট দিয়েও ১০ উইকেটে হারায় সবচেয়ে বাজে রেকর্ডটি যে এখন বাংলাদেশেরই। এর আগে ২৫৫ রান করেও ১০ উইকেটে হেরে রেকর্ডটি ছিল শ্রীলঙ্কার।
১৮ অক্টোবর পার্লে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে। সিরিজে টিকে থাকতে সে ম্যাচে জিততেই হবে মাশরাফি মর্তুজার দলকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২৭৮/৭ (৫০) (মুশফিক ১১০* ইমরুল ৩১; রাবাদা ৪/৪৩)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২৮২/০ (৪২.৫) (ডি কক ১৬৮*, আমলা ১১০*)
ম্যান অব দ্যা ম্যাচ: কুইন্টেন ডি কক
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ১০ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: দক্ষিণ আফ্রিকা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
Comments