মুহিব উল্লাহকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীদের অবশ্যই গ্রেপ্তার করতে হবে

মুহিব উল্লাহ। ফাইল ফটো: রাজীব রায়হান

রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহ হত্যাকাণ্ডে বেশ কিছু পদ্ধতিগত ফাঁক-ফোকর বেরিয়ে এসেছে। প্রথমত রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটাই দুর্বল যে, হত্যাকারীরা সেখানে ঢুকে, ঠান্ডা মাথায় লোকটিকে হত্যা করে সহজেই সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হয়। হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার পর এখন তার বাড়ির আশপাশে নিরাপত্তা দিয়ে কী লাভ? দ্বিতীয়ত, ওই এলাকায় ছোট অস্ত্র ও অন্যান্য হাতিয়ার কেবল সহজলভ্যই নয়, লোকে সেগুলো নিয়ে প্রায় অবাধে চলাফেরা করতে পারে।

দুঃখজনকভাবে রোহিঙ্গা ইস্যুটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির পাশাপাশি একাধিক অংশীদারের (স্টেকহোল্ডার) সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে। যাদের প্রত্যেকের নিজস্ব এজেন্ডা ও স্বার্থ আছে এবং তারা সেটি সমুন্নত রেখে এগিয়ে যেতে চায়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশ একটা জটিল সমস্যার মাঝে আটকে গেছে। যার দ্রুত সমাধানের সম্ভাবনা কম। মুহিব উল্লাহর হত্যাকাণ্ড এই সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে। যত দ্রুত এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের শণাক্ত করা যাবে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমস্যাকে আরও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করা সহজ হবে এবং আশা করা যায়, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটিও শুরু করা যাবে।

এটা কোনো গোপন ব্যাপার নয় যে, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মুহিব উল্লাহ ছিলেন অগ্রণী কণ্ঠ। রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতা রেকর্ডের জন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন।  তিনি অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা ও  রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অধিকারের পক্ষে কথা বলার পাশাপাশি তাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের শর্ত হিসেবে মিয়ানমার সরকারের স্বীকৃতির জন্য ধারাবাহিকভাবে আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। তার এসব কর্মতৎপরতার জন্য তিনি কালো তালিকায় পড়ে যান এবং তার শত্রুদের কাছ থেকে প্রচুর প্রাণনাশের হুমকি পান।

কিন্তু নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্তে তিনি বরাবরই অটল ছিলেন। একইসঙ্গে তিনি এ ব্যাপারেও জোর দিয়েছিলেন, যেন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ হয়। বলেছিলেন, এ জন্য মিয়ামারের যে কোনো নাগরিকের মতো তাদের অধিকার নিশ্চিত করা উচিত। বিরোধীরা তার এই অবস্থানকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। তারা বলেছিল, কেবল আরাকান মুক্ত হলেই তারা ফিরে যাবে। বলা বাহুল্য যে, এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং বাংলাদেশের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এটা বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষেও যায় না।

স্পষ্টতই প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে পর্দার আড়ালে একটা শক্তিশালী দল কাজ করছে। তাদের আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক পক্ষের সমর্থন থাকতে পারে। এখন আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ হলো, বিষয়টা উন্মুক্ত করা ও তাদের নির্মূল করা।

অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

Comments