ভোজ্যতেলের জাহাজ আটকে জ্বালানি তেল খালাস

প্রতীকি ছবি

ভোজ্যতেলের জেটিতে খালাস হচ্ছে জ্বালানি তেল। জেটি সংকটের কারণে তেল খালাস করতে পারছেন না ভোজ্যতেল আমদানিকারকরা। গত ৩ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এই পরিস্থিতি কর্ণফুলী নদীর ডলফিন জেটি-৩ এবং ৪ এ।

জ্বালানি তেলের জন্য নির্ধারিত জেটি ৩টির মধ্যে ২টি দুর্ঘটনার কারণে বিকল থাকায় ভোজ্যতেল খালাসের জেটিতে এখন জ্বালানি তেল খালাস করা হচ্ছে।

জ্বালানি তেলবাহী জাহাজকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে দিনের পর দিন চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে অপেক্ষা করছে ভোজ্যতেলবাহী জাহাজ। নির্দিষ্ট সময়ে ভোজ্যতেল খালাস করতে না পারায় অপেক্ষমাণ জাহাজগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণ (পোর্ট ডেমারেজ) দিতে হচ্ছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে ভোজ্যতেল খালাসের জন্য অপেক্ষায় আছে ৫টি মাদার ভেসেল।

নির্ধারিত সময়ে ভোজ্যতেল খালাস করতে না পারলে দেশের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা প্রসঙ্গে এস এ গ্রুপের (মুসকান ব্র্যান্ড) চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন আলম বলেন, 'জেটি সংকটের কারণে আমদানি করা ভোজ্যতেল জাহাজ থেকে যথাসময়ে খালাস করতে পারছি না। ভোজ্যতেলের জেটিতে এখন জ্বালানি তেল খালাস করা হচ্ছে। আর ভোজ্যতেলের জাহাজ বন্দরে ডেমারেজ দিচ্ছে। এতে দেশের বাজারে ভোজ্যতেল সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। আমরা যে হারে জাহাজের ডেমারেজ দিচ্ছি তাতে ভোজ্যতেলের দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। জ্বালানি তেল খালাসের জেটিগুলো দ্রুত সংস্কার করা না হলে আগামীতে এই সংকট আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।'

এ ব্যাপারে সরকারি সংস্থাগুলোর দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জানা যায়, বিপিসির নিয়ন্ত্রণাধীন পদ্মা, মেঘনা এবং যমুনা অয়েল কোম্পানির জন্য আমদানি করা জ্বালানি তেল খালাসের নির্ধারিত জেটি ডজ (ডলফিন জেটি)-৫, ডজ-৬ এবং ডজ-৭। এর মধ্যে গত জুলাই মাসে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় পদ্মা অয়েলের ডলফিন জেটি-৬। এরপর গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ঘাট হিসেবে পরিচিত ডলফিন জেটি-৫ এ ডিজেল বোঝাই মাদার ভেসেল নোঙ্গর করার সময় নিয়ন্ত্রণ হারালে জেটির ৪টি পিলার ভেঙে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জেটির তেল খালাসের যন্ত্রপাতি ও পাইপলাইন। বর্তমানে এই ২ জেটিতে কোনো ধরনের অপারেশনাল কার্যক্রম চলছে না।

এই ২টি দুর্ঘটনার পর জ্বালানি তেল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে ভোজ্যতেলের জন্য নির্ধারিত ডলফিন জেটি-৩ এবং ডলফিন জেটি-৪ এ আমদানিকৃত জ্বালানি তেল খালাস করা শুরু করে বিপিসি। গত ১ অক্টোবর থেকে ভোজ্যতেলের জেটিতে নোঙ্গর করছে জ্বালানি তেলের জাহাজ।

বিপিসি কর্মকর্তারা জানান, বিদেশ থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেল খালাসের জন্য জেটি ডজ-৫, ডজ-৬ এবং ডজ-৭ নির্ধারিত ছিল। এ ছাড়া পদ্মা, মেঘনা এবং যমুনা অয়েল কোম্পানির প্রধান স্থাপনা থেকে জ্বালানি তেল লাইটার জাহাজে ডেলিভারির জন্য এলজে-৩, এলজে-৪ এবং এলজে-৫ আলাদাভাবে ব্যবহার হয়ে থাকে।

বেসরকারিভাবে আমদানি করা ভোজ্যতেল খালাসের জন্য ডলফিন জেটি-৩ এবং ডলফিন জেটি-৪ নির্ধারিত। এই ২ জেটি থেকে লাইটার জাহাজে ভোজ্যতেল ডেলিভারিও দেওয়া হয়। অর্থাৎ ২টি জেটিতে ভোজ্যতেল লোড ও আনলোডের কাজ করা হয়।

ডলফিন জেটি-৪ ব্যবহার প্রসঙ্গে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের মহাব্যবস্থাপক আবদুল মোতালেব বলেন, 'যেহেতু এই জেটিটি ভোজ্যতেলের, তাই আমরা বিকল্প পাইপলাইন টেনে জ্বালানি তেল খালাস করছি। বিপিসি এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে এই জেটি ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে।'

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি ট্যাংক টার্মিনাল সাউথ এশিয়ান ট্যাংক টার্মিনালের (এসএটিটি) ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, 'টিকে গ্রুপ, সিটি গ্রুপ এবং বাংলাদেশ এডিবল অয়েল কোম্পানির ৩টি বড় জাহাজ ভোজ্যতেল খালাসের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে অপেক্ষা করছে। এসব জাহাজে ৪০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি ভোজ্যতেল রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে তেল খালাস করতে না পারায় জাহাজকে দৈনিক ডেমারেজ গুনতে হচ্ছে ২০ হাজার ডলার করে।'

তিনি আরও বলেন, 'বেসরকারি ট্যাংক টার্মিনাল থেকে ভোজ্যতেলে যথাসময়ে জাহাজে লোড-আনলোড করতে না পারলে দেশের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। গত কয়েকদিনে যে পরিমাণ জাহাজ ভাড়া বাবদ ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে তাতে খুচরা পর্যায়ে সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ৫ টাকা বেড়ে যেতে পারে। যতো দিন যাচ্ছে ভোজ্যতেলের জাহাজ বিলম্বিত হচ্ছে।'

বন্দর কর্মকর্তারা জানান, এমটি নর্থ ভ্যানগার্ড জাহাজ ৮ হাজার মেট্রিক টন এবং ডাব্লিউ ব্লুজম জাহাজ আরও ৮ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্যতেল নিয়ে সাগরে অপেক্ষা করছে। এ ছাড়াও এমটি আর্জেন্ট সানরাইজ ১০ হাজার মেট্রিক টন, এমটি নাভিজ ৮ ভায়োলেট ১৮ হাজার মেট্রিক টন এবং এমটি জি ডাব্লিউ ডলফিন ২২ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্যতেল নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছে। এই জাহাজগুলো বহির্নোঙ্গরে অবস্থান করছে।

অচল জেটিগুলো সংস্কার প্রসঙ্গে বিপিসির পরিচালক (অপারেশন) সৈয়দ মেহেদী হাসান বলেন, 'বিদেশি জাহাজের ধাক্কায় ডলফিন জেটি-৫ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাহাজটির স্থানীয় এজেন্ট প্রাইড শিপিংয়ের কর্মকর্তারা দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আমরা তাদের কাছে প্রায় ১৬ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়েছি। এ ব্যাপারে জাহাজ মালিক পক্ষের সঙ্গে আমাদের (বিপিসি) আলোচনা চলছে।'

তিনি আরও বলেন, 'ডলফিন জেটি-৬ মেরামতের জন্য বিপিসির পক্ষ থেকে নৌবাহিনী, খুলনা ডক ইয়ার্ড এবং চট্টগ্রাম ড্রাইডক কর্তৃপক্ষের কাছে কোটেশন চাওয়া হয়েছে। আশা করছি প্রতিষ্ঠানগুলোর কোটেশন পেলে আমরা দ্রুত মেরামত কাজ শুরু করতে পারবো।'

Comments

The Daily Star  | English
health reform

Priorities for Bangladesh’s health sector

Crucial steps are needed in the health sector for lasting change.

12h ago