মহামারি মোকাবিলায় কোনো পরিকল্পনা আছে?

উচ্চ সংক্রমণের হারের মধ্যে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার উদ্বেগজনক
স্টার ফাইল ফটো

সরকারের বেশিরভাগ মহামারি সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের মতো আরও একটি আশ্চর্যজনক সিদ্ধান্তে গত রোববার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১১ আগস্ট, বুধবার থেকে বেশিরভাগ বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এমন একটি দিনে ঘোষণাটি এসেছে, যেদিন আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২৪১ জনের মৃত্যু ও আরও ১০ হাজার মানুষের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পেয়েছি স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের কাছ থেকে। এছাড়াও সংক্রমণের হার ২৪ দশমিক ৫২ শতাংশ।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সব ধরনের গণপরিবহনের (যেমন বাস, ট্রেন ও লঞ্চ) ৫০ শতাংশ পূর্ণ সক্ষমতায় যাত্রী বহন করার অনুমতি পেয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে গণপরিবহনে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করার সুযোগ থাকবে না বললেই চলে। অন্তত আমাদের পূর্ব-অভিজ্ঞতা তাই বলে। এছাড়াও সব অফিস, ব্যাংক, কারখানা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুনরায় খুলছে। রেস্তোরাঁ, শপিং মল, মার্কেট ও দোকানপাটগুলোকে স্বাভাবিকভাবে পরিচালনার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। শপিং মল ও মার্কেটগুলো সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এবং রেস্তোরাঁগুলো অর্ধেক জায়গা খালি রাখার শর্ত সাপেক্ষে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
৩ আগস্ট একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখার উদ্দেশ্যে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বিধিনিষেধ শিথিলের এই সিদ্ধান্ত অদূর ভবিষ্যতেও প্রযোজ্য থাকবে। তবে সরকারের কি 'অদূর ভবিষ্যতের' জন্য কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় পূর্ণাঙ্গ কোনো পরিকল্পনা আছে? বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি, দূরদৃষ্টির অভাব, যেটি রোববারে প্রায় সব ধরনের বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে—সবকিছু মিলিয়ে কোনো দিক দিয়েই আমরা আশ্বস্ত হতে পারছি না।

কর্তৃপক্ষের মহামারি সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলোর স্ব-বিরোধী রূপকে আরও প্রবলভাবে প্রকাশ করার জন্যেই সম্ভবত মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গতকাল একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ১০ আগস্টের পরেও  'বিনোদনকেন্দ্র (পরিচালনা) ও জনসমাগমের' অনুমতি দেওয়া হবে না। তাহলে কীভাবে জনসমাগম এড়ানো যাবে, যদি মল, মার্কেট ও রেস্তোরাঁর মতো জনসমাগমের উপযুক্ত জায়গাগুলো খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয় এবং যদি যানবাহন চলাফেরার ওপর সীমিত পর্যায়ের বিধিনিষেধ থাকে? তবে কি প্রতিটি জনসমাগমের জায়গায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন থাকবে, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য? কত হাজার মানুষকে জরিমানা করা হবে অথবা হাজতে নেওয়া হবে, সঠিকভাবে মাস্ক না পরে চলাফেরা করার জন্য? একজন সংক্রামকব্যাধী বিশেষজ্ঞ দ্য ডেইলি স্টারের একজন সাংবাদিককে যেভাবে প্রশ্ন করেছেন, আমরাও একই ভাবে সরকারকে প্রশ্ন করতে চাই, যদি বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে আরও বেশি মানুষ মারা যেতে থাকে, তাহলে সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউয়ের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য সরকারের পরিকল্পনাটি কী?

আমরা ছয় দিনের পরীক্ষামূলক টিকাদান কর্মসূচির লক্ষ্যমাত্রা মাত্র দুই দিনে অর্জন করার জন্য সরকারকে সাধুবাদ জানাই। সারা দেশজুড়ে ২৫ বছরের বেশি বয়সী ৩২ লাখ মানুষকে এই দুই দিনে টিকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে, আমরা কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানাই, তারা যেন এখনই আত্মতুষ্টিতে না ভোগে। মানুষের আর্থসামাজিক বিষয়গুলো বজায় রাখার ক্ষেত্রে সরকারের স্বদিচ্ছার ব্যাপারটি সহজে অনুধাবন করা যায়, কিন্তু এই বিষয়টি এমনভাবে পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে শুধুমাত্র আগামী দুই সপ্তাহে কী হবে তা নয়, দীর্ঘমেয়াদে ভবিষ্যতের কথাও আমরা মাথায় রাখি। দেশের এই ভয়াবহ করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে এবং তা শিগগির।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh struggles in home textile exports

Bangladesh losing out to Pakistan in home textile exports

Bangladesh has been struggling to recover lost work orders in the home textile segment, a significant volume of which shifted to Pakistan nearly two years ago.

13h ago