সরকারি প্রকল্পে প্রয়োজন নাগরিক পর্যবেক্ষণ

ছবি: স্টার

গত কয়েক সপ্তাহে জনসাধারণের অর্থায়নে পরিচালিত বেশ কয়েকটি প্রকল্পের বিষয়ে ভয়াবহ সব প্রতিবেদন দেখা গেছে। এসব প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধরন, মাত্রা, এমনকি অগ্রাধিকারের পার্থক্য সত্ত্বেও সব প্রকল্পে একটি সমস্যা থাকেই। আর তা হলো ব্যয় ও সময়সীমা বেড়ে যাওয়ার সমস্যা।

সত্যি বলতে, এটি নতুন কোনো ঘটনা নয়। শুধু যে সরকারি প্রকল্পেরই ব্যয় ও সময়সীমা বাড়ে, তাও নয়। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা শুধু দ্য ডেইলি স্টারেই যতগুলো প্রকাশিত হয়েছে, তাতে জনস্বার্থে ব্যয়ের ক্ষেত্রে অযোগ্যতা ও দুর্নীতি সমানতালে মেনে নেওয়া হচ্ছে- এমন ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে। এটি অগ্রহণযোগ্য।

তাই আমরা সরকারি প্রকল্পের নাগরিক সম্পৃক্ততা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের আহ্বান জানাচ্ছি। কারণটি সহজ। যদি দেশের জনগণ প্রকল্পের জন্য অর্থ দেয়, তাহলে এসব প্রকল্প যথাসময়ে ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাদের অংশীদারিত্বও রয়েছে। সম্প্রতি একটি সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সরকার প্রতি বছর হাজার হাজার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করলেও এগুলোর বেশিরভাগই দুর্বল পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি দুর্বল তত্ত্বাবধানের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বিশেষজ্ঞরা তাই সব মন্ত্রণালয় ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে তাদের প্রকল্প উন্নয়ন ও বাস্তবায়নের সময় নাগরিক সমাজকে সম্পৃক্ত করা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এজন্য প্রকল্প উন্নয়ন পর্যায়ে একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন হবে, যা পদ্ধতিগত পর্যবেক্ষণ ও প্রতিবেদনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুশীল সমাজকে সম্পৃক্ত হতে সহায়তা করবে। এ ধরনের সহযোগিতা কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করবে।

এ ধরনের তত্ত্বাবধান মেনে নেওয়া আমাদের আমলাদের জন্য কঠিন হবে। ঐতিহাসিকভাবেই তারা নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের নাগরিক হস্তক্ষেপের বিরোধী।

আমলারা কীভাবে বারবার জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, শুধু কোভিড-১৯ মহামারির সময়ই তা আমরা অনেকবার দেখেছি।

সত্যি বলতে, আরও উন্নত গণতন্ত্র ও প্রতিষ্ঠানে নাগরিক অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি দেশে নাগরিক সম্পৃক্ততার কারণে কীভাবে পুলিশের জবাবদিহিতা তৈরি হয়েছে, আমরা তা দেখেছি।  

আমাদের দেশে এ মডেল অনুসরণ না করার কোনো কারণ আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তারা যেখানে বারবার প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। দুর্ভাগ্যক্রমে, আমাদের বর্তমান জবাবদিহিতা প্রক্রিয়াগুলো খুব কম ক্ষেত্রেই কার্যকরী। একটি শক্তিশালী ও অরাজনৈতিক জবাবদিহি ব্যবস্থা ছাড়া সরকারি কর্মকর্তারা তাদের দুর্নীতিগ্রস্ত বা অযোগ্য সহকর্মীদের শাস্তির মুখোমুখি করবেন, তা আশা করা যায় না।

সব মিলিয়ে সরকারি অর্থায়নের প্রকল্পে নাগরিক পর্যবেক্ষণ সময়ের প্রয়োজন এবং বৃহত্তর জনস্বার্থ বিবেচনায় সরকারের বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত। সেজন্য শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সম্ভাব্য প্রতিরোধ সাবধানে সামলানো প্রয়োজন হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি সুফল বয়ে আনবে।  

অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments