সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ হবে কবে?

২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা শুরু হয় গুজব থেকে। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

পবিত্র কুরআন 'অবমাননার' অভিযোগে গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লায় বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ, মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যে হামলার খবর পাওয়া গেছে তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

ওই ঘটনার জেরে অন্তত ৫ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ফলে গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ও তাদের উসকানিদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি দিতে বাধ্য হন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ধরনের বর্বরোচিত কাজ যাতে আবারও না ঘটে, সে জন্য জড়িতদের শনাক্ত ও আটক করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

এবারের ঘটনায় শক্ত অবস্থান নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। অপরাধীদের ধরতে পরিচালিত অভিযানের মাধ্যমে বেশ কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে। যদিও বহু সংখ্যক সশস্ত্র আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ও অন্যান্য নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে এক অর্থে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সহজ হয়েছে। তবে, এই ধরনের ঘটনার ব্যাপক প্রভাব ও সেগুলোর পুনরাবৃত্তি আমাদের চিন্তিত করে। কুমিল্লার ঘটনায় স্পষ্টতই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর উদ্দেশ্য ছিল। এতে তারা সফলও হয়েছে—তবে, সেটা সাময়িকভাবে। কিন্তু এর প্রভাব—বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা যে আঘাত পেয়েছে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসের অনুসারীদের মধ্যে যে বিভেদ রয়েছে, এই ঘটনায় সেটা আরও বাড়িয়ে তুলেছে এবং খুব শিগগির তা নিরাময় হওয়ারও সম্ভাবনা নেই।

কুমিল্লার ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই এখন সবার মনোযোগ রয়েছে সেদিকে। তবে, বাংলাদেশে এই ধরনের ঘটনা বারবার কেন ঘটছে তা বোঝার জন্য শুধু কুমিল্লার ঘটনা নয়, এর আগের ঘটনাগুলোর দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন। ৯ বছর আগে রামুর ঘটনা এখনো আমাদের স্মৃতিতে তরতাজা। এর আগে ও পরে এরকম অনেকগুলো সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখে গেছে 'ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের' অজুহাতে এই ধরনের ঘটনা শুরু হয়। এসব ঘটনার ধরন নিয়ে কর্তৃপক্ষকে চিন্তা করা উচিৎ। এসব ঘটনায় দেখা গেছে, প্রায় সব ক্ষেত্রেই বিচার প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতির। আমরা আশা করব, কুমিল্লার ঘটনা একটি ব্যতিক্রমী উদাহরণ সৃষ্টি করবে। কারণ, ভুক্তভোগী ও অপরাধীদের জন্য ন্যায় বিচারের চেয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা হয় না।

পর্দার আড়াল থেকে কোন শক্তিগুলো সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ায়, তা বুঝতে বাংলাদেশকে এ বিষয়ে তার দুর্বল রেকর্ড নিয়েই কাজ করা উচিত। যেটা আমাদের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে বুঝতে সমানভাবে কাজে লাগবে।

সমস্যাটির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে সমাধানে সরকারের সব রকমের প্রচেষ্টা প্রয়োজন। অর্থাৎ—নির্বাহী, বিচার ও আইন সভার প্রতিনিধিদের এমন একটি পরিবেশ তৈরিতে এগিয়ে আসতে হবে, যেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীরা তাদের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয় অথবা তাদের কর্মের জন্য সাজা থেকে যেন পালাতে না পারে।

এই ধরনের পরিবেশ তৈরিতে এ সমাজকেই সবচেয়ে বড় অবদান রাখতে হবে। মানবিক যোগাযোগের পুনঃস্থাপন এবং একটি ন্যায়সঙ্গত, ন্যায্য ও বৈচিত্র্য সহনশীল সমাজের ধারণাকে সমুন্নত রাখার মাধ্যমে মানুষের যেকোনো মতভেদ দূর করার জন্য শান্তিপূর্ণ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। সাম্প্রদায়িক হামলাগুলো ঘটার আগেই আমাদের সেগুলো রোধ করতে হবে এবং তাদের ভালোর জন্যই সেটা বন্ধ করতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

President's fate: No hasty decisions, need to follow constitutional process, says Fakhrul

He made the remark while speaking to reporters after laying wreaths at the grave of BNP founder and former president Ziaur Rahman

1h ago