শাঁখের করাতে গরিব মানুষ: বাসায় থাকলে উপবাস, বাইরে গেলে গ্রেপ্তার
লকডাউন অমান্য করার জন্যে প্রতিদিন শত শত মানুষ গ্রেপ্তার হচ্ছেন। দ্য ডেইলি স্টারে গত ৮ জুলাই প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দৈনন্দিন রোজগারের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হওয়া দরিদ্ররাই মূলত গ্রেপ্তার হচ্ছেন। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে নিয়মিত বিরতিতে আরোপিত লকডাউন হাজারো পরিবারের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে গেছে এবং যখনই নতুন করে লকডাউন দেওয়া হয়, তখনই গরিবদের কষ্ট বেড়ে যায়।
প্রায় প্রতিদিনই রেকর্ড পরিমাণ শনাক্ত ও মৃত্যুর হার বিবেচনায় আমরা কঠোর লকডাউনের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারছি। কিন্তু, আমরা আশা করতে পারি না দরিদ্ররা ঘরে বসে থেকে না খেয়ে মারা যাবে। কঠোর লকডাউনের উপযোগিতা নিশ্চিত করার জন্যে সরকারের উচিত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্রদের জন্যে জরুরি সহায়তার ব্যবস্থা করা। এই উদ্যোগটি বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে একইসঙ্গে অত্যাবশ্যক ও মানবিক হবে। কারণ, দরিদ্রদের অনেকেই পেটে ভাতে চলছেন। তাদেরকে নগদ অর্থ সহায়তা অথবা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য (সস্তায় অথবা বিনামূল্যে) অথবা দুটোই দেওয়া যেতে পারে।
এ ছাড়াও, দরিদ্ররা গ্রেপ্তার হচ্ছেন এবং তাদেরকে জরিমানা দিতে হচ্ছে। যা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থানকে আরও নড়বড়ে করে দিচ্ছে। ফলে তাদের পরিবারের সদস্যরা আদালত প্রাঙ্গণের বাইরে ভিড় জমাচ্ছেন এবং করোনাভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন। একটি প্রতিবেদনের ভাষ্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তারকৃত দরিদ্র মানুষদের পরিবারের সদস্যরা মরিয়া হয়ে প্রতারকদের খপ্পরে পড়ছেন। প্রতারকরা অর্থের বিনিময়ে তাদের আপনজনদের ছাড়িয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন এবং তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে যারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন, তারা ১০০ বা ২০০ টাকা জরিমানা পরিশোধ করলেই তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। প্রতারকরা অনেক বেশি টাকা চাইছেন এবং মানুষকে সর্বস্বান্ত করে ছাড়ছেন। কর্তৃপক্ষের উচিত এটি থামানো।
এ প্রসঙ্গে লকডাউন আরোপ ও বজায় রাখার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনাহীনতার বিষয়টি উল্লেখ করা প্রয়োজন। কীভাবে মানুষ বাসায় থাকার নির্দেশনা মানবে, যখন তারা অভুক্ত থাকার মতো অবস্থায় পৌঁছে যাচ্ছে? কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনায় লকডাউন আরোপের আগে অথবা চলাকালে দরিদ্রদের জন্যে যথেষ্ট পরিমাণে ত্রাণের ব্যবস্থা করার বিষয়টি থাকা প্রয়োজন ছিল। এই ব্যবস্থা নেওয়ার পর তাদের উচিত ছিল মানুষকে জরুরি কারণ ছাড়া বাসার বাইরে যাওয়ার অপরাধে শাস্তির বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো। যাতে কোনো ব্যক্তি বা তার পরিবারের কোনো সদস্য গ্রেপ্তার হলে তাকে ছাড়িয়ে আনার জন্যে কত টাকা লাগবে, সে বিষয়টি নিয়ে কারও মনে যেন কোনো বিভ্রান্তি না থাকে।
পরিশেষে, সঠিকভাবে লকডাউন কার্যকর করার জন্যে এখনো কর্তৃপক্ষের হাতে সময় আছে। কোভিডের সংক্রমণের হারের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, আরও বেশ কিছুদিন লকডাউন চালু রাখতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের এখনই অর্থনৈতিক দুরবস্থায় থাকা মানুষকে ত্রাণ দিতে শুরু করা উচিত। লকডাউন অমান্যকারীদের গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের আরও সহানুভূতিশীল হতে হবে এবং মানুষকে স্বাস্থ্য নির্দেশনা ও সরকারি আদেশ মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আর যারা গ্রেপ্তার হবেন, তারা যাতে তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কী হয়েছে এবং কীভাবে তাদেরকে মুক্ত করতে হবে, সে বিষয়ে জানাতে পারেন, সে ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে আদালত প্রাঙ্গণের বাইরে মানুষের ভিড় এড়ানো যাবে এবং প্রতারকরাও সুযোগ নিতে পারবেন না।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
Comments