ভুট্টা চাষিদের স্বার্থ রক্ষা করুন
এটা জেনে ভালো লাগছে যে, বাংলাদেশে ভুট্টা উৎপাদন কৃষকের জন্য লাভজনক হয়ে উঠছে। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলে। তারপরেও এর সঠিক সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থার বিষয়টি এখনও একটি প্রধান উদ্বেগের ব্যাপার। এই ধরনের সুযোগ-সুবিধা না থাকার কারণে কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্যের ভালো দাম পাচ্ছেন না।
গতকাল সোমবার দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, লালমনিরহাটের কৃষক ভুট্টা চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। কারণ এটি বেলে মাটিতে জন্মায়। আর ভুট্টা চাষে সেচ কম লাগে। পাশাপাশি অন্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষে লাভ বেশি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, লালমনিরহাট জেলার চর এলাকাগুলোতে বসবাসরত ২০ হাজারের বেশি পরিবার ভুট্টা ফলিয়ে খাদ্য ও আর্থিক নিরাপত্তা অর্জন করেছে।
লালমনিরহাটে ভুট্টা চাষ শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। তখন মাত্র ১৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হতো। কালক্রমে উত্তরাঞ্চলের প্রায় ১ লাখ হেক্টর জমি ভুট্টা চাষের আওতায় এসেছে। বর্তমানে গোটা উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত মোট ভুট্টার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এই লালমনিরহাটেই উৎপাদন হয়।
যেহেতু উত্তরাঞ্চলের আরও বেশি সংখ্যক কৃষক ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন, সেহেতু সঠিক সংরক্ষণ সুবিধার প্রয়োজনীয়তাও বেড়েছে। সেখানকার কৃষকরা জানিয়েছেন, মে-জুন মাসে প্রতি মণ ভুট্টা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হলেও এর ২ থেকে ৩ মাস পরে দাম বেড়ে ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত হয়। এর অর্থ হচ্ছে, যেসব ব্যবসায়ীরা ফসল কাটার সময় সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কেনেন, তারা অনেক বেশি লাভবান হন। অন্যদিকে, চাষিরা লাভ থেকে বঞ্চিত হন। যেহেতু বিভিন্ন ফিড কোম্পানি এবং স্থানীয় ক্রেতারা খামার থেকে সরাসরি ন্যায্য মূল্যে ভুট্টা কেনেন, তাই সঠিক স্টোরেজ সুবিধা নিশ্চিত করা হলে কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে পারবেন।
ফসলের বাম্পার ফলন হওয়া সত্ত্বেও, যথাযথ সংরক্ষণ সুবিধা না থাকার কারণে সাধারণত দেশের কৃষকদের বেশিরভাগ সময় লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়। আমরা দেখেছি, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জন্য দেশব্যাপী লকডাউনের সময় সারাদেশে সবজি চাষিরা সংরক্ষণ সুবিধার অভাবে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন।
এই প্রেক্ষাপটে, আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় সারাদেশে ফসল ও সবজি সংরক্ষণ সুবিধা বৃদ্ধি করা। এ ছাড়া, উত্তরাঞ্চলের ভুট্টা চাষিদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কর্তৃপক্ষের উচিত শুধু স্টোরেজ সুবিধা তৈরি করা নয়, কাছাকাছি ভুট্টা প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রও স্থাপন করা। এর ফলে কৃষকরা শুধু তাদের উৎপাদিত ভুট্টা থেকে বেশি উপার্জনের সুযোগই পাবে না, এর মাধ্যমে বাংলাদেশ খুব শিগগির ভুট্টা উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে।
Comments