সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অবসান ঘটাতে হবে

সার্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যে প্রশংসনীয় পরিচিতি তা নষ্ট করতেই একটি অশুভ শক্তি কাজ করছে।

আমাদের সমাজের সমকালীন প্রকৃতি নিয়ে আমরা গর্ব করি। জাতি কিংবা ধর্ম পরিচয় আমাদের জাতীয় পরিচয়ের কাছে গৌণ। অন্তত আমরা মনে করি এটাই হওয়া উচিত। কিন্তু এর বিপরীতটাই প্রমাণ করার জন্যই যেন সহিংসতার মাধ্যমে কখনো কখনো ধাক্কা দেওয়া হয়। যেমনটা আমরা গত কয়েকদিন ধরে দেখতে পাচ্ছি।

প্রায়ই দেখতে পাই, আমাদের দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এমন কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যার পেছনে স্পষ্টতই অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে। আচার-অনুষ্ঠান, উপাসনালয় বা সংখ্যালঘুদের শ্রদ্ধার বিষয়গুলোকে মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়।

এর পেছনের উদ্দেশ্যটি স্পষ্টই বোঝা যায়। অন্তত যাদের তীক্ষ্ণবুদ্ধি আছে তারা স্পষ্টভাবেই দেখতে পাচ্ছেন, কী খেলা চলছে।

একটি বিচ্ছিন্ন সমাজ মূলত একটি দুর্বল সমাজ। যা অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক শত্রুদের চক্রান্তের জন্য উর্বর ভূমি। এটা খুবই হতাশাজনক যে, কুমিল্লার ঘটনায় সারাদেশে সৃষ্ট সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে।

যারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হামলার নিন্দা জানান, তাদের সঙ্গে আমরাও কণ্ঠ মেলাতে চাই। এটা দুঃখজনক যে, বিদ্বেষ ও হঠকারিতার কাছে মানুষের যুক্তি ও বিচার-বিবেচনা হার মেনেছে।

আমরা এটা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয় যে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা প্রতিমার নিচে মুসলমানদের পবিত্রতম গ্রন্থ রাখার মতো এমন একটি কুৎসিত কাজে লিপ্ত হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও ঘৃণা তৈরির জন্য স্বাধীনতা বিরোধীদের কাজ হতে পারে। এর উদ্দেশ্য ছিল সমাজকে অস্থিতিশীল করা এবং সমাজে বিশৃঙ্খলার বীজ বপন করা। তারা এ কাজে আংশিক সফল হয়েছে।

আমরা আশা করি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করবে এবং কঠোরতম শাস্তি নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি সমাজের অংশ হিসেবে আমাদেরও ভাবতে হবে যে কেন এই ধরনের ঘটনাগুলো সময়ে সময়ে ঘটতে থাকে।

এসব ঘটনা ধর্মের বাণী দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। কিংবা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ওপরও সম্পূর্ণভাবে দায় দেওয়া যাবে না। এর পেছনের কারণগুলো আমাদের খুঁজে বের করতে হবে, এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।

আমাদের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির গতিশীলতা ও অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো বুঝতে হবে এবং এ নিয়ে কাজ করতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে দিতে আমাদের আন্তঃসাম্প্রদায়িক সংলাপের আয়োজন করতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য কেবল আইন-শৃঙ্খলার প্রয়োগ নয়, গোটা সমাজকেই একটি পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতির আওতায় আনা প্রয়োজন।

অনুবাদ করেছেন সুচিস্মিতা তিথি

Comments

The Daily Star  | English

President's fate: No hasty decisions, need to follow constitutional process, says Fakhrul

He made the remark while speaking to reporters after laying wreaths at the grave of BNP founder and former president Ziaur Rahman

1h ago