রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তা জোরদার করা উচিত

রোহিঙ্গা ক্যাম্প। ফাইল ছবি

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মুহিব উল্লাহর হত্যাকাণ্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। যেখানে আগে থেকেই উত্তেজনা চরমে ছিল। অনিয়ন্ত্রিত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ও বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যকার বিবাদের পাশাপাশি শিথিল নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গারা ভয়ের ভেতর বসবাস করছেন। মুহিব উল্লাহর হত্যাকাণ্ড বিদ্যমান পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। অনেক শরণার্থী মনে করেন যে, সাম্প্রতিক সময়ে আশ্রয় শিবিরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার এই পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সশস্ত্র দলগুলো ক্যাম্পগুলোতে চূড়ান্ত আতঙ্ক তৈরি করেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর অভিযোগ, আশ্রয় শিবিরের অন্তত ১০টি রোহিঙ্গা গ্রুপ হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদক চোরাচালান ও ডাকাতিসহ প্রায় ১২ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মারাত্মক দমন-পীড়নের ভেতর বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বড় ঢল নামে। এরপর থেকে কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে বসবাসরত ২২৬ জনের বেশি রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ ছাড়া, মাদক ও অস্ত্র বহনের দায়ে ২ হাজার ৮৫০ জন রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে ১ হাজার ২৯৮টি মামলা দায়ের করা হয়।

এই পরিস্থিতিতে আমরা মনে করছি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ক্যাম্পগুলোতে পুলিশের যে ৩টি সশস্ত্র ব্যাটালিয়ন নিয়োজিত আছে, তা আসলে যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে মুহিব উল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আশ্রয় শিবিরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাটালিয়নের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। তাই ভয় ও গুজব দূর করতে কার্যকর যোগাযোগ ও কৌশলের ভিত্তিতে ক্যাম্পগুলোতে নজরদারির পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানোর বিষয়টি ১ নম্বর অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে, কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা প্রতিনিধি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে যুক্ত। তাই আরও ঘনিষ্ঠতা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে তাদের শরণার্থীদের শান্ত রাখার চেষ্টা করা উচিত। এই আশ্বাস দেওয়া উচিত যে, নিরাপত্তা জোরদার করা হবে, আর তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এ ছাড়া, প্রত্যাবাসন সফল করার জন্য ও আশ্রয় শিবিরে ঝামেলামুক্তভাবে থাকার বিষয়ে রোহিঙ্গাদের যে বক্তব্য, সেটাও কর্তৃপক্ষের শোনা উচিত। মুহিব উল্লাহর হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে পারলে তা অবশ্যই তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।

এখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এই পত্রিকায় প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন অনুসারে, ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে জাতিসংঘের যুক্ততার বিষয়ে শনিবার ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের সম্পৃক্ততা অবশ্যই একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। আমরা আশা করছি যে, কক্সবাজারের ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, এই স্থানান্তর কর্মসূচি তা কমিয়ে আনতে সহযোগিতা করবে।

অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

Comments

The Daily Star  | English

Produce 10 ex-ministers, 2 advisers to Hasina before tribunal on Nov 18: ICT

They will be shown arrested in case filed over crimes against humanity, genocide, says prosecutor

1h ago