মত প্রকাশ যখন অপরাধ

ঝুমন দাশের দুর্ভোগ নিয়ে এই পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে বিস্তারিত জানার পর উদ্বিগ্ন না হয়ে থাকা যায় না। এই ঘটনা দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে প্রণীত নিষ্ঠুরতম ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে দ্রুত সংশোধনের প্রয়োজনীয়তাকে সামনে নিয়ে এসেছে। একই সঙ্গে আইনের সমপ্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং কেউ যেন আইনকে পাশ কাটিয়ে যেতে না পারে তা নিশ্চিত করাও সরকারের দায়িত্ব।
ঝুমন গত ৬ মাস ধরে কারাগারে আছেন। গেল ১৭ মার্চ পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার দেখায় এবং সুনামগঞ্জের একটি আদালতে উপস্থাপন করে, এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। কোনো ধরনের জামিন ছাড়াই তারপর থেকে তিনি সেখানে আছেন। গ্রেপ্তারের কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে ফেসবুকে তার পোস্ট করা একটি স্ট্যাটাস, যেখানে তিনি একজন হেফাজত নেতার কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেটি নিতান্তই একটি অভিমত ছিল, যেটি পোস্ট করার অধিকার একটি স্বাধীন দেশের যে কোনো স্বাধীন নাগরিকের থাকার কথা। কিন্তু ঝুমনের ক্ষেত্রে বিষয়টি সেরকম হয়নি। তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, কারণ এছাড়া নাকি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাও গ্রামের সংখ্যালঘু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে হামলাকারীদের থামানো যাচ্ছিল না। ফেসবুকে ঝুমনের মন্তব্যের জেরে  তথাকথিত হেফাজতের সমর্থকেরা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রায় ৯০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। ঝুমন যখন হাজতে, তার পরিবার অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তখন অন্যদিকে সেই ভাঙচুরের ঘটনার নেপথ্যের নায়করা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেন এমন হবে? 
শুরুতে ঝুমনকে ডিএসএর আওতায় গ্রেপ্তার করা হয়নি, বরং একই ধরনের আরেকটি আইন, ফৌজদারি দন্ডবিধির ৫৪ ধারায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ডিএসএর অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুর্ভাগ্যজনক বিভিন্ন দিক নিয়ে সব গণমাধ্যমে বিস্তারিত লেখালেখি এবং আলোচনা হয়েছে। আমরা আর তার পুনরাবৃত্তি করার প্রয়োজন দেখছি না। আইনটির বিভিন্ন ধারা মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করে বলে দেশে ও বিদেশের মানবাধিকার কর্মী ও পর্যবেক্ষকরা বারবার এটি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন। শুরু থেকেই এই আইনটি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা, বিশেষ করে গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে যথেচ্ছ প্রয়োগ করা হয়েছে। এমন অন্যায় ও নির্বিচার প্রয়োগ আমাদের এই বিশ্বাসকেই দৃঢ় করে যে এই আইন নাগরিকদের উপকারের জন্য নয়, বরং যারা ক্ষমতায় আছে, তাদের স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার।
এটি আরও পরিষ্কার হয়েছে যখন আমরা দেখতে পাই গত মার্চে আইনমন্ত্রী আইনটিকে সংশোধনের আশ্বাস দিলেও এখনও সে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তদন্তের আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না, আইনের যথেচ্ছ প্রয়োগ এবং অপব্যবহার রোধে একটি মনিটরিং টিম গঠন হবে এবং কখন জামিন দেওয়া যাবে কিংবা যাবে না সে বিষয়গুলো পরিস্কার করা হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, গত ৬ মাসের মধ্যে এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করার জন্য কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ আমাদের চোখে পড়েনি।
অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান।

Comments

The Daily Star  | English
edible oil price hike in Bangladesh

Edible oil prices rise in spite of VAT cut

Consumers in Bangladesh saw no drop in soybean and palm oil prices over the past week even though the National Board of Revenue (NBR) has reduced an import VAT from 15 percent to 10 percent.

1h ago