ই-কমার্স প্রতারণা: প্রতিকার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা
সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ আদায় এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোন জোরালো প্রচেষ্টা না থাকায়, ১০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার শিকার হাজার হাজার গ্রাহক ও মার্চেন্টদের অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, আইন অনুযায়ী তাদের তেমন কিছু করার নেই। কারণ কিছু গ্রাহক ইতোমধ্যে ইভালি এবং ই-অরেঞ্জের মতো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ফান্ড কীভাবে পুনরুদ্ধার করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত এখন আদালত নেবেন।
তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মন্ত্রণালয়ের উচিত একটি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে বা কোম্পানিগুলো চালানোর জন্য প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে গ্রাহক ও বিক্রেতাদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য কাজ করা।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গ্রাহক ও মার্চেন্টদের দেওয়া হিসাবে দেখা যায়, ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, কিউকম, ধামাকা শপিং ও দালাল প্লাসের মতো ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার মতো আটকে আছে।
ই-কমার্স শিল্পের ভবিষ্যত বিপর্যয় রোধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৩টি কমিটি গঠন করেছে, স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি প্রকাশ করেছে এবং বেশ কয়েকটি আন্ত-মন্ত্রণালয় সভা করেছে। কিন্তু ভুয়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে টাকা নিয়ে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়ার কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান এএইচএম শফিকুজ্জামান বলেন, 'কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে টাকা আদায়ের অপশন নেই আমাদের। কারণ, মন্ত্রণালয় আইনের বাইরে যেতে পারে না। ভোক্তা, ই-কমার্স কোম্পানি এবং মার্চেন্টদের স্বার্থ রক্ষায় মন্ত্রণালয় কাজ করছে, যাতে তারা প্রতারিত না হয়।'
তিনি জানান, নতুন কমিটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে এ সংক্রান্ত দায়িত্ব দেবে। যেমন- বাংলাদেশ ব্যাংককে টাকা ফেরত দেওয়ার উপায় খুঁজে বের করতে বলা হতে পারে।
পণ্য সরবরাহ বা টাকা ফেরত না দেওয়ায় ভোক্তা ও মার্চেন্টদের দুর্দশা বাড়ছে।
আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে রানা খান এবং তার ৪ বন্ধু ই-অরেঞ্জ থেকে ৩৯ দশমিক ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ১৭টি বাইক ৫০ শতাংশ ছাড়ে অর্ডার করেছিলেন। এগুলো কিনে বেশি দামে বিক্রি করার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
'তবে আমরা বাইক ডেলিভারি পাইনি', তিনি বলেন।
গত বৃহস্পতিবার রানা জানান, কিছুদিন আগে জাতীয় প্রেসক্লাব এবং মৎস্য ভবন এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করার সময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে ৩০ জন আহত হন। তারা চান, সরকার কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে টাকা ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করুক।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আহসানুল করিমের মতে, মালিকদের অর্থ পাচার রোধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনেক আগেই ই-কমার্স কোম্পানিগুলোতে প্রশাসক নিয়োগ করা উচিত ছিল।
তিনি বলেন, 'কোম্পানিকে বাঁচাতে এবং ভোক্তা ও মার্চেন্টদের স্বার্থ রক্ষার জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার ছিল। কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে টাকা আদায় করার ক্ষেত্রে অনেক দেরি হয়ে গেছে।'
ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য একাধিক কমিটি গঠন যথেষ্ট না-ও হতে পারে।
ডেসটিনি, যুবক এবং ইউনিপাই টু কেলেঙ্কারির পরও সরকার তহবিল পুনরুদ্ধার, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং প্রতারণামূলক কার্যক্রমের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করার জন্য বেশ কয়েকটি কমিটি গঠন করেছিল। কিন্তু কেলেঙ্কারি বন্ধ হয়নি।
করিম বলেন, 'সুতরাং, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তা ও মার্চেন্টদের অর্থ পুনরুদ্ধার এবং ফেরত দেওয়াকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে একাধিক কমিটি গঠন করা।'
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক সাঈদা আনজুর মতে, এখনও ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে টাকা আদায়ের উপায় আছে।
তিনি ই-কমার্স কোম্পানিগুলোতে ভোক্তা ও মার্চেন্টদের করা লেনদেন ট্র্যাক করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, 'ট্রান্সফার ট্র্যাক করার পরে মন্ত্রণালয় তাদের কাছ থেকে অর্থ দাবি করতে পারে এবং ভোক্তা ও মার্চেন্টদের ক্ষতিপূরণ দিতে পারে।'
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই বিষয়টি দেখতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'যদি কোনো ই-কমার্স ফার্ম টাকা ফেরত দিতে না পারে, তাহলে টাকা পরিশোধের লক্ষ্যে তাদের সম্পদ বিক্রি করার জন্য একটি বোর্ড গঠন করা যেতে পারে।'
অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম
Comments