প্রত্যাশার চাপ বেশি, বিশ্বকাপ প্রস্তুতির চাপ আরও বেশি

Mahmudullah
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ ব্যবধানে উড়িয়ে সিরিজ জেতার পর অনভিজ্ঞতায় ভরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের পাল্লা অনেকখানিই ভারি। কিউইদের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহর দল ৫-০ ব্যবধানে দাপট দেখিয়ে সিরিজ জিতবে এমন প্রত্যাশাই চড়া। কিন্তু প্রত্যাশা মানেই তো চাপ। সেই চাপটা ঘাড়ে নেওয়ার পাশাপাশি আসছে বিশ্বকাপের প্রস্তুতির হিসেব-নিকেশ থাকছে বড় আলোচনায়। এমন বাস্তবতায় আরেকটি সিরিজ খেলতে নামছে বাংলাদেশ।

নামে এটি বিশ্বকাপ প্রস্তুতির সিরিজ। অথচ বিশ্বকাপ স্কোয়াডের একজন সদস্যকেও এই সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে পাঠায়নি নিউজিল্যান্ড। এর থেকে পরিষ্কার গুরুত্বের দিক থেকে কিউইদের ভাবনার অবস্থান। কোভিড প্রটোকলের ধকলের সঙ্গে বাংলাদেশের অতি মন্থর উইকেটের ধরণও তাদের এই সিদ্ধান্তের বড় প্রভাবক বলে আলোচনা আছে।

বাংলাদেশের সেসব ভাবলে চলছে না। প্রতিপক্ষের স্কোয়াডের আলাপ আলাদা রেখে এটি স্বাগতিকদের জন্য নিখাদ বিশ্বকাপের প্রস্তুতির। বলা ভালো বিশ্বকাপের আগে শেষ প্রস্তুতি। সঠিক কম্বিনেশন খুঁজে বের করা থেকে শুরু করে ব্যাটসম্যান-বোলারদের আত্মবিশ্বাস তাজা করারও মিশন। তবে সেই বিষয়ে কতটা স্বস্তির জায়গা মিলবে তা নিয়ে আছে প্রশ্ন।

উইকেট নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি 

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জেতার পরও অস্বস্তি রয়ে গিয়েছিল বিস্তর। ব্যাটসম্যানরা কেউই পাননি রান। মূলত ব্যাটসম্যানরা রান পেতে পারেন এমন উইকেটই যে ছিল না। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও রান আসতে পারে এমন উইকেট মিলবে কিনা সেই ধোঁয়াশা কাটেনি। কোচ রাসেল ডমিঙ্গো আর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ দুজনেই ভালো উইকেটের প্রত্যাশা করছেন। আবার আবহাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে দুজনই রেখেছেন অনিশ্চয়তা।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও ব্যাটসম্যানরা আত্মবিশ্বাস ফেরাতে না পারলে বিশ্বকাপের আগে সেটা হবে বড় খচখচানির জায়গা।

হঠাৎ আলোচনায় উইকেটকিপিং

মুশফিকুর রহিমের অনুপস্থিতিতে গত দুই সিরিজে উইকেটের পেছনে নুরুল হাসান সোহান নিজের উপস্থিতি জানান দেন প্রবলভাবে। কিপিং দক্ষতার পাশাপাশি তার শরীরী ভাষা, উপস্থিত বুদ্ধি, দলকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা আলাদা করে নজর কাড়ে মানুষের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মুশফিক ফেরার পর তাই কৌতূহল তৈরি হয় কিপিং করবেন কে? সেই কৌতূহল বাংলাদেশের কোচ মেটান অদ্ভুত এক ভাবনার কথা জানিয়ে। এই সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচে কিপিং করবেন সোহান, পরের দুটিতে মুশফিক। এবং পারফরম্যান্স বিচার করে শেষটিতে বেছে নেওয়া হবে একজনকে। এই সিদ্ধান্ত জন্ম দেয় তুমুল আলোচনার। প্রক্রিয়া নিয়ে উঠে প্রশ্ন। পুরো সিরিজেই তাই স্বাভাবিকভাবে মানুষের চোখ থাকবে কিপিং গ্লাভসের দিকে।

বিশ্বকাপের দল 'অল সেট'

কোচ-অধিনায়ক দুজনই একমত- বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দল নিউজিল্যান্ড সিরিজ শুরুর আগেই দিয়ে দিলে ভালো হতো। তাদের দেওয়া খবর- ১৫ জনের বিশ্বকাপ স্কোয়াড চূড়ান্তই হয়ে গেছে। মাহমুদউল্লাহর ভাষায় যা- 'অল সেট'। অর্থাৎ কেবল ঘোষণাটাই বাকি। সেই ঘোষণাটা করে দিলে নির্ভার হয়ে খেলার সুযোগ থাকত ক্রিকেটারদের। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পারফরম্যান্স কাজেই বিশ্বকাপ স্কোয়াডে বিবেচনায় আসছে না। নিশ্চিতভাবে নির্বাচকদের এতে দ্বিমত। না হলে তো তারা দল জানিয়েই দিতেন। সিরিজের মাঝপথে বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণা হলে ফোকাসও সরে যেতে পারে সেদিকে। 

প্রতিপক্ষ কি আসলে এতই দুর্বল

মোস্তাফিজুর রহমানের বিশেষ ঘরনার পেস বোলিং আর বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণের বিষে নাজেহাল হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। মিরপুরের মন্থর উইকেটের ভাষা তারা একদম পড়তে পারেনি। বাংলাদেশে আসা নিউজিল্যান্ড দলটি নামে-ভারে অজিদের থেকে অনেক পিছিয়ে। অনভিজ্ঞতায় ভরা স্কোয়াডের টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা খুব সীমিত। খোদ অধিনায়ক টম ল্যাথাম সর্বশেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেছেন চার বছর আগে। এমনকি ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে সব শেষ ম্যাচ খেলেছেন আড়াই বছর আগে। সবচেয়ে অভিজ্ঞ কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের অভিজ্ঞতা ৩৬ ম্যাচের।

কিন্তু অভিজ্ঞতার এই ঘাটতি অন্যভাবে পূরণ করতে পারে তারা। বাংলাদেশে আসার আগে স্পিন বান্ধব উইকেটের বেশ কড়া প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে দলটি। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ দেখে বুঝেছে এখানে কীভাবে খেলতে হয়। কিউই স্কোয়াডের ক্রিকেটাররা মূলত ওয়ানডে সেটআপের। মারকাটারির টি-টোয়েন্টি হিটার তেমন কেউ নেই। এই ব্যাপারটাই তাদের জন্য শাপেভর হতে পারে।

মিরপুরের উইকেটে টম ল্যাথাম, হেনরি নিকোলসদের মতো ব্যাটসম্যানদের জন্য হতে পারে আদর্শ মঞ্চ। উইকেটে গিয়েই চালিয়ে না খেলে একটু থিতু হতে সময় নেন তারা। এমনটা খেলতে পারলে অস্ট্রেলিয়া থেকে ব্যাটিং ভাল করার কথা তাদের। তবে বোলিং বেশ দুর্বল। স্পিন বান্ধব উইকেটে খেলতে এসেছে তারা কেবল বিশেষজ্ঞ স্পিনার নিয়ে! সেই একজন এজাজ প্যাটেলের টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা মাত্র দুটি।  বাকি দুই স্পিনার রাচিন রবীন্দ্র আর কোল ম্যাকনহি মূলত ব্যাটসম্যান। অভিজ্ঞতাও নেই একদম। ব্যাটসম্যানরা রান এনে দিলেও এই বোলিং আক্রমণ খুব বড় হুমকি হওয়ার কথা না বাংলাদেশের জন্য। 

খেলা শুরুর সময়ে থাকছে তফাৎ

মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা শুরু হয়েছিল সন্ধ্যা ৬টায়। ভেন্যু এবারও মিরপুর থাকলেও সময় বদলে গেছে। ম্যাচ শুরু হবে বিকেল ৪টায়। কাজেই দিনের আলোতেই খেলা অনেকটাই হয়ে যাবে। ফ্লাডলাইটের আলোয় কম ব্যাটিং থাকায় ম্যাচের ছবিও কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। রাতের  বেলা কৃত্রিম আলোতে সাধারণত বল স্কিড করে, বিপদ বাড়ে ব্যাটসম্যানদের। এবার সেটা কম দেখা যেতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

‘We don’t have Aladin’s lamp to suddenly lower commodity prices’

Commerce adviser says after meeting with Turkish trade minister

1h ago