সড়কে ঝরে পড়ল আরও এক প্রাণ

দোষীদের বিচারের আওতায় না আনলে কিছুই বদলাবে না

শহরে সড়ক দুর্ঘটনায় নটরডেম কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নাঈম হাসান নিহত হওয়ার এক সপ্তাহও পেরিয়ে যায়নি, আমরা জানতে পারি রাজধানীর রামপুরা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আরেক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।

রামপুরা একরামুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র মাঈনুদ্দিন ইসলাম দুর্জয়কে গত ২৯ নভেম্বর রামপুরায় অনাবিল পরিবহনের একটি বাস চাপা দেয়। এই কিশোর যখন তার এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে ভালো কলেজে ভর্তির আশায় তখন বেপরোয়া গাড়ি তার জীবন কেড়ে নেয়।

দুর্ঘটনাটি এমন সময়ে ঘটেছে যখন শিক্ষার্থীরা রাজধানীতে নিরাপদ সড়কের জন্য বিক্ষোভ করছে। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কার্যকর করার পাশাপাশি নাঈম ও সড়ক দুর্ঘটনায় অন্যান্য ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার এবং ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছে।

মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা এই ২টি দুর্ঘটনা ছাড়াও গত এক সপ্তাহে আরও কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় একটি দৈনিক সংবাদপত্রের কর্মচারী আহসান কবির খান নিহত এবং চাঁদপুরে বিআরটিসি বাস একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে চাপা দেওয়ায় ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু—এসব সংবাদ দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত হয়েছে।

আমরা নাঈম, মাঈনুদ্দিন ও আহসানের ক্ষেত্রে যা দেখেছি তা হলো চালকরা প্রথমে তাদের ধাক্কা দেন এবং রাস্তায় পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা তাদের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যান। চালকরা সময়মতো গাড়ি থামাতে পারলে ৩ জনের প্রাণ বাঁচানো যেত। মানুষের জীবনের প্রতি চালকদের নিছক উদাসীনতা সত্যিই নিন্দনীয়।

দেশে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাই: আইন প্রণয়নের অর্থ কী যদি তা অনেকাংশে প্রয়োগ না হয়? কর্তৃপক্ষ কি আসলেই জনগণের জীবনের কথা ভাবছে নাকি তারা শুধু পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করছে? কেন সরকার আইনটি কার্যকর করার আগেও সংশোধন করেছে—যা খসড়া আকারে রয়েছে?

এটি দুর্ভাগ্যজনক যে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা আইনের কয়েকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল এবং সরকার আসলে সেই দাবিগুলোর কাছে মাথা নত করেছে।

সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী, বেপরোয়া গাড়ি চালানোর মাধ্যমে একজনের মৃত্যু, গুরুতর আহত হলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ডের বিধান ছিল। তবে সংশোধিত আইনে গুরুতর আহত হলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ডের বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে। পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা না করেই আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা হতাশাজনক।

আমাদের সড়কে নিহতের সংখ্যা বাড়ছেই। আমাদের গণপরিবহন খাতে ক্রমবর্ধমান নৈরাজ্য যেকোনো মূল্যে মোকাবিলা করা দরকার এবং এ জন্য পরিবহন আইন কার্যকরের বিকল্প নেই।

আমরা আশা করি, অপরাধী চালকদের যদি বিচারের মুখোমুখি করা যায় তাহলে রাস্তায় কিছু সুপরিবর্তন দেখা যাবে।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus for presenting true, impartial history of Liberation War

Directs all concerned to work accordingly to ensure that the real history of the Liberation War emerges through all the projects of the Liberation War affairs ministry in the coming days

26m ago