রেলওয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নে কেন এমন করুণ অবস্থা?

বাংলাদেশ রেলওয়ের সামগ্রিক পরিষেবা উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পগুলোর দুর্বল বাস্তবায়নে আমরা অত্যন্ত হতাশ। দ্য ডেইলি স্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক বছর আগে হাতে নেওয়া ৫টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের দরপত্র প্রক্রিয়া, সম্ভাব্যতা যাচাই, পরামর্শক নিয়োগ ও তহবিল সংগ্রহের মতো কাজগুলো কর্তৃপক্ষ সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেগুলো অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। সরকারি অথবা বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত রেলওয়ের ৩৭টি চলমান প্রকল্পের মধ্যে ২৬টিতে অন্তত একবার করে সময় বাড়াতে হয়েছে৷

উল্লিখিত ৫টি প্রকল্পের মধ্যে একটি ছিল ৭০টি মিটার গেজ (এমজি) লোকোমোটিভ সংগ্রহ। একাধিক জটিলতার কারণে প্রকল্পটির ভাগ্যে কী জুটেছে সেটা এখনো পরিষ্কার না। বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিষেবা সম্প্রসারণে ২০১১ সালে ১ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি নেওয়া হয়। প্রকল্পটি ২০১৭ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে, এর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা সেই সময়ের মধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে পারেননি। ২০১৮ সালে একটি বড় সংশোধনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার আগে প্রকল্পের সময়সীমা দু'বার বাড়ানো হয়েছিল। তারপর আবারও সময়সীমা বাড়ানো হয়, ফলে ব্যয়ও অনেক বেড়ে যায়। এ ছাড়া, অন্য ৪টি প্রকল্প— ২১টি এমজি লোকোমোটিভ সংস্কার, রোলিং স্টক অপারেশনের উন্নয়নে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান, জয়পুরহাট-ঈশ্বরদী এবং আখাউড়া-সিলেট রেললাইন সম্প্রসারণ— একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়।

বিগত বছরগুলোতে, বাংলাদেশ রেলওয়ের এ ধরনের সমস্যার আবর্তে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া অনেকগুলো প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য ডেইলি স্টার। ৭০টি এমজি লোকোমোটিভ সংগ্রহের মতো বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত অনেকগুলো প্রকল্প অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হওয়ার কারণে কোম্পানিগুলো আর এসব প্রকল্পে অর্থায়ন করতে চায় না৷

পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্বল পরিকল্পনা, দুর্বল সম্ভাব্যতা যাচাই, দক্ষ জনবলের অভাব এবং বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতার গুরুতর অভাব রেলওয়ের প্রকল্পগুলোতে এমন স্থবিরতার প্রধান কারণ। জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডাবল-লাইন প্রকল্পের ক্ষেত্রে চীন সরকার গত বছর স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে তারা 'প্রাথমিক কাজগুলোতে গভীরতার অভাব এবং সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে অপ্রতুলতার কারণে' অর্থায়ন করতে চায়নি।

দৃশ্যত, এই প্রকল্পগুলোতে কখনোই সঠিকভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক উপেক্ষিত এবং অমীমাংসিত থেকে যায় এবং প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে সেগুলো বাস্তবায়ন পর্যায়ে অনেক কিছুর পরিবর্তন করতে হয়েছিল। ফলে, ঘন ঘন সময় এবং ব্যয় বৃদ্ধি পায়। আমরা মনে করি, প্রকল্পগুলো সময়মতো শেষ করতে হলে সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাইয়ের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, বাস্তবায়ন সংস্থা এবং পরামর্শদাতা সবাইকে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির জন্য দায়ী করা উচিত। সরকারকে অবশ্যই এই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে এবং রেল প্রকল্পগুলোতে অদক্ষতা, দুর্নীতি এবং জবাবদিহিতার অভাব সম্পর্কিত উদ্বেগগুলো কার্যকর উপায়ে মোকাবিলা করতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

BGB, BSF DG-level talks postponed

The director general-level border talks between Bangladesh and India, initially set for next month in New Delhi, have been postponed.

2h ago