মানব সভ্যতার দোরগোড়ায় মহাবিপর্যয়

ছবি: রাজিব রায়হান

ইন্টারগভার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেইঞ্জের (আইপিসিসি) একটি নতুন প্রতিবেদন গত ৯ আগস্ট প্রকাশিত হয়েছে। 'ক্লাইমেট চেঞ্জ ২০২১: দ্য ফিজিক্যাল সায়েন্স বেসিস' নামের প্রতিবেদনটিতে শিগগিরি প্রতিক্রিয়া না দেখালে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর অবস্থা কতটা করুণ হতে পারে তার বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে পূর্বাভাষ দেওয়া হয়েছে, ভূপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা ২০৩০ সালের মধ্যে শিল্প বিপ্লবের আগের সময়ের তাপমাত্রার চেয়েও এক দশমিক পাঁচ অথবা এক দশমিক ছয় ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশি হবে এবং তা গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের পাঁচটি আনুমানিক পরিস্থিতির (প্রত্যাশিত উচ্চ পর্যায়ের পরিস্থিতি থেকে একেবারে অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি পর্যন্ত) প্রতিটির ক্ষেত্রেই একই রকম। মাত্র তিন বছর আগে আইপিসিসি পূর্বাভাষ দিয়েছিল, এ ধরণের একটি পরিস্থিতি অন্তত আরও এক দশক পরে আসবে। কিন্তু সাম্প্রতিক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মানব জাতির সামনে পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য আগে যা ভাবা হয়েছিল তার চেয়ে কম সময় আছে।

এই পরিবর্তিত পূর্বাভাষের পেছনে একটি কারণ হচ্ছে প্রাকৃতিক কার্বনের আধার। যেমন- জঙ্গল, মাটি ও সমুদ্রের ক্ষয়। এই আধারগুলো ১৯৬০ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত মানব জাতি যে পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড জলবায়ুতে নিঃসরণ করেছে, তার ৫৬ শতাংশই শোষণ করে নিয়েছে। কিন্তু, আমাদের এই প্রাকৃতিক বন্ধুরা যে চিহ্ন দেখাচ্ছে তাতে তারা আগামী দশকগুলোতে জলবায়ু থেকে আগের চেয়ে কম কার্বন শুষে নেবে।

এই পূর্বাভাষগুলো বিশেষ ভাবে বাংলাদেশের জন্য আশংকাজনক। কারণ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমরা আরও বেশি প্রবল বৃষ্টিপাত, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মুখোমুখি হব। এ ছাড়াও, চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যায়ের ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। যা সমুদ্র তীরের এলাকাগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

গত বছর ১৯৯৮ সালের পর সবচেয়ে দীর্ঘ এবং ভয়াবহতার দিক থেকে দ্বিতীয় বন্যা হয়েছে। আইপিসিসির প্রতিবেদন বলছে, অদূর ভবিষ্যতে এ ধরণের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা অনেক বেশি। প্রতিবেদনের পূর্বাভাষ অনুযায়ী বৃষ্টিপাতের ঘটনার সংখ্যা ও প্রাবল্য বৃদ্ধি আমাদের কৃষিখাত ও খাদ্য নিরাপত্তার ওপর দীর্ঘ মেয়াদে বড় আকারের বিপদের ঝুঁকি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।

পরিবেশবিদদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আইপিসিসি বলছে, এ ধরণের বিষয়গুলোকে কখনোই আর আগের পর্যায়ে ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। অর্থাৎ, গ্রিন হাউজ গ্যাসের নিঃসরণ কমিয়ে আনা সম্ভব হলেও সমস্যাগুলোর পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হবে না। এর পাশাপাশি প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় তাপদাহ ও শুষ্ক বায়ুর চাপ সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সার্বিকভাবে বাড়তে থাকবে এবং একুশ শতকে তা আরও কঠিন আকার ধারণ করবে।

এটি পরিষ্কার যে, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সমস্যাগুলোর কোন সীমা নেই এবং পরিশেষে সমস্যাগুলো সবাইকেই প্রভাবিত করবে।

তারপরেও, সমষ্টিগতভাবে চেষ্টা করেও হয়তো মানব জাতির জন্য ইতোমধ্যে ঘটে যাওয়া ক্ষতিগুলো পূরণ করে আগের পর্যায়ে ফিরে যেতে পারবে না। তবে আগামীতে যে সমস্যাগুলো আসবে, সেগুলোকে এখনও চাইলে প্রতিহত করা সম্ভব। কিন্তু তার জন্য মানব জাতিকে শিগগিরি কাজ শুরু করতে হবে।

প্রতিবেদনে প্রকাশিত মত অনুযায়ী, আর দেরি করার মতো সময় হাতে নেই। বিশ্ব নেতারা অনেক সময় মহাদেশগুলো থেকে আসা চাপ মোকাবিলা করতে জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাগুলো নিরসনে বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। স্বভাবতই, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা তাদেরকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করতে দেখি না। এসব ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণকে নিরলস ভাবে কাজ করে যেতে হবে। নাগরিকদের নিরবচ্ছিন্ন চাপই পারবে বিশ্ব নেতাদের উদ্বুদ্ধ করতে, যাতে তারা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করে মানব জাতির দোরগোড়ায় উপস্থিত এই মহাবিপদ থেকে সবাইকে রক্ষা করতে পারেন। মানব সভ্যতাকে টিকে থাকতে হলে পৃথিবী ও এর সকল প্রাণকে সুরক্ষিত রাখার বড় দায়িত্ব থেকে কাউকে পিছিয়ে গেলে চলবে না। আমাদেরকে এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতেই হবে।

 

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English
BB governor accuses tycoons for bank fraud

Tycoons linked to Hasina siphoned $17b from banks, BB chief tells FT

“This is the largest, most significant bank robbery by any international standard,” he said

1h ago