সহিংসতার পুনরুত্থান আফগানিস্তানকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে

তালেবান সরকারকে সন্ত্রাস নির্মূল করে দেশ শাসনের দক্ষতা প্রমাণ করতে হবে
ছবি: সংগৃহীত

আফগান শহর কুন্দুজের একটি শিয়া মসজিদে গত শুক্রবার আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৫৫ জন নিহতের সংবাদে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী বিদায় নেওয়ার পর এটিই দেশটিতে সবচেয়ে বড় আকারের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, যেখানে নিহতদের পাশাপাশি অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছেন। ইতোমধ্যে ইসলামিক স্টেট (আইএস) হামলার দায় স্বীকার করেছে।

তালেবান ক্ষমতা দখলের পর থেকেই দেশের নারী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে বিভিন্ন মহলের উদ্বেগ ছিল। এর পেছনে কারণ মূলত হাজারা শিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে তালেবানের ভয়াবহ আচরণের পূর্ব-ইতিহাস। এর আগে, তালেবান যখন আফগানিস্তান শাসন করেছে, তখন হাজারা শিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যরা সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হন। তাদের গণহত্যা, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এছাড়াও, তালেবান ও আইএসের মধ্যে সংঘাতের পূর্বাভাষ পাওয়া যাচ্ছে, যেটি ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরনের সংঘর্ষে জর্জরিত দেশটিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। আইএসের এই সর্বশেষ হামলা এই আশংকাকে বাস্তবতায় পরিণত করছে।

আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, তালেবান বা আইএস, যেই হোক না কেনো, ভুক্তভোগীরা সব সময়ই সাধারণ আফগান জনগণ, বিশেষ করে শিয়া মুসলমানরা, যারা আফগানিস্তানের সবচেয়ে ভয়াবহ আক্রমণগুলোর শিকার হয়েছেন। এমনকি এ বছরের মে মাসেও, একটি স্কুলের বাইরে বেশ কয়েক দফা বোমা হামলায় হাজারা সম্প্রদায়ের কমপক্ষে ৮৫ জন মারা গেছেন, যাদের বেশিরভাগই কিশোরী। সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ আফগানিস্তানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা সুন্নি চরমপন্থিদের একটি পুরনো কৌশল, যার পুনর্জাগরণ সমগ্র অঞ্চলের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

আফগানিস্তানে নিরাপত্তাহীনতা ও বড় আকারের অস্থিতিশীলতা শুধুমাত্র এই অঞ্চলের বৃহত্তর স্বার্থেরই পরিপন্থী নয়, এটি একই সঙ্গে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত তালেবান সরকারের জন্যেও বড় চিন্তার উৎস, কারণ তারা এখনো প্রতিবেশী রাষ্ট্র, মূল দাতাগোষ্ঠী ও ব্যবসায়িক অংশীদারদের কাছে উপযোগী ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে দেশ পরিচালনার সক্ষমতা প্রমাণ করতে পারেনি। যদিও শুরুতে তাদের মনোভাবকে ইতিবাচক মনে হয়েছিল, তারা ইতোমধ্যে নারীর কাজ করার ও শিক্ষার অধিকার ক্ষুণ্ণ করে পেছনের দিকে হেঁটেছে। যখন তালেবান সরকারের আসন্ন মানবতামূলক ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করতে পারার সক্ষমতাই প্রশ্নের মুখে, তখন এই অতি পরিচিত সম্প্রদায়ভিত্তিক সহিংসতার পুনরুত্থান কোনোভাবেই কাম্য নয়।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত হবে না প্রয়োজনের মুহূর্তে আফগান জনগণকে ত্যাগ করা। শুধুমাত্র মুখের কথাই যথেষ্ট নয়, তালেবান সরকার যাতে আইএস এর মতো জঙ্গি দলগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করে এবং তারা যাতে আফগানিস্তানের সীমান্তের মধ্যে থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনে বড় আকারের চাপ দিতে হবে। এটি করতে ব্যর্থ হলে সহিংসতা বেড়ে যেতে পারে, যা পরিশেষে তাদের ক্ষমতা হারানোর কারণও হতে পারে। যদি আইএসকে আফগানিস্তানে কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেওয়া হয়, তাহলে তার পরিণতি পাকিস্তান, ভারত, এমনকি বাংলাদেশের জন্য অনেক গুরুতর হতে পারে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যাতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পরিধি বেড়ে তা আমাদের দেশের সীমান্তে এসে পৌঁছুতে না পারে।

*অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান।

Comments

The Daily Star  | English

Produce 10 ex-ministers, 2 advisers to Hasina before tribunal on Nov 18: ICT

They will be shown arrested in case filed over crimes against humanity, genocide, says prosecutor

1h ago