সরকারি হাসপাতাল বহিরাগতদের প্রভাব মুক্ত করতে হবে
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (পিকেএমসি) নিয়মিত সেবা কার্যক্রম বিভিন্ন কারণ ও বহিরাগতদের প্রভাবে ব্যাহত হচ্ছে—বিষয়টি হতাশাজনক। এই বহিরাগতদের মধ্যে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের দালাল, অ্যাম্বুলেন্স কর্মী ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা রয়েছেন।
দ্য ডেইলি স্টারের গত বৃহস্পতিবারের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বেসরকারি মেডিকেল সেবার এজেন্টদের প্রতিদিন হাসপাতালটির ভেতরে ও বাইরে ঘুরতে, রোগীদের কাছে যেতে এবং তাদেরকে পিকেএমসি থেকে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করতে দেখা যায়।
দেশের বেশিরভাগ সরকারি হাসপাতালেরই সাধারণ চিত্র এটি। পিকেএমসির ঘটনা আবার দেখিয়ে দিল যে, মহামারির সময়েও জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অপরিহার্য পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়নি। সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার মান, বিশেষ করে হাসপাতালগুলোর সেবা কার্যক্রম হতাশাজনকই আছে।
আমাদের প্রতিবেদকরা গত সপ্তাহে পিকেএমসির বিভিন্ন ওয়ার্ডে 'দালাল, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির প্রতিনিধি এবং প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের' অতি তৎপরতা লক্ষ্য করেছেন। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির প্রতিনিধিরা রোগীদের প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলছিলেন। রোগীদের প্রাইভেট ক্লিনিকে সস্তায় এক্স-রে করানোর জন্য প্ররোচিত করা হচ্ছিল।
হাসপাতাল চত্বরের ভেতর কেন বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স পার্ক করা— সে বিষয়ে পটুয়াখালী অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সভাপতি যে দাবি করেছেন, তাতেও আমরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারিনি। তার তথ্য অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালটির নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স আছে মাত্র দুটি। একটি জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে মাত্র দুটি অ্যাম্বুলেন্স স্পষ্টতই অপর্যাপ্ত। ফলে সেখানে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্টতই বোধগম্য।
তার এই দাবি সত্য হলেও আমরা অবাক হচ্ছি এটা ভেবে যে, কোভিড-১৯ মহামারি ও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও কেন এই হাসপাতালে পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স নেই।
সরকারি হাসপাতালে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানির প্রতিনিধিদের এমন তৎপরতা নতুন কিছু নয়। কিন্তু, মহামারির সময় এগুলো বিশেষভাবে ক্ষতিকর। কারণ, এ সময় রোগীদের দেশের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করার মতো পরিস্থিতি থাকা প্রয়োজন। কোনোভাবেই এই এজেন্টদের সরকারি হাসপাতালের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাতে দেওয়া উচিত নয়।
আমরা আশা করি, আইনি ব্যবস্থা চেয়ে গত ২৭ আগস্ট পিকেএমসির সুপারিন্টেনডেন্ট পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে যে চিঠিটি পাঠিয়েছেন, তা এই উপদ্রব বন্ধ করতে সাহায্য করবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বেসরকারি এজেন্টরা যেন হাসপাতাল চত্বরে প্রবেশই করতে না পারে, সে বিষয়ে খেয়াল রাখা এবং বাধা দেওয়ার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন।
আমরা অবশ্যই সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সরকারের কাছ থেকে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা রিসোর্স সংগ্রহের অনুরোধ জানাই। যাতে করে রোগীরা সন্দেহজনক প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ না করেন।
অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম
Comments