একাই লড়লেন আফিফ, বাকি ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় হারল বাংলাদেশ

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

আগের চার টি-টোয়েন্টির চেয়ে উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ছিল ভালো। কিন্তু উদ্বোধনী জুটির পতনের পর ২০ রানের মধ্যে আরও ৩ উইকেট হারাল বাংলাদেশ। এরপর আফিফ হোসেন একপ্রান্ত আগলে করলেন লড়াই। কিন্তু পেলেন না যোগ্য সঙ্গ। শেষদিকে ফের উইকেট পড়ল ঝটপট। ফলে ২৭ রানের হার দিয়ে সিরিজ শেষ করল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।

শুক্রবার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ২৭ রানে জিতেছে নিউজিল্যান্ড। তাদের তোলা ৫ উইকেটে ১৬১ রানের জবাবে চার পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামা বাংলাদেশ পুরো ওভার খেলে করতে পারে ৮ উইকেটে ১৩৪ রান। পাঁচে নেমে ৩৩ বলে ৪৯ রানে অপরাজিত থাকেন আফিফ।

আগের ম্যাচেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ফেলেছিল রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা। এই ম্যাচে হারায় সিরিজের ফল দাঁড়াল ৩-২।

চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি শুরু করে দেখেশুনে। তবে পঞ্চম ওভারে সাফল্য পায় কিউইরা। জায়গা করে খেলতে গিয়ে বেন সিয়ার্সের শিকার হন লিটন দাস। পয়েন্টে এক হাতে ক্যাচ নেন স্কট কাগলেইন। পুরো সিরিজে ব্যাট হাতে ব্যর্থ লিটন ফের করেন হতাশ। তার সংগ্রহ ১২ বলে ১০ রান।

পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেটে ৩৫ রান তোলা বাংলাদেশ এরপর টানা তিন ওভারে উইকেট হারায়। একাদশে ফেরা সৌম্য সরকারকে টিকতে দেননি কোল ম্যাককনকি। নাঈম শেখ বিদায় নেন থিতু হয়ে। তার ২১ বলে ২৩ রানের ইনিংসের ইতি টানেন বেন সিয়ার্স। রাচিন রবীন্দ্রর বলে বিলাসী শটে লং-অফে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের তালুবন্দি হয়ে দ্রুত ফেরেন মুশফিকুর রহিমও।

ফলে নবম ওভারে ৪৬ রানে ৪ উইকেট খোয়ায় স্বাগতিকরা। এতে ম্যাচের ভাগ্য হেলে পড়ে নিউজিল্যান্ডের দিকে। তবে পঞ্চম উইকেটে পাল্টা আক্রমণে বাংলাদেশকে আশার আলো দেখান আফিফ ও মাহমুদউল্লাহ।

দ্বাদশ ওভারে সিয়ার্সকে চার-ছক্কা মেরে হাত খোলেন আফিফ। এক ওভার পর বাঁহাতি স্পিনার ম্যাককনকিকে ছক্কায় সীমানাছাড়া করেন তিনি। সঙ্গে যোগ দেন মাহমুদউল্লাহও। আরেক বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেলও রেহাই পাননি। ওই ওভারেও আফিফ আনেন একটি করে চার-ছয়। তাতে বাংলাদেশের সংগ্রহ পৌঁছায় তিন অঙ্কে।

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

মাত্র ৩৩ বলে জুটির রান পেরিয়ে যায় পঞ্চাশ। শেষ ৩০ বলে হাতে ৬ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের প্রয়োজন দাঁড়ায় ৫৬ রান। এই সমীকরণ মেলানো অসম্ভব ছিল না। কিন্তু এরপরই শুরু হয় ফের ছন্দপতনের। মাত্র ৭ রানের মধ্যে সাজঘরে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ, নুরুল হাসান সোহান ও শামীম পাটোয়ারি। তাতে শেষ হয়ে যায় লক্ষ্য ছোঁয়ার সম্ভাবনা।

কাগলেইনের করা ১৬তম ওভারের প্রথম ৫ বলে মোটে ৩ রান আসার চাপ আলগা করতে গিয়ে সীমানার কাছে ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহ। ১৩ রানে বেঁচে যাওয়া বাংলাদেশ অধিনায়ক করেন ২১ বলে ২৩ রান।

পরের ওভারে এজাজের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে ফেরেন সোহান। রিভিউ নিলেও লাভ হয়নি। মারকুটে ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত শামীমের জন্য প্রস্তুত ছিল আদর্শ মঞ্চ। কিন্তু ঝড় তোলা দূরে থাক, হাঁসফাঁস করে ৫ বলে ২ করে জ্যাকব ডাফির ডেলিভারিতে বোল্ড হন তিনি।

২ চার মেরে তাসকিন আহমেদ বিদায় নেওয়ার পর বাঁহাতি আফিফ অপরাজিত থাকেন শেষ পর্যন্ত। তার ব্যাট থেকে আসে ২ চার ও ৩ ছক্কা। শেষ ৫ ওভারে ৪ উইকেট খুইয়ে বাংলাদেশ নিতে পারে কেবল ২৮ রান।

ব্ল্যাকক্যাপসদের হয়ে প্রায় সবাই করেন নিয়ন্ত্রিত বোলিং। উইকেট শিকারেও সম্মিলিত অবদান রাখেন তারা। ২টি করে উইকেট নেন এজাজ ও কাগলেইন। একটি করে উইকেট দখল করেন ডাফি, ম্যাককনকি, সিয়ার্স ও রবীন্দ্র।

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু ও শেষে তাণ্ডব চালায় নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। উদ্বোধনী জুটিতে কেবল ৫.৪ ওভারে ৫৮ রান তোলে দলটি। মাঝের ওভারগুলোতে রানের চাকা কিছুটা শ্লথ হয়ে পড়ে। তবে শেষ ৬ ওভারে ফের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে তারা যোগ করে ৬৫ রান।

ফিন অ্যালেন ২৪ বলের বিস্ফোরক ইনিংসে করেন ৪১ রান। অন্য ওপেনার রবীন্দ্রর ব্যাট থেকে আসে ১২ বলে ১৭। মাঝে হেনরি নিকোলস করেন ২১ বলে ২১ রান। তিনে নামা ল্যাথাম অধিনায়কোচিত ব্যাটিংয়ে ৩৭ বলে ৫০ করে অপরাজিত থাকেন। সিরিজে এটি তার দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি। আরেক অপরাজিত ম্যাককনকি খেলেন ১০ বলে ১৭ রানের ক্যামিও।

মূলত ল্যাথাম ও ম্যাককনকির ২১ বলে ৪৩ রানে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দেড়শ ছাড়িয়ে যায় কিউইরা। বাংলাদেশের পক্ষে শরিফুল ইসলাম ২ উইকেট পেলেও ছিলেন ভীষণ খরুচে। তিনি ৪ ওভারে দেন ৪৮ রান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউজিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৬১/৫ (অ্যালেন ৪১, রবীন্দ্র ১৭, ল্যাথাম ৫০*, ইয়াং ৬, ডি গ্র্যান্ডহোম ৯, নিকোলস ২১, ম্যাককনকি ১৭*; তাসকিন ১/৩৪, নাসুম ১/২৫, শরিফুল ২/৪৮, মাহমুদউল্লাহ ০/১৭, ০/১৭, সৌম্য ০/১৪, আফিফ ১/১৮, শামীম ০/৪)

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩৪/৮ (নাঈম ২৩, লিটন ১০, সৌম্য ৪, মুশফিক ৩, আফিফ ৪৯*, মাহমুদউল্লাহ ২৩, সোহান ৪, শামীম ২, তাসকিন ৯, নাসুম ৩; ডাফি ১/২৫, এজাজ ২/২১, কাগলেইন ২/২৩, ম্যাককনকি ১/২৫, সিয়ার্স ১/২১, রবীন্দ্র ১/১৯)

ফল: নিউজিল্যান্ড ২৭ রানে জয়ী।

সিরিজ: পাঁচ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ৩-২ ব্যবধানে জয়ী।

ম্যাচসেরা: টম ল্যাথাম (নিউজিল্যান্ড)।

সিরিজসেরা: নাসুম আহমেদ (বাংলাদেশ) ও টম ল্যাথাম (নিউজিল্যান্ড)।

Comments

The Daily Star  | English
BNP demands national election by December 2025

BNP to sue election officials, CECs of last three polls

A three-member BNP team, led by its Standing Committee Member Salahuddin Ahmed, will file the complaint

53m ago